সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৫০:৪১

আমেনা আসিলমীর ইসলাম গ্রহণ, আজো অনুপ্রেরণা যোগায়

আমেনা আসিলমীর ইসলাম গ্রহণ, আজো অনুপ্রেরণা যোগায়

ইসলাম ডেস্ক : ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মত তার কলেজে কোর্স রেজিস্ট্রেশন এর জন্য কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় এবং সবকিছুর শুরু ছোট্ট একটি ভুল থেকেই। আমিনা একটি ক্লাসের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে ব্যবসায়িক কাজে ওকলাহমা সিটিতে চলে যান।

প্রসঙ্গত,  ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে তিনি ছিলেন একজন সাউদার্ন ব্যপ্টিস্ট (একটি খ্রীস্টান ফেরকা ) এবং কট্টর নারীবাদী। তার কলেজে ফিরে আসতে কিছুটা দেরী হ্য় এবং ক্লাস শুরু হবার দুই সপ্তাহ পর তিনি ফিরে এসে দেখতে পান যে সিস্টেমের ভুলের কারণে তাকে থিয়েটার ক্লাসে রেজিস্টার্ড দেখানো হচ্ছে।

যা হোক অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি ক্লাসটি করতে রাজী হোন। কিন্তু ক্লাস করতে গিয়ে তিনি দেখেন বেশীর ভাগ শিক্ষার্থী আরব বংশোদ্ভুত। এই আরবদের সাথে ক্লাস করা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে, তার স্বামী তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। দুইদিন পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি ক্লাসটি করবেন এবং সেই সাথে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন ক্লাসের আরবদের খ্রীস্ট ধর্মে দীক্ষিত করার।

তারপর থেকে তিনি ক্লাসের ফাঁকে তার আরব সহপাঠীদের খ্রীস্ট ধর্মের প্রতি আহবান করতে লাগলেন। তিনি তাদের বললেন যে তারা যদি খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণ না করে তবে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু আরব সহপাঠীদের ধর্মান্তরিত করতে না পেরে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে পবিত্র কুরআন পড়ে দেখবেন।

এক সহপাঠীর কাছ থেকে পবিত্র কুরআনের একটি কপি সংগ্রহ করে পড়া শুরু করলেন। পরবর্তী দেড় বছর ধরে তিনি ইসলামের উপর গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি পুরো কুরআন শরীফ এবং ইসলামরে উপর লিখিত আরো পনেরটি বই পড়ে শেষ করেন।

ধীরে ধীরে তার ভেতর পরিবর্তন আসতে লাগলো। তিনি অ্যালকোহল পান করা এবং শুকরের মাংস খাওয়া ছেড়ে দিলেন। বারে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। তার এই পরিবর্তন তার স্বামীকে সন্দেহপ্রবণ করে তোলে এবং তারা আলাদা অ্যাপার্টমেন্টে থাকা শুরু করেন। যদিও তার মাঝে পরিবর্তন আসে কিন্তু তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি।

তারপর একদিন তার অ্যাপার্টমেন্টে চারজন মুসলিম ব্যক্তি আসেন যার মধ্যে একজনের নাম ছিলো আব্দুল আজীজ আল শেখ। তার অ্যাপার্টমেন্টে কয়েকজন মুসলিম আসাতে তিনি খুব বিরক্ত বোধ করেন এবং খুবই অবাক হোন যখন আব্দুল আজীজের কাছ থেকে জানতে পারেন যে তার ইসলামের প্রতি আগ্রহের কথা শুনেই তারা তার কাছে এসেছেন।

তিনি তাদের স্পষ্ট ভাষায় বলে দেন যে তিনি একজন খ্রীস্টান এবং ইসলাম গ্রহণের কোন ইচ্ছা তার নেই। তবে তাদের যদি সময় থাকে তিনি তাদের কিছু প্রশ্ন করতে চান। তারা সাথে সাথেই তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে।

সুদীর্ঘ দেড় বছর ধরে ইসলাম নিয়ে তিনি যে গবেষণা করেছেন তার আলোকে তিনি তাদেরকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন। আব্দুল আজীজ অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে তার প্রশ্ন শুনেন এবং যুক্তি ও তথ্য দিয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর দেন। আব্দুল আজীজের কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর পেয়ে তিনি ঐদিনই প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেন।

কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ইসলাম গ্রহণ করার পর আমিনা অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করেন। তার অধিকাংশ বন্ধুই তার সঙ্গ ত্যাগ করে। তার মা এই ঘটনা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেনি, তার বোন তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করে, তার শান্তশিষ্ট জ্ঞানী বাবা যার কাছে কাছে লোকেরা পরামর্শের জন্য আসতো তিনি যখন জানতে পারেন যে তার মেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে তখন তিনি তার ডাবল ব্যারালের শটগানে গুলি ভরে মেয়েকে গুলি করতে আসেন।

এরপর খুব শীঘ্রই তিনি হিজাব পরা শুরু করেন। যেদিন তিনি প্রথম হিজাব পরেন সেদিন তিনি চাকরীচ্যুত হন। এরই মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বেই তার মাঝে যে পরিবর্তন আসে তা তার স্বামীকে সন্দেহপ্রবণ করে তোলে এবং তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন। কিন্তু যখন তার স্বামী জানতে পারলেন যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন তিনি তাকে তালাক দেন এবং এর চেয়েও বড় দুঃসংবাদ হলো ইসলাম গ্রহণ করার কারণে কলোরাডোর আদালত তার কাছ থেকে তার সন্তান লালন পালনের অধিকার কেড়ে নেয়।

কিন্তু তিনি দমে যাননি। পুনরায় লড়াই চালিয়ে যান এবং তার কেইসটিকে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন। যদিও তিনি তার সন্তান লালন পালনের অধিকার ফিরে পাননি কিন্তু তিনি কলোরাডোর আইন পরিবর্তন করাতে সক্ষম হোন যে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কারো সন্তান লালন পালনের অধিকার কেড়ে নেয়া যাবে না।

ক্রমেই আমিনা যেন এক পরশ পাথরে পরিণত হোন। তিনি তার সুন্দর ব্যবহার আর যুক্তি তর্কের মাধ্যমে অনেককেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হোন। তার পরিবারের মধ্যে প্রথমে তার দাদী, তারপর তার বাবা, তার মা, তার বোন ইসলাম গ্রহণ করেন। পরিণত বয়সে তার ছেলেও ইসলাম গ্রহণ করে।

তার বিবাহ বিচ্ছেদের ষোল বছর পর তার প্রাক্তন স্বামী তার সাথে দেখা করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর আমিনা আসসিলমীর আরেকজনের সাথে বিয়ে হয় এবং সেই সংসারে তার একটি ছেলে সন্তান হয়, তিনি তার নাম রাখেন বারাকাহ। হিজাব পরার কারণে একসময় তাকে চাকরীচ্যুত করা হয় অথচ তিনি পরবর্তীতে International Union of Muslim Women এর প্রসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তার প্রচেষ্টাতেই ২০০১ সাল থেকে নিয়মিত U.S. Postal Service ঈদ উপলক্ষে ষ্ট্যাম্প প্রকাশ করে আসছে। ২০০৯ সালে Royal Islamic Strategic Studies Centre আমিনা আসসিলমীকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ৫০০ জন মুসলিমের একজন হিসেবে গণ্য করে।

২০১০ সালের ৫ মে এক সড়ক দূর্ঘটনায় ইসলামের এই মহাণ সেবিকা ইন্তেকাল করেন।ইসলাম সম্পর্কে আমিনা আসসিলমীর মূল্যায়ন তার নিজের ভাষায় এইরূপ-
"I am so very glad that I am a Muslim. Islam is my life. Islam is the beat of my heart. Islam is the blood that courses through my veins. Islam is my strength. Islam is my life so wonderful and
beautiful. Without Islam I am nothing, and should Allah ever turn His magnificent face from me, I could not survive."

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে