নিউজ ডেস্ক: দাদা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় চার নেতার একজন। একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখে বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন। দেশের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন।
দাদি দেশের সর্বপ্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের হাল ধরেছিলেন। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। আমৃত্যু দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।
বাবা গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বাবার আদর্শ বুকে ধরে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাজনীতি করছিলেন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করেন। দৃঢ়তার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠাৎ একদিন পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে তার পরিবার থাকে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। পরে সংসদ সদস্যপদ থেকেও পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের কারণ আজও স্পষ্ট করেননি তিনি। এর পরের সময়টি চলে মান-অভিমানে।
পদত্যাগের সময় বাবা বলেছিলেন-আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। সেই সিদ্ধান্তে এখনও অনড় তিনি।
বাবা রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকলেও সম্ভবত নিজেকে রাজনীতিতে যুক্ত করতে চাচ্ছেন। বলছি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের একমাত্র ছেলে ব্যারিস্টার তুরাজ আহমদ তাজের কথা।
রাজনীতিতে পদচারণায় নিজেকে মুখর করতে চাইছেন তাজউদ্দীনের আরেক উত্তরসূরি। তুরাজ রাজনীতির রঙে নিজেকে রাঙাবে না কেন? তার রক্তেই তো রাজনীতি।
তার দাদা দেশের মানুষের ভাত-কাপড়ের অধিকার নিশ্চিত করতে জীবন দিয়েছেন। দাদিও আমৃত্যু মানবকল্যাণে রাজনীতি করেছেন। সেই ধারায় বাবাও হেঁটেছেন রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ পথের বাঁকে বাঁকে।
তুরাজ আহমদ গতকাল দিনভর বাবার সঙ্গে গাজীপুর-৪ নির্বাচনী এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন। ফুফু সিমিন হোসেন রিমির নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে উঠান বৈঠক করেছেন।
কাপাসিয়ার জনগণ যারা এ পরিবারকে ঘিরে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত রাজনীতি করে আসছেন, তাদের সঙ্গে ছেলেকে পরিচিত করছেন সোহেল তাজ।
ফুফুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে বাবার সঙ্গে সুদূর আমেরিকা থেকে দেশে এসেছেন তুরাজ তাজ।
উঠান বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার পরিবারের অবদানের কথা সরণ করিয়ে দিয়ে তুরাজের বাবা সোহেল তাজ বলেন, আমাদের পরিবার বাংলাদেশের জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছে। আমার বাবা স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমার মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন দুঃসময়ে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করে নেতৃত্ব দিয়েছেন গণতন্ত্রের পক্ষে।
তিনি বলেন, আমাদের পরিবার সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পক্ষে। সে জন্য আমরা অবশ্যই থাকব। আমার বোন নির্বাচন করা মানে আমি করা।
রবিবার দুপুরে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম খালেদ খুররমে বাসভবনে এ উঠান বৈঠক হয়।
বিকালে বঙ্গতাজের গ্রামের বাড়ি দরদরিয়ায় সব নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে এক কর্মিসভায় যোগ দেন সোহেল তাজ। সন্ধ্যায় উপজেলার তরগাঁও পালকী কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করেন।
পরিবারের পক্ষে সোহেল তাজের বড় দুই বোন শারমিন আহমদ রিপি, মেহেজাবিন আহমদ মিমি, সিমিন হোসেন রিমির ছেলে রাকিব হোসেন এসব অনুষ্ঠানে ছিলেন।
প্রসঙ্গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সোহেল তাজ। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেও ২০০৯ সালের ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে আচমকা পদত্যাগ করেন। চলে যান সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে।
২০১২ সালের ৭ জুলাই সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। মাঝেমধ্যে সামাজিক কর্মকাণ্ডে উপস্থিত থাকলেও রাজনীতিতে যুক্ত হবেন না বলে তখন সাফ জানিয়ে দেন সাবেক এ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
সোহেল তাজ ফের আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে। তখন রাজনীতির অন্দরমহলে আলোচনা শুরু হয় যে, সোহেল তাজ রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। ওই সময় তিনি দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।
দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে সোহেল তাজকে আনা হচ্ছে-এমন গুঞ্জনও শুরু হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সোহেল তাজ নিজেকে যুক্ত করেননি।
সোহেল তাজের ছেলে তুরাজ আহমদ তাজ লন্ডনের লিংকনস ইনন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেছেন। তুরাজ তাজ পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে থাকেন।