ইসলাম ডেস্ক: প্রকৃত মুমিন তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। অতঃপর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করে না এবং তাদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে। বস্ত্ততঃপক্ষে তারাই হ’ল সত্যনিষ্ঠ’ (হুজুরাত ৪৯/১৫)। অত্র আয়াতে প্রকৃত মুমিনের দু’টি গুণ বর্ণিত হয়েছে। ১. সন্দেহমুক্ত দৃঢ় ঈমান এবং ২. আল্লাহর পথে সংগ্রাম ও সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে উক্ত ঈমানের প্রমাণ উপস্থাপন। ‘জিহাদ’ অর্থ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। যা কথা, কলম, সংগঠন তথা সার্বিকভাবেই হয়ে থাকে। সশস্ত্র জিহাদও এর মধ্যে শামিল। যুগে যুগে উদ্ভূত শিরকী দর্শনচিন্তা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাওহীদভিত্তিক দর্শনচিন্তা ও সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশ সাধনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করাই হ’ল ইসলামের চিরন্তন জিহাদ। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে যা সর্বদা সর্বত্র প্রযোজ্য। সেদিকে ইঙ্গিত করেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ),বলেন ﺟَﺎﻫِﺪُﻭﺍ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ﺑِﺄَﻣْﻮَﺍﻟِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧْﻔُﺴِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻟْﺴِﻨَﺘِﻜُﻢْ
‘তোমরা জিহাদ কর মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমাদের মাল দ্বারা, জান দ্বারা ও যবান দ্বারা’। কুরআনের সর্বত্র জিহাদের বর্ণনায় আল্লাহ প্রথমে মালের কথা এনেছেন। কারণ জিহাদে প্রথম মালের প্রয়োজন হয়।
আল্লাহ পাক অন্যত্র মুমিনের ১০টি গুণ বর্ণনা করেছেন:
,বলেন ﻗَﺪْ ﺃَﻓْﻠَﺢَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ- ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺻَﻼَﺗِﻬِﻢْ ﺧَﺎﺷِﻌُﻮْﻥَ- ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻫُﻢْ
ﻋَﻦِ ﺍﻟﻠَّﻐْﻮِ ﻣُﻌْﺮِﺿُﻮْﻥَ- ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻫُﻢْ ﻟِﻠﺰَّﻛَﺎﺓِ ﻓَﺎﻋِﻠُﻮْﻥَ- ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻫُﻢْ ﻟِﻔُﺮُﻭْﺟِﻬِﻢْ
ﺣَﺎﻓِﻈُﻮْﻥَ- ﺇِﻻَّ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻬِﻢْ ﺃَﻭْ ﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻬُﻢْ ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻏَﻴْﺮُ ﻣَﻠُﻮْﻣِﻴْﻦَ - ﻓَﻤَﻦِ
ﺍﺑْﺘَﻐَﻰ ﻭَﺭَﺍﺀَ ﺫَﻟِﻚَ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻌَﺎﺩُﻭْﻥَ- ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻫُﻢْ ﻟِﺄَﻣَﺎﻧَﺎﺗِﻬِﻢْ ﻭَﻋَﻬْﺪِﻫِﻢْ
ﺭَﺍﻋُﻮْﻥَ- ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺻَﻠَﻮَﺍﺗِﻬِﻢْ ﻳُﺤَﺎﻓِﻈُﻮْﻥَ - ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻮَﺍﺭِﺛُﻮْﻥَ - ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ
ﻳَﺮِﺛُﻮْﻥَ ﺍﻟْﻔِﺮْﺩَﻭْﺱَ ﻫُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪُﻭْﻥَ- ‘ সফলকাম হ’ল ঐসব মুমিন’ (১) ‘যারা তাদের ছালাতে গভীরভাবে মনোযোগী’ (২) ‘যারা অনর্থক ক্রিয়া-কর্ম এড়িয়ে চলে’ (৩) ‘যারা সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে’ (৪) ‘যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে’ (৫) ‘নিজেদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত। কেননা এসবে তারা নিন্দিত হবে না’ (৬) ‘অতঃপর এদের ব্যতীত যারা অন্যকে কামনা করে, তারা হ’ল সীমা লংঘনকারী’ (৭) ‘আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে’ (৮) ‘যারা তাদের ছালাত সমূহের হেফাযত করে’ (৯) ‘তারাই হ’ল উত্তরাধিকারী’ (১০) ‘যারা উত্তরাধিকারী হবে ফেরদৌসের। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (মুমিনূন ২৩/১-১১)।
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছসমূহে বর্ণিত সফলকাম মুমিনের গুণাবলী নিম্নরূপ:
(১) যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি দ্বিধাহীনচিত্তে বিশ্বাস পোষণ করেন
(২) যারা তাদের মাল ও জান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর পথে জিহাদ করেন।
(৩) যারা ছালাতে গভীরভাবে মনোযোগী হন
(৪) যারা অনর্থক ক্রিয়া-কলাপ হ’তে বিরত থাকেন
(৫) যারা নিয়মিত যাকাত দেন
(৬) যারা নিজেদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করেন
(৭) যারা আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করেন
(৮) যারা তাদের ছালাতের যথাযথ হেফাযত করেন
(১০) যারা অন্য মুসলিমের প্রতি যুলুম করেন না
(১১) তাকে লজ্জিত করেন না
(১২) যারা অন্য মুসলিমের সাহায্যে থাকেন
(১৩) যারা অন্যের কষ্ট দূর করেন
(১৪) যারা অন্য মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখেন
(১৫) যারা ছোটকে স্নেহ করেন ও বড়কে সম্মান করেন
(১৬) যারা সৎকাজের আদেশ দেন ও অসৎকাজে নিষেধ করেন।
উপরোক্ত গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন-আমীন!
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর