এফ এম কামাল হোসেন, কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তুখোর ছাত্রনেতা-জনপ্রিয় বিএনপি নেতা আলহাজ¦ মাহমুদুল হাসান সারোয়ার সোহেলের (৪৮) তৃতীয় দফা জানাজা নামাজ শেষে ২৮ মে মঙ্গলবার দুপুরে তরগাঁওয়ের লতাপাতা বাজার সংলগ্ন পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে সোমবার বিকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন। মরহুমের মৃত্যুতে ইতোমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান সারোয়ার সোহেল গত ২ মে রাতে কাপাসিয়া সদর থেকে চাঁদপুর গ্রামে তার শশুরবাড়িতে যাবার পথে এক সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়। এতে তার বুকের বাম পাশে মারাত্বক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কয়েকদিন আগে একটু সুস্থ্যতাবোধ করলে তাকে ঢাকার বাসায় নেয়া হয়। গত সোমবার বিকালে হঠাৎ বুকে ব্যাথা অনুভব করলে ইবনেসিনা হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পারিবারিক জীবনে সে স্ত্রী ও দেড় বছর বয়সের এক কন্যা সন্তান এবং এক ভাই ও দুই বোন রেখে গেছেন। প্রথম জানাজা নামাজ সোমবার রাতে ধানমন্ডি বাসা সংলগ্ন মসজিদে, দ্বিতীয় জানাজা নামাজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং সাড়ে ১১টায় লতাপাতা বাজার সংলগ্ন ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি উপজেলার টোক ইউনিয়নের আড়ালিয়া। পিতা মরহুম আজিম উদ্দিন ও মাতা মরহুম হালিমা খাতুন।
সকাল সাড়ে দশটায় কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপি ও সকল অঙ্গ-সংগঠনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের বিশাল জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক এফ এম কামাল হোসেনের পরিচালনায় জানাজা নামাজে শরিক হয়ে মরহুমের রুহের মাগফিরাত ও শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আ স ম হান্নান শাহ’র পুত্র বিএনপি নেতা শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ¦ অ্যাড. আমানত হোসেন খান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ¦ মোঃ খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফ ম এমদাদুল হোসেন, সাবেক আহবায়ক আব্দুল করিম বেপারী, উপজেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসাইন বেপারী, নাজমূল হোসাইন ভূঁইয়া, আজগর হোসেন খান, সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন প্রধান, বিএনপি নেতা আবু হানিফ, কফিল উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন বেপারী, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ আমিনূল হক সাদেক, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম বুলু, উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ হোসেন লিয়ন, জাতীয় শ্রমিকলীগ নেতা এমএইচ নোমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মতিউর রহমান মতি, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৈইয়ূবুর রহমান প্রমূখ। পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের বড়ভাই জুয়েল ও ভগ্নিপতি হিরন সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। জানাজা নামাজ পড়ান কাপাসিয়া বাজার কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান মারুফ।
মরহুম মাহমুদুল হাসান সারোয়ার সোহেলের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯২-৯৩ সালে কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রদলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী ছিলেন। উপজেলা ছাত্রদলের নির্বাচিত সভাপতি এবং মরহুম ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ্’র পছন্দ ও ইচ্ছায় উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হিসাবে মনোনীত হয়েছিলেন। এছাড়া সে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। জনপ্রিয় এই নেতা ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনের কথা চিন্তা করেননি।
জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতি করলেও সে দলমত নির্বিশেষে মানুষের আপদ-বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কোন কর্মীদের কখনো সে বিমূখ করেননি। সোমবার ইফতারের পূর্বমূহুর্তে তাঁর মৃত্যুর খবর কাপাসিয়া সদরে পৌঁছলে সকল শ্রেণি পেশার লোকজনের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা সদরের সাফাইশ্রী গ্রামের আদালত পাড়ার বাড়িতে মরহুমের লাশবাহী গাড়িটি এসে পৌঁছলে অপেক্ষয়মান আতœীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু মহল ও রাজনৈতিক দলের শত শত নেতা-কর্মী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তাদের কান্নায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। তাঁর জানাজা নামাজে দলমত নির্বিশেষে হাজার হাজার নেতা কর্মী শরিক হন।