এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে যাওয়া–আসার সময় ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানার ফটক ও আশপাশে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত অবস্থান করেন। বেতন পাওয়ার সময় এদের উৎপাত বেড়ে যায়। হামলা, ছিনতাই, হেনস্তা থেকে শুরু করে নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে চাকরি বদলাচ্ছেন।
পুলিশের দাবি, শ্রমিকদের নিরাপত্তায় তারা নিরলসভাবে কাজ করছে।
শ্রীপুর পৌরসভার ভাঙ্গাহাটি এলাকার রাতুল গার্মেন্টসের সাবেক শ্রমিক ফজলুর হক বলেন, “গত এপ্রিল মাসে রাতের ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে কয়েকজন যুবক এসে আমাকে আটকায়। তারা টাকা দাবি করে। না দিতে চাইলে রাস্তার পাশের জঙ্গলে নিয়ে আমাকে মারধর করে। শেষ পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।” তিনি জানান, ভয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করেননি। পরে অন্য কারখানায় চাকরি নেন।
একই পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখন্ড এলাকায় অবস্থিত ফখরুদ্দিন গার্মেন্টসের শ্রমিক মিনারা খাতুনও একই ধরনের ঘটনার শিকার। গত ৯ আগস্ট রাতে সহকর্মীর সঙ্গে বাসায় ফেরার পথে কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের আটকে অশালীন ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। একপর্যায়ে কাবিননামা চাওয়ার মতো অযৌক্তিক দাবি তোলে। শেষ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। সম্মানের ভয়ে আইনের আশ্রয় নেননি বলে জানান মিনারা।
শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইত ইউনিয়নের যোগিয়াসেট এলাকার ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেডের কর্মী সানোয়ার হোসেন জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে কারখানার ফটকের সামনে সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এসময় সন্ত্রাসীরা এসে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। টাকা পাওনা আছে দাবি করে নির্যাতন করে এবং তার স্ত্রীকে ফোন করে টাকা আনতে বলে। জঙ্গলে হাত-পা বেঁধে মারধরের সময় স্ত্রী পুলিশকে ফোন করলে তাকে উদ্ধার করা হয়। এখনো আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ডেকো গার্মেন্টস, রিদিশা গার্মেন্টস, ডিবিএল গার্মেন্টস, এক্স সিরামিক, নিট হরাইজন, আমান গার্মেন্টস, সিজি গার্মেন্টস, মেঘনা গার্মেন্টসসহ বেশির ভাগ কারখানার শ্রমিকরা ।
ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র রায় বলেন, “শ্রমিকদের নিরাপত্তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমাদের এক শ্রমিককে দোকানের সামনে থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করলেও অপরাধীরা ধরা পড়েনি।’’
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, “শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। প্রতিটি ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তায় নিশ্চিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’’