সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:১৯:১৩

ইসলাম বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে মূল্যায়ন করেছে

ইসলাম বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে মূল্যায়ন করেছে

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী: মানব সভ্যতার প্রতিটি পর্যায়ে বুদ্ধিজীবীরা ভূমিকা রেখেছেন। জ্ঞানই যে মানুষকে আলোকিত করে এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। ইসলাম জ্ঞানচর্চার আলোকবর্তিকা বুদ্ধিজীবীদের অতুলনীয় সম্মান দিয়েছে। পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘পড় তোমার প্রতিপালকের নামে; যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের সব সময় জ্ঞান সাধনায় উদ্বুদ্ধ করে কথা বলছেন। তিনি ঘোষণা করেন— ‘শিক্ষিত সম্প্রদায় নবীর উত্তরাধিকারী। যে জ্ঞানকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, সে তার এক বিরাট অংশ অধিকার করেছে এবং যে জ্ঞানার্জনের পথে নিজেকে নিয়োজিত করে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতের পথ সুগম করেন।’ ‘জ্ঞানের অন্বেষণে যে তার বাসস্থান ত্যাগ করে সে আল্লাহর পথে ভ্রমণ করে।’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন যুদ্ধে বন্দী অমুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিপণ হিসেবে আর্থিক বা বৈষয়িক সুবিধার বদলে তারা কোনো মুসলমানকে অক্ষরজ্ঞান দান করলে মুক্তি দেওয়া হবে এমন শর্ত নির্ধারণ করতেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক হাদিসে বলা হয়েছে— ‘রাতে কিছু সময় জ্ঞানচর্চা করা সারা রাতের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম’ (দারিমির সুনান থেকে মিশকাতে)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ হত্যাকাণ্ড যে ইসলামের দৃষ্টিতে সাধারণ হত্যাকাণ্ডের চেয়েও জঘন্য তা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই অনুমান করা যায়। ইসলাম যে কোনো অবৈধ হত্যাকাণ্ডকে জঘন্য অপরাধ বলে মনে করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়। ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ নানা অপরাধে তারা জড়িত ছিল। আমাদের দেশের কেউ কেউ এসব অপকর্মে মদদ জুগিয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডেও তাদের ভূমিকা ছিল। ইসলাম কোনো অবস্থায়ই জালেমদের সহায়তা করাকে অনুমোদন করে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘সত্যকে পরাভূত করার জন্য যে ব্যক্তি জালেমকে সাহায্য করল সে মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হেফাজতবহির্ভূত হয়ে গেল।’ মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা ইসলামের নামে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল বলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর গজব বা শাস্তি নাজিল হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে হজরত আলী (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস স্মরণযোগ্য। তিনি বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নির্যাতিতদের বদ দোয়াকে ভয় কর। কেননা সে আল্লাহর কাছে নিজের অধিকার প্রার্থনা করে। আর আল্লাহতায়ালা কোনো হকদারকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন না।’ লেখক : ইসলামী গবেষক। ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে