নাম তার আয়েশা রোজালি। ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত এই তরুণী আমেরিকার লস এঞ্জেলেসের অধিবাসী। তুরস্কের বিখ্যাত ব্লু মসজিদের সৌন্দর্যেৃ মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তিনি।
তুরস্কের ব্লু মসজিদের খ্যাতি পৃথিবীব্যাপী। সুলতান আহমেদ মসজিদ নামেও তা বেশ পরিচিত। ১৬১৫ সালে নির্মিত অনিন্দ্যসুন্দর মসজিদটি পরিদর্শন করে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন আয়েশা রোজালি। দুই বছর আগে তিনি ওই মসজিদ ভ্রমণ করেন। এরপর থেকে তিনি ইসলাম নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা শুরু করেন। মুসলিম হওয়ার পর নিজেকে ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত করেছেন আয়েশা রোজালি।
জানা গেছে, প্রথম জীবনে রোজালি অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন। অভিনেত্রী হিসেবে প্রশিক্ষণও নেন। দীর্ঘকালের স্বপ্ন পূরণে তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকে অভিনয় শুরু করেন। অভিনয়সংশ্লিষ্ট অনেক কাজই তিনি করেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর রোজালি পুরোপুরি অভিনয় ছেড়ে দেন। এখন তিনি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ইসলাম বিষয়ক পোস্ট দিচ্ছেন।
রোজালি জানান, ‘আমি ইসলাম গ্রহণে আগ্রহীদের সহায়তা করতে চাই। আমি চাই আরও বেশি মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আসুক। তাই অনেক নওমুসলিমের জীবনসংশ্লিষ্ট ঘটনা নিয়ে উপস্থাপন করি।’
তুরস্ক ভ্রমণের কথা জানিয়ে বলেন, ‘তুরস্কে এসে ধর্ম সম্পর্কে জানার আমার কোনও আগ্রহ ছিল না। গুগলে খোঁজ করে ব্লু মসজিদের সন্ধান পাই। মনে মনে ভাবি যে এই মসজিদে আমার যাওয়া উচিত।’
ব্লু মসজিদের অপরূপ সৌন্দর্যে রোজালি মুগ্ধ হয়ে পড়েন। নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে রোজালি বলেন, ‘এত সুন্দর মসজিদের খোঁজ পেয়ে আমি হতবাক হই। আগে মুসলিমদের সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা ছিল না। কারণ পশ্চিমা মিডিয়ার মাধ্যমে আমি তাঁদের সম্পর্কে জানতাম। মূলত ইসলাম সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আমার ধারণা এমনই ছিল।’
মসজিদ পরিদর্শন করার আগে রোজালি স্থানীয় দোকান থেকে হিজাব কেনেন। সবার কাছে আমি সম্মানিত থাকতে চাই। ‘আমি ভেবেছিলাম, চুল দৃশ্যমান রাখলে মানুষ আমার ওপর রাগ করবে। তাই একটি হিজাব কিনি। যেন কেউ আপত্তি জানাতে না পারে।
মসজিদ ভ্রমণে এসে রোজালি ইসলাম সম্পর্কিত অনেক বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। কিন্তু এ বিষয়ে তখন তার গভীর জানাশোনা ছিল না। এমনকি অনেক কিছু সঠিকভাবে উচ্চারণও করতে পারতেন না তিনি।
রোজালি জানান, ‘ব্লু মসজিদে প্রবেশ করে একটি তসবিহ ও জায়নামাজ নিই এবং কিছুক্ষণ তসবিহ পাঠ করি। প্রায় এক ঘণ্টার মতো আমি তসবিহ পড়ি। মসজিদের চারপাশ দেখে মুগ্ধ হই। মসজিদের ভেতরের সৌন্দর্য অবাক করার মতো। ভেতরের পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত ও নীরব। আমার সামনে অনেক মানুষকে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে দেখি। মসজিদের ভেতরের অবিশ্বাস্য মুগ্ধকর দৃশ্য ও নীরব পরিবেশ উপভোগ করতে থাকি। আমাকে দেখে কেউ আওয়াজ করছেন না দেখে খুবই অবাক হই।’
মসজিদ ছেড়ে হোটেলে যাওয়ার পথে রোজালি পবিত্র কুরআনের কপি খুঁজছিলেন। রোজালি মনে মনে ভাবতে থাকেন। এক কপি কোরআন সংগ্রহ করে পড়ার দৃঢ় ইচ্ছা তৈরি হয়। ইচ্ছামাফিক তিনি কুরআনের একটি ইংরেজি অনুবাদ সংগ্রহ করেন এবং হোটেলের রুমে বসে তা পড়া শুরু করেন।
রোজালি বলেন, ‘কয়েক মাসে আমি কুরআনের অনুবাদ পড়ে শেষ করি। এ সময় আমি ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। তা ছাড়া অনেক ইসলাম বিশেষজ্ঞের লেকচারও শুনতে থাকি। কয়েক মাস পর আমি কালেমা পাঠ করি। আমি মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ।’ সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি