বৃহস্পতিবার, ০৫ মে, ২০১৬, ০৭:৫০:৪৫

হঠাৎ ঘুমে গায়েবি আওয়াজ, দু’সন্তানকে হত্যা করলেন মা

হঠাৎ ঘুমে গায়েবি আওয়াজ, দু’সন্তানকে হত্যা করলেন মা

ফরিদপুর : রাতের ঘুমে গায়েবি আওয়াজ পেয়ে দু’সন্তানকে হত্যা করলেন মা।  ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার চর বাগাট গ্রামে।

রাতের খাবার খেয়ে দুই শিশুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন মা তাসলিমা বেগম।  হঠাৎ স্বপ্নের মধ্যে গায়েবি আওয়াজ পান তিনি।  তাকে বলা হয়, নিজের সন্তানদের হত্যা করতে!

তখন কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই মা শ্বাসরোধে হত্যা করেন জাহেদ বিন আব্দুল্লাহ ত্বকি (৫) ও ছয় মাস বয়সী মেয়ে তহুরা তারিনকে।   

মায়ের প্রচণ্ড ধর্মান্ধতার কারণেই গত ২ মে জীবন দিতে হলো ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার চর বাগাট গ্রামের ফুলের মতো নিষ্পাপ দুই শিশুকে। বুধবার রাতে তাসলিমাকে আটকের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মায়ের স্বীকারোক্তির কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, ঘটনার পর থেকেই তাসলিমা পুলিশের বিশেষ নজরদারিতে ছিলেন। বুধবার রাতে মধুখালী থানা পুলিশ তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

রাতে ঘুমের মধ্যে দুই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাসলিমা জানিয়েছেন।  তবে কেন হত্যা করেছেন তা পরিষ্কার না করলেও ঘুমের মধ্যে গায়েবী আওয়াজে শিশুদের হত্যার নির্দেশনা পান বলে জানান তাসলিমা।

গত ২ মে সোমবার ভোরে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার চর বাগাট গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তাসলিমা বেগম দম্পত্তির সন্তান জাহেদ বিন আব্দুল্লাহ ত্বকি ও ছয় মাস বয়সী মেয়ে তহুরা তারিনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।  ওইদিনই শিশুদের দাদা ইউসুফ আলী বাদী হয়ে মধুখালী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন।

শিশুদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার কারণ সম্পর্কে সংবাদকর্মীরা তখন তাসলিমা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি নির্বিকার থাকেন।  

পরে অবশ্য তিনি এটা আল্লাহর ফয়সালা হিসেবে ব্যাখ্য দেয়ার চেষ্টা করেন।  ঘটনার সময় শিশুদের বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন তার মায়ের চিকিৎসার জন্য ভারতের ভেলোরে অবস্থান করছিলেন।

নিজের দুই সন্তানের এমন মুত্যৃর পরও মা তাসলিমার নির্লিপ্ত থাকার বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যসহ পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে।

ঘটনার পর থেকেই রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ বিভিন্ন উপায়ে তথ্যানুসন্ধান চালায়।  রহস্যের জট কিছুটা খুলে গেলে পুলিশ ঘটনার দুদিন পর তাসলিমাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পরিষ্কার হয়ে যায় ঘটনার পুরো রহস্য।  

শিশুদের হত্যার দায় স্বীকার করার পর শিশুদের দাদা ইউসুফ আলী বাদী হয়ে পুত্রবধূ তাসলিমা বেগমকে একমাত্র আসামি করে মধুখালী থানায় আবারো একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমীন জানান, দুই সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করায় আসামি তাসলিমাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
৫ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে