শনিবার, ০৩ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:০৪:৩৬

দাজ্জালের আগমনে যে ভাবে করবেন ঈমানের হেফাজত

দাজ্জালের আগমনে যে ভাবে করবেন ঈমানের হেফাজত

ইসলাম ডেস্ক: অন্ধকার ফিতনার ভয়ানক প্রতিচ্ছবি দিন দিন মানবতাকে গ্রাস করে চলেছে। ঈমানওয়ালাদের জন্য এটি কঠিন পরীক্ষার মুহূর্ত। কুফরের পক্ষ থেকে এদিক বা ওদিকের ঘোষণা প্রচার করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানকে একটি বিষয় বুঝে নেওয়া আবশ্যক যে, পরীক্ষার এই হলটি অতিক্রম করা ব্যতীত জান্নাত ও জাহান্নামের ফয়সালা হতে পারে না।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ
“তোমরা কি মনে করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনও আল্লাহ জেনে নেননি যে, তোমাদের কে আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করেছে আর কারা দৃঢ়পদ”।
(সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৪২)

এটি আল্লাহপাকের বিধান। আল্লাহর বিধান কখনও পরিবর্তন হয় না। আপনি হযরত মাহদি ও দাজ্জাল বিষয়ক হাদিসগুলো পড়েছেন। সবগুলো হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে, হযরত মাহদি ও ঈসা (আঃ) এর আগমনের উদ্দেশ্য যুদ্ধ। আবির্ভূত হয়েই তারা কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিবেন। একারণে প্রত্যেক মুসলমানকে আপন আপন ঈমানের ভাবনা ভাবা দরকার। নিজের ঈমানকে রক্ষা করার জন্য অন্তরে যুদ্ধের চেতনা আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করা দরকার।

মুনাফিকদের জন্য একাজটি অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহপাক বলেনঃ
“তারা (মুনাফিকরা) যদি বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তাহলে অবশ্যই তারা একাজের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করত”।
(সূরা তাওবা, আয়াত ৪৬)

যেমনটি আগে বলা হয়েছে, মুসলমানদের ধোঁকা দিতে ইবলিসি শক্তিগুলো মিথ্যা মাহাদিকে জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে পারে আর সত্যিকার মাহদিকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। কাজেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মাহদির যেসব আলামত বর্ণনা করেছেন, সেগুলোকে সামনে রেখে ঘটনার বাস্তবতা বুঝবার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে, যেগুলো অনুসরণ করে চললে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে ইনশাল্লাহ।

পবিত্র কুরআন কাফেরদের এই প্রচেষ্টার কথা এভাবে বর্ণনা করেছেঃ
“তোমরা যখন সংবাদটি শুনেছ, তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা নিজেদের ব্যাপারে সুধারনা করল কেন? আর কেন একথা বলল না যে, এটি তো সুস্পষ্ট এক অপবাদ?”
(আন নূরঃ আয়াত ১২)

অপর এক আয়াতে শোনা সংবাদ পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে মুখ বের করারও নিন্দাবাদ করা হয়েছে।

যখন কোন বিষয়কে দাজ্জালি শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে সন্দিগ্ধ বানিয়ে দেওয়া হবে এবং বিষয়টি ঠিক, না ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে, তখন আধুনিক বস্তুগত উপকরণের মাধ্যমে তথ্য জানার পরিবর্তে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করবেন। কেননা, পরিস্থিতিকে যারা দাজ্জালের চোখে দেখে আর যারা আল্লাহর নূরের সাহায্যে দেখে, উভয়ে সমান হতে পারে না।

যেমন – পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেনঃ
“আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে তার রবের আলোর উপরই প্রতিষ্ঠিত। এই ব্যক্তি অন্যদের মতো হতে পারে না”।
(সূরা জুমারঃ আয়াত ২২)

হৃদয়ের স্ক্রিনটিকে ওয়াশ করে নিন। বিবেকবান মুসলমান ভাই ও বোনেরা যখন নিজের বক্ষে স্থাপিত ক্ষুদ্র স্ক্রিনটিকে ওয়াশ করে নেওয়ার চেষ্টা করবে আর তাই তার জন্য অধিকতর উত্তম হবে। তারপর দেখবেন, পরিষ্কার হওয়ার পর এই ক্ষুদ্র স্ক্রিনটি আপনাকে এমন দৃশ্যাবলী দেখাতে শুরু করবে, যা আপনি গোটা জীবনে যে সকল ভুলগুলো করে এসেছেন তা আপনর চোখের সামনে জ্বল জ্বল করবে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ
“ওহে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে চল, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ‘ফুরকান’ দান করবেন”।
(সূরা আনফালঃ ২৯)

এই ‘ফুরকান’ ই সেই স্ক্রিন, যা পর্দায় সাধারণ চোখে দেখা যায় না এমন সব বিষয়ও পরিদৃশ্য হতে শুরু করে। মালায়ে আ’লা তথা খোদায়ী শক্তির সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক জুড়ে যায়, যেখানে জগতের ব্যবস্থাপনামূলক বিষয়াদি চূড়ান্ত হয় এবং আল্লাহর তাজাল্লি নিপাতিত হয়। মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে দূর দৃষ্টি দান করেন। অবশেষে বান্দা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখতে শুরু করে।

দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা কাহাফের প্রথম দিককার আয়াতগুলো পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আপনি এই আয়াতগুলো মর্ম বুঝে পাঠ করুন। দেখতে পাবেন, এই আয়াতগুলোতে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।

(ক) আল্লাহর হামদ ও ছানার পর কুরানুল কারীম সত্য নবীর উপর নাজিল হওয়া।

“সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি তার বান্দার উপর কিতাব নাজিল করেছেন…”

(খ) আল্লাহর নাফরমান বান্দাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সংঘটিতব্য অতিশয় কঠিন ও কষ্টদায়ক শাস্তির ভয় দেখানো।

“যাতে কঠিন শাস্তির ভয় দেখানো”

(গ) সকল অবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যকারীদেরকে অনন্ত জীবনের সুখ ও শান্তির সুসংবাদ।

“আর তিনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ শোনাবেন, যারা ……”

(ঘ) সেই লোকদেরও লোকদেরও কঠিন পরিণতির ভয় দেখানো, যারা আল্লাহ পুত্রসন্তান গ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস পোষণ করে।

“আর ভয় দেখাবেন তাদেরকে, যারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন”।

(ঙ)দুনিয়ার জাঁকজমককে ভঙ্গুর আখ্যায়িত করে দুনিয়াবিমুখতা ও তাকওয়া অম্বলনের উৎসাহ দান।

“তার উপর যা কিছু আছে, তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করব”।

(চ) আসহাবে কাহফের ঘটনা বর্ণনা করে তার চেয়েও বড় ঘটনা শোনার জন্য মস্তিস্ক প্রস্তুত করা।

“তুমি কি মনে কর, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নির্দেশনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর?”

(ছ) আসহাবে কাহফের দু’আঃ

“হে আমাদের রব, তুমি নিজ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা কর”।

এই দু’আর মধ্যে সত্য স্নধিগ্ধ হয়ে পড়লে তখন আল্লাহর সমীপে দুটি বস্তু প্রার্থনা করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

একঃ হে আমাদের রব, আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে দৃঢ়তা দান করুন।

দুইঃ আমাদের বিষয় আশয়ে, যেমন – বাতিলের বিরোধিতা ও সত্যের অনুসরণ এসব কাজে আমাদেরকে নির্দেশনা প্রদান করুন।

এই আয়াতগুলো প্রতিদিন তিলওয়াত করে এগুলোর মর্ম উপলব্ধি করে সে মোতাবেক আমল করুন। আয়াতগুলোকে মুখস্ত করে নিলে অনেক সুবিধা হবে।

তাকওয়া অবলম্বন করুন। তাকওয়ার মূল হল হালাল জীবিকা। তাই হারাম পরিহার করে চলুন। এমনকি সংশয়পূর্ণ বস্তু থেকেও দূরে থাকুন। বর্তমান যুগে তাকওয়া অবলম্বন করা খুবই জরুরী। নিজেকে সেইসব আমলের পাবন্দ বানিয়ে রাখুন, যার ফলে আল্লাহর রহমত বান্দাকে সব সময় আচ্ছাদন করে রাখে। যেমন – সব সময় অজু সহকারে থাকা, নামাজ শেষ করার পর কিছু সময় জায়নামাজে বসে থাকা, তাহাজ্জুদ পড়া, বিশেষ করে যেসব লোক দ্বীনি কোন কাজে দায়িত্বরত আছেন, তাদের জন্য তো তাহাজ্জুদ নামাজ খুবই জরুরী আমল।

আল্লাহর সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে নিয়মিত তরমজা ও তাফসীরের সঙ্গে পবিত্র কুরআন পাঠ করুন আর নিজের অন্তরকে আলোকিত রাখতে ও সত্যের কাফেলায় শামিল থাকতে সত্যাশ্রয়ী আলেমগনের সাহচর্য অবলম্বন করুন এবং সব সময় সত্যপন্থীদের পথ অনুসরণ করুন।

দ্বীনের চর্চায় মসজিদগুলোর ভূমিকা সক্রিয় করুন। বিশ্ব কুফরি প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রচেষ্টায় রত আছে যে, মুসলমানদের জীবন থেকে মসজিদের ভুমিকাকে নিঃশেষ করে দেওয়া হবে। এই লক্ষ্যেই তারা আলেমসমাজ ও ধার্মিক শ্রেণীর লোকদেরকে নানা পন্থায় বদনাম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মোকাবিলায় প্রতিটি মসজিদে কুরআনের দরস চালু করুন।

যেমনটি উপরে বলা হয়েছে যে, হযরত মাহদির আমলে যা কিছু সংঘটিত হবে, পূর্ব থেকেই সে সবের আগাম প্রস্তুতি ঈমানের চিহ্ন বলে বিবেচিত হবে। যেমন – নিজেকে গরম ও ঠাণ্ডায় অভ্যস্ত বনানো, লাগাতার কয়েকদিন পর্যন্ত ক্ষুধা পিপাসা সহ্য করা, পাহাড়ে চলাচলের সাহস ও অভ্যাস করা, পাহাড়ি জীবনের সাথে নিজের স্বভাব চরিত্রকে খাপ খাইয়ে নেওয়া, ঘোরতর যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া, নিজের মধ্যে ও পরিবার পরিজনকেও আল্লাহর পথে কুরবানি দেওয়ার লক্ষ্যে এখনই প্রস্তুত করতে থাকা ইত্যাদি।

কবির ভাষায়ঃ
‘আমি যখন বলি আমি মুসলমান, তখন আমি শিউরে উঠি। কারণ, আমি জানি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবী পূরণ করা কত কঠিন’।
০৩ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে