রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ১২:৫৮:৩৩

সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন রেখা রাণী

সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন রেখা রাণী

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : স্বামী-সন্তান, পরিবার-পরিজন কেউ নেই কুমারী রেখা রাণীর। নেই ঘরবাড়িও। শেষ জীবনে এসে কী খাবেন, কোথায় থাকবেন, করেননি সে চিন্তাও। নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থে গড়ে তুলেছেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সেখানেই একটি ছোট কক্ষে থাকেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাটে সময়। শিক্ষার্থীরা এখানে বিনা মূল্যে পড়ার সুযোগ পায়। প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে ছয় বছর আগে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পার হলেও এটি এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে বিদ্যালয়টি টিকিয়ে রাখতে কুমারী রেখা রাণীকে ছুটতে হয় বিত্তশালীদের দ্বারে দ্বারে।

কুমারী রেখা রাণীর বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কলাবাড়ী গ্রামে। ১৯৭২ সালে কুমারী রেখা রাণী কলাবাড়ী ইউনিয়নের হিজলবাড়ি বিনয় কৃষ্ণ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর অর্থকষ্টে থমকে যায় তাঁর পড়াশোনা। তখনই তিনি মনে মনে দরিদ্র নারীদের শিক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পণ করেন। কয়েক বছর পর এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় তিনি নার্সিংয়ে ভর্তি হন। নার্সিং পাস করে ১৯৮৩ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে থাকেন।

২০১৪ সালে অবসরে যান কুমারী রেখা রাণী। এরপর সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কলাবাড়ী ইউনিয়নের বুরুয়া গ্রামে গড়ে তোলেন ‘কুমারী রেখা রাণী গার্লস হাইস্কুল’। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমতি পায়। বর্তমানে এখানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৩০ জন ছাত্রী এবং ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

কুমারী রেখা রাণী বলেন, ‘অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারিনি। নার্সিং পড়ার সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যেভাবেই হোক দরিদ্র নারীদের শিক্ষালাভের জন্য আমি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ব। তাই জীবনের সব সঞ্চিত অর্থ দিয়ে শেষ জীবনে এসে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। কিন্তু পাঠদানের অনুমতি পেলেও এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। আমার শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দশম শ্রেণির ছাত্রী সমাপ্তি হালদার বলে, ‘আমাদের এলাকায় কাছাকাছি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাই। এখানে এই প্রতিষ্ঠানটি না হলে হয়তোবা আমাদের লেখাপড়া হতো না।’ দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রী মুক্তা সরকার বলে, ‘এই বিদ্যালয়ে আমাদের কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, ‘আমাদের এখানে আগে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ছিল। এখন আটজন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী রয়েছেন। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় দিন দিন শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো সম্ভব হবে না।’

কলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিজন বিশ্বাস বলেন, ‘কুমারী রেখা রাণী একজন সর্বত্যাগী মানুষ। সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন। এটি এমপিওভুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুর আলম সিদ্দিক বলেন, কুমারী রেখা রাণীর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিদ্যালয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে এমপিওভুক্ত করতে হলে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে