ইসলাম ডেস্ক : প্রতিদিন ভোর ৪টার আগেই বেরিয়ে পড়েন ৬৫ বছর বয়সী মুহাম্মদ দাউদ। নিজের বিএমডাব্লিও আরটি বাইক নিয়ে আঁধারঘেরা পথে ছুটে চলেন আমিরাতের এ অভিবাসী। অদ্ভূত এক গন্তেব্যের পথে ছুটে চলেন শারজার এ বাসিন্দা। আমিরাতের সব মসজিদে ফজর নামাজ পড়ার বাসনা থেকে এগিয়ে চলেন তিনি।
আমিরাতের সংবাদ মাধ্যম খালিজ টাইমস সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে বাইকার দাউদ আমিরাতের এক শ মসজিদে নামাজ পড়েছেন পাকিস্তানি এ প্রবাসী। নতুন নতুন মসজিদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ‘ইন লাভ উইথ মাসাজিদ’ নামে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে। তিনি তার জীবদ্দশায় আমিরাতের চার হাজার মসজিদের সবগুলোতে ফজর নামাজ পড়বেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন।
প্রায় দুই দশক আগে সৌদি আরব থেকে আমিরাতে পাড়ি জমান দাউদ। এক সময় তার পাঁচটি মোটরবাইক ছিল। বর্কাতমানে তাঁর ওয়াসাকি নিনজা জেডএক্সফরটিনসহ দুটি বাইক রয়েছে। একটি আমেরিকান কম্পানির সেলস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন তিনি। প্রায় তিন বছর আগে তার মধ্যে এ আশা জেগে উঠে। পরবর্তীতে নতুন মসজিদে ফজর নামাজ পড়াই তার দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়।
খুব ভোরে যাত্রা শুরুর কথা জানিয়ে দাউদ বলেছেন, ‘ভোরের অনেক আগেই আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং দূরের মসজিদে নামাজ পড়তে বাইক যাত্রা শুরু করি। প্রতিদিন নতুন মসজিদে নতুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হচ্ছি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার ঘর আল-হিরা এলাকায়। সেখান থেকে এক শ কিলোমিটার দূরে রাস আল-খাইমার প্রত্যন্ত এলাকার মসজিদে গিয়েছি। ভোরের অনেক আগে রাত সাড়ে তিনটায় নিজ ঘর ত্যাগ করে মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। ঘন কুয়াশায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। বাইক চালানো কষ্টকর ছিল। কিন্তু নামাজের আগেই মসজিদে পৌঁছি এবং নামাজ শেষে বাড়ি ফিরি। ’
দাউদকে নিয়ে অন্যান্য মসজিদের মুসল্লিদের অনেক কৌতুহল। সবাই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রশংসা করেন এবং উৎসাহ দেন। প্রতিদিন শেষ রাতে একজন বৃদ্ধ বাইকে করে বাড়ি থেকে অনেক দূরের মসজিদে গিয়ে পড়েন। সাধারণত এমন দৃশ্য কোথাও দেখা যায় না। বিষয়টি জানতে পেরে অনেকেই দাউদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে পড়েছে। মসদের ইমাম ও মুসল্লিদের উৎসাহ পেয়ে অভিভূত তিনি।
আমিরাতের বৃহত্তম মসজিদ শারজাহ মসজিদের ইমামের সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেন দাউদ। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন কোনো মসজিদে গেলে অবশ্যই সেখানকার ইমামের সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করি। তারা আমার এ প্রচেষ্টায় সমর্থন করেন এবং এগিয়ে উৎসাহ দেন। ’
ক'ভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দাউদের মসজিদ ভ্রমণ পরিকল্পনা বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর পুনরায় মসজিদ চালু হলে তিনি ফের মসজিদ ভ্রমণ শুরু করেন। কিন্তু তখন মসজিদে অজুর ব্যবস্থা ছিল। ফলে তিনি সঙ্গে করে পানি নিয়ে যেতেন। ভবিষ্যত প্রজন্মও মসজিদ ভ্রমণের এ ধারা ধরে রাখবে বলে জানিয়ে দাউদ বলেন, ‘আমি যতটুকু সম্ভব মসজিদ ভ্রমণ করব। আমার পর আমার ছেলেরা এরপর আমার নাতিরা এ দায়িত্ব পালন করবে। ’ সূত : খালিজ টাইমস