নিউজ ডেস্ক: বিশেষ এক প্রেক্ষাপটে ব্যতিক্রমী চার দিনব্যাপী তাবলিগের বিশ্ব ইজতেমা আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের লাখো মুসলিম জনতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার আরো দুই দিন আগে থেকেই ইজতেমা ময়দানে সমবেত হচ্ছেন মানুষ। কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে ১৬০ একর আয়তনের সুবিশাল ইজতেমা ময়দান।
ইজতেমার আয়োজক ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ বাদ ফজর আ’ম (সার্বিক) বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমা। এতে যোগ দিতে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় একসাথে অংশ নিচ্ছেন দেশের ৬৪ জেলার মানুষ।
ইজতেমা ও তাবলিগ জামাত নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র যেন সফল না হয় এমন আত্মপ্রত্যয় নিয়ে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো চার দিক থেকে ইজতেমা অভিমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। এক দিন আগেই ইজতেমা ময়দান পরিণত হয়েছে মুসলিম উম্মার মিলনমেলায়। চলছে ইসলামের ইলম-আমল, দাওয়াত, ভালোবাসা ও প্রীতির আদান-প্রদান।
কাল শনিবার আখেরি মুনাজাতে অংশ নেবেন তারা। এবার ইজতেমায় থাকছে না কোনো ধাপ বা পর্ব। তবে দুই গ্রুপের আলাদা আয়োজনে আজ শুরু হয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। মুনাজাত হবে সোমবার। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আখেরি মুনাজাতের সময় নির্ধারণ হয়নি। কেউ বলছেন শনিবার পূর্বাহ্নে আবার কেউ বলছেন শনিবার বাদ মাগরিব আখেরি মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ ব্যাপারে গতকাল রাতে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের মাশওয়ারায় (পরামর্শ সভায়) আখেরি মুনাজাতের সময় ঠিক হবে বলে জানা গেছে। বিবাদ থাকলেও তাবলিগ অনুসারী, এলাকাবাসী ও প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষের দাবি এবারের ইজতেমা যেন শান্তিপূর্ণভাবে হয়।
ময়দানের আশপাশে বসেছে হরেক রকমের দোকান। এর মধ্যে অনেকেই সেরে নিচ্ছে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর ও তরুণসহ সব বয়সের মানুষ পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ও টুপি মাথায় ইজতেমায় শরিক হয়েছেন। ইজতেমা ময়দানে যতটুকু চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। মাথার ওপর চটের তাঁবু নিচে সবুজ ঘাস। এর মধ্যে বিছানাপত্র বিছিয়ে রাতযাপনসহ ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হয়ে পড়েছেন ধর্মপ্রাণ লাখ লাখ মুসল্লি।
রাজধানীর মিরপুর থেকে আসা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, এবার বিশ্ব ইজতেমা হবে কি না, তা নিয়ে সবার মনে সংশয় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত হচ্ছে। প্রতি বছর ইজতেমায় অংশ নিয়ে থাকি। এবারো এসেছি। মানুষের উপস্থিতি এবার আগের চেয়ে অনেক বেশি।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মো: আবু হানিফ জানান, আমলের জন্য ইজতেমায় এসেছি। এখানে বিশ্ব মুরুব্বিদের কাছ থেকে আখেরাতের কথাবার্তা শুনব। যেন সঠিকভাবে আল্লাহর পথে চলতে পারি সে দিকনির্দেশনা এখানে পাবো। ইজতেমায় ইসলামের জ্ঞান অর্জন করা যায়। পরিবার পরিজন রেখে কয়েক দিনের জন্য এখানে এসেছি। দেশ-বিদেশের সব মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকুক, শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ব ইজতেমা হোক এবং তাবলিগ জামাত ও ঐতিহ্যবাহী এই ইজতিমা নিয়ে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র সফল না হয় এটাই কামনা করছি।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য মো: ইলিয়াস জানান, গত বছর ইজতেমা শুরু হওয়ার আগে এত মানুষ হয়নি। এবার সংখ্যা অনেক বেশি।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হূমায়ূন কবীর জানান, গতকাল সকাল থেকে কয়েক লাখ মানুষ ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেছেন। আগমন অব্যাহত রয়েছে। মানুষের সুবিধার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে এবারের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হোক এটাই সবার প্রত্যাশা।