শনিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৯:৪৭:২৯

যা লিখা ছিল মহানবীর আংটিতে

যা লিখা ছিল মহানবীর আংটিতে

মুফতি মাহমুদ হাসান : আগের যুগের মতো বর্তমানেও আংটি সভ্যতার প্রতীক হিসেবে গণ্য। সুলাইমান (আ.) ও দানিয়াল (আ.)-এর আংটির কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। প্রাচীন যুগ থেকেই রাজা-বাদশাহ ও সম্মানিত ব্যক্তিরা আংটি পরতেন। আংটিতে বিশেষ চিহ্নসংবলিত মোহর থাকত, যা দ্বারা দলিল-দস্তাবেজে সিল মারা হতো।

আংটির মোহর অঙ্কন পাথর ইত্যাদির খোদাই করা হতো। তাতে নাম, গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন ও বাণী ইত্যাদি লেখা থাকত। প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গের আংটিতে কী লিখিত ছিল—তার বর্ণনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো— রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আংটির বিবরণ

নবীজি (সা.) যখন রাজা-বাদশাহদের ইসলামের দাওয়াতি চিঠি প্রেরণের ইচ্ছা করলেন তিনি রুপার একটি আংটি বানালেন, যার মধ্যে ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বাক্যটি অঙ্কিত ছিল। (বুখারি, হাদিস : ৬৫)

অন্য বর্ণনায় আরো স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে যে নবীজি (সা.)-এর আংটিতে তিন লাইনে বাক্যটি অঙ্কিত ছিল। সর্বনিম্নে ‘মুহাম্মাদ’, মাঝে ‘রাসুল’ এবং ওপরে ‘আল্লাহ’ শব্দটি। (বুখারি, হাদিস : ৩১০৬)

যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আংটিতে আল্লাহর নাম লিখিত ছিল, তাই ইস্তিঞ্জায় যাওয়ার সময় ওই নামের সম্মানার্থে তিনি আংটিটি খুলে রাখতেন। (তিরমিজি : হাদিস ১৭৪৬)

আংটিটি মৃত্যু পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে ছিল। তাঁর ইন্তেকালের পর আবু বকর (রা.)-এর হাতে, এরপর ওমর (রা.)-এর হাতে, এরপর উসমান (রা.)-এর হাতে ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে তা উসমান (রা.)-এর হাত থেকে ‘আরিস’নামক কূপে পড়ে গেলে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও আর পাওয়া যায়নি। (বুখারি, হাদিস : ৫৮৭৩)

চার খলিফার আংটিতে যা লিখিত ছিল: খলিফা আবু বকর (রা.)-এর আংটিতে লিখিত ছিল : ‘নি’মাল ক্বা-দিরু আল্লাহ’, অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সর্বোত্তম ক্ষমতাবান। (তারিখে ইবনে কাসির ৭/২৩)

আমিরুল মুমিনিন ওমর (রা.)-এর আংটির লিপি : ‘কাফা বিল মাউতি ওয়াইজান ইয়া উমার’ অর্থাৎ হে ওমর, নসিহতের জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট। (ইবনে কাসির ৭/১৫১)

আমিরুল মুমিনিন উসমান (রা.)-এর আংটির লিপি : ‘আ-মানতু বিল্লাহি মুখলিসান’, অর্থাৎ আমি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ওপর ঈমান আনলাম। (সিরাতে হালবিয়্যা ১/৩৯০)

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, তাঁর আংটিতে লিখিত ছিল : ‘আ-মানতু বিল্লাহিল্লাজি খালাক্বা ফাসাউয়া’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর ওপর ঈমান আনলাম, যিনি সৃষ্টি করেছেন অতঃপর সুগঠিত করেছেন। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে : ‘আ-মানতু বিল্লাহিল আজিম’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর ওপর ঈমান আনলাম, যিনি মহান। (ইবনে কাসির ৭/২৩৯)

আমিরুল মুমিনিন আলী (রা.)-এর আংটির লিপি : ‘আল-মুল্কু লিল্লাহ’ অর্থাৎ রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর। (সিরাতে হালবিয়্যা ১/৩৯০) অন্যান্য সাহাবি-তাবেঈন ও প্রসিদ্ধ আলেমদের আংটির লিপি: আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর আংটিতে লিখিত ছিল : ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ অর্থাৎ সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। (সিরাতে হালবিয়্যা ১/৩৯০)

আমিরুল মুমিনিন মুয়াবিয়া (রা.)-এর আংটির লিপি : ‘লিকুল্লি আমালিন সাওয়াবুন’ অর্থাৎ- প্রত্যেক কাজেরই একটি প্রতিদান রয়েছে। অপর বর্ণনায় এসেছে : ‘লা-কুওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’ অর্থাৎ ভালো কাজের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই।

আমিরুল মুমিনিন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)-এর আংটির লিপি : ‘লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, যিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। অন্য বর্ণনায় এসেছে : ‘আ-মানতু বিল্লাহ’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর ওপর ঈমান আনলাম। অপর বর্ণনায় এসেছে : ‘আলওয়াফা-উ আযীযু’ অর্থাৎ ওফাদারি তথা বিশ্বস্ততা প্রিয়, (অথবা) বিরল।

ইমাম মালেক (রহ.)-এর আংটির লিপি : ‘হাসবিয়াল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকীল’ অর্থাৎ আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কার্যনির্বাহী। (দেখুন : তারিখে ইবনে কাসির ৮/১৪০, ৯/২২৪,৩৮০, ১০/১৮৭)

প্রসিদ্ধ খলিফাদের আংটিলিপি: উমাইয়া খলিফা ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার আংটিতে লিখিত ছিল : ‘আ-মানতু বিল্লাহিল আজিম’ অর্থাৎ আমি মহান আল্লাহর ওপর ঈমান আনলাম।

উমাইয়া খলিফা মারওয়ান (রহ.)-এর আংটির লিপি : ‘আল-ইজ্জাতু লিল্লাহ’ অর্থাৎ সব ইজ্জত (ক্ষমতা ও পরাক্রম) একমাত্র আল্লাহর। অপর বর্ণনায় এসেছে : ‘আ-মানতু বিল আজিজির রহিম’ অর্থাৎ আমি ঈমান আনলাম পরাক্রমশালী ও দয়ালু (আল্লাহ)-এর ওপর।

উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক (রহ.)-এর আংটির লিপি : ‘ঊমিনু বিল্লাহি মুখলিসান’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর ওপর ঈমান রাখি একনিষ্ঠভাবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে : ‘ইয়া ওয়ালিদ, ইন্নাকা মায়্যিতুন’ অর্থাৎ হে ওয়ালিদ, তুমি মরণশীল।

উমাইয়া খলিফা হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক (রহ.)-এর আংটির লিপি : ‘আল-হুকমু লিল-হাকামিল হাকীম’ অর্থাৎ রাজত্ব শুধু মহান প্রজ্ঞাবান বিচারক (আল্লাহ)-এর।উমাইয়া খলিফা সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালিক (রহ.)-এর আংটির লিপি : ‘আ-মানতু বিল্লাহি মুখলিসান’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর ওপর ঈমান আনলাম একনিষ্ঠভাবে।

উমাইয়া খলিফা ইয়াজিদ ইবনে ওয়ালিদ (রহ.)-এর আংটির লিপি : ‘আল-আজমাতু লিল্লাহ’ অর্থাৎ-বড়ত্ব একমাত্র আল্লাহর। প্রথম আব্বাসীয় খলিফা আবদুল্লাহ আস-সাফ্ফাহর আংটির লিপি : ‘আল্লাহু সিক্বাতু আব্দিল্লাহ’ অর্থাৎ আবদুল্লাহ-এর আস্থা একমাত্র আল্লাহর ওপর।

দ্বিতীয় আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর মানসুরের আংটির লিপি : ‘আল্লাহু সিকাতু আব্দিল্লাহ ওয়া বিহি ইউমিনু’ অর্থাৎ আবদুল্লাহর আস্থা একমাত্র আল্লাহর ওপর এবং তাঁর ওপরই ঈমান রাখে।

প্রসিদ্ধ আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদ (রহ.)-এর আংটির লিপি : ‘লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। (দেখুন : তারিখে ইবনে কাসির ৮/২৫৮,২৫৮, ৯/১৮৩, ৩০২,৩৮৬, ১০/১৯, ৬৬, ১৩৬, ২৩৩) সূত্র: কালের কণ্ঠ, লেখক : শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে