নিউজ ডেস্ক : প্রেমিক সৌদিতে, মা হলেন প্রেমিকা। গোপালগঞ্জে প্রেমিকের প্রতারণার শিকার অন্তঃসত্ত্বা রেশমা বেগম (১৯) একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। রোববার সকালে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে তার এ সন্তানের জন্ম হয়।
হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে রেশমা ও নবজাতক সুস্থ থাকলেও দুঃশ্চিন্তা তাকে পিছু ছাড়ছে না। সারাক্ষণ একটি প্রশ্ন তাকে তাড়া করছে, সেটি হচ্ছে তার নবজাতকের স্বীকৃতি।
সামাজিক নানা বাধা ও লোকলজ্জার ভয়ে তার জীবন বিপন্ন প্রায়। তারপরও বেঁচে থাকতে চায় রেশমা। চাঁদের মতো ফুটফুটে শিশুকে বুকে আগলে বুনেন স্বপ্নের বীজ। নবজাতকের বাবার স্বীকৃতি কেবল রেশমার একমাত্র চাওয়া।
ফরিদপুরের সালতা উপজেলার কামরদিয়া গ্রামের দিনমজুর শফি মাতব্বরের মেয়ে রেশমা। ছোট কালে মা হারায় রেশমা। বিমাতার সংসারে বেড়ে উঠা তার।
দুই বছর আগে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর কামরুল ইসলামের বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজের জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বেশ ভালোই কেটেছে তার।
মুকসুদপুর থানা থেকে পুলিশ অফিসার কামরুল ইসলাম কিছুদিন পর গজারিয়া থানায় বদলি হয়ে যান। এর কয়েক দিনের মাথায় কাঁচপুর ব্রিজের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় ওই পুলিশ অফিসার নিহত হন। এরপর কামরুলের স্ত্রী সেতু বেগম তার একমাত্র কন্যা ও রেশমাকে নিয়ে গোপালগঞ্জের পুকুরিয়া গ্রামে তার মামার বাড়িতে চলে যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুকুরিযা গ্রামের বসবাসের একপর্যায়ে পাশের বাড়ির মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী হারুন মোল্লার ছেলে ইয়াসিন মোল্লার সঙ্গে রেশমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেম থেকে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান তারা।
একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন রেশমা। বিষয় জানাজানি হলে এ নিয়ে এলাকায় কানাঘুষা শুরু হয়। গৃহকত্রী সেতু বেগম অবস্থা টের পেয়ে রেশমাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। লোকলজ্জার ভয়ে সেখানেও থাকতে পারেননি রেশমা। ফলে তিনি আবার পুকুরিয়া গ্রামে ফিরে আসেন।
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের বেডে কথা হয় রেশমার সঙ্গে। এ সময় রেশমা বলেন, অবস্থা বুঝতে পেরে কিছুদিন আগে কৌশলে ইয়াসিন মোল্লাকে সৌদিআরব পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে এ কলঙ্কের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ইয়াসিনের মা জেসমিন বেগম ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন। কৌশলে আমাকে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেন।
পাশাপাশি গোপালগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই এলাকার ইট-বালু ব্যবসায়ী সেলিম শেখ, গৃহকত্রী সেতুর বাবা মিরাজ দাড়িয়া (৫৫) ও সেতু বেগমের (২২) বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য করেন। পরে এ ঘটনায় আমি মামলা করি।
রেশমা বলেন, ইয়াসিন মোল্লা আমার সন্তানের বাবা। প্রেমের পর আমার সঙ্গে প্রতারণা করে এখন সৌদিতে ইয়াসিন। আমি আমার সন্তানের বাবার অধিকার চাই। চাই সমাজে মানুষের মতো বেঁচে থাকার অধিকার। চাই স্ত্রীর অধিকার।
এ বিষয়ে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের প্রফেসর ও রেশমার সিজারিয়ান অপরেশনের চিকিৎসক মাহমুদা বলেন, রেশমা ও নবজাতক দুইজনেই সুস্থ আছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক হযরত আলী বলেন, ইতোমধ্যে ১৬৪ ধারায় ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে আসামি বিদেশে অবস্থান করছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান হযরত আলী।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/এস