জান্নাতবাসীর অকল্পনীয় উপহার!
মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন : জান্নাতিদের রূপ-সৌন্দর্য হবে অপরূপ! অপূর্ব! বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রাজি.) সূত্রে নবী করীম সা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, প্রথম যে দলটি বেহেশতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায়। আর দ্বিতীয় দলটির চেহারা হবে আকাশের উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে দুজন স্ত্রী। প্রত্যেক স্ত্রীর গায়ে থাকবে সত্তর জোড়া কাপড়। এরপরও এগুলোর ভিতর দিয়ে তাদের পায়ের গোছার মজ্জা দেখা যাবে। (তিরমিজি)।
আখেরাতে মৃত্যুকে জবাই করে ফেলা হবে। অর্থাৎ আর কোনোদিন কারও মৃত্যু হবে না। কেউ কোনোদিন আর মরবে না।
আবু সাঈদ খুদরি (রাজি.) থেকে বর্ণিত। রসুল সা. বলেছেন, কেয়ামতের দিন মৃত্যুকে একটি সাদা ভেড়ার আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে দাঁড় করানো হবে। তারপর এটাকে জবাই করে ফেলা হবে এবং এ সময় জান্নাত ও জাহান্নামবাসী সবাই এটা দেখতে থাকবে। আনন্দে যদি কেউ মারা যেত তাহলে জান্নাতবাসী এ আনন্দে মারা যেত। আর দুঃখে কেউ মারা গেলে জাহান্নামবাসী এ দুঃখে মারা যেত। (তিরমিজি)।
জান্নাতিরা সব নেয়ামত পাওয়ার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম পাবে। মহান প্রভুর পক্ষ থেকে সালাম আসার পর মানবকুল আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে। অভিভূত হয়ে যাবে। বিমুগ্ধ হবে। চিরমুগ্ধ হবে।
হজরত জাবির (রাজি.) বলেন, নবী করীম সা. বলেছেন, বেহেশতবাসী একসময় যখন আরাম ও আনন্দে মত্ত থাকবে তখন হঠাৎ একটা আলোকচ্ছটা প্রকাশ পাবে। তারা মাথা উঠিয়ে দেখবে, মহান আল্লাহ উপর থেকে তাদের ওপর তাজাল্লি দিচ্ছেন।
আল্লাহতায়ালা বলছেন, হে বেহেশতবাসী! আসসালামু আলাইকুম। রসুল সা. বলেন, এটা হচ্ছে পবিত্র কোরআনের আয়াতের মর্ম : ‘করুণাময় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বলা হবে, ‘সালাম’।’ রসুল সা. বলেন, তারপর আল্লাহ তাদের দিকে চেয়ে থাকবেন আর তারাও আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকবেন। তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহতায়ালাকে দেখতে থাকবে সে পর্যন্ত অন্য কোনো নেয়ামতের দিকেই চেয়ে দেখবে না। অবশেষে আল্লাহর তাজাল্লি সরে যাবে, কিন্তু তার নূর থেকে যাবে। ইবনে মাজাহ।
প্রিয় পাঠক! জান্নাতের সবচেয়ে বড় নেয়ামত হবে আল্লাহর দিদার বা সাক্ষাৎ। হজরত সুহাইব (রাজি.) বলেন, নবী করীম সা. বলেছেন, জান্নাতিরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন মহান আল্লাহ বলবেন, তোমরা এমন কিছু চাও, যা আমি অতিরিক্ত তোমাদের দান করব। তারা বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তো আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করে দিয়েছ। আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে দাখিল করেছ। তাই এর ওপর আর কী হতে পারে যে তোমার কাছে তা কামনা করব? রসুল সা. বলেন, এমন সময় পর্দা উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং তারা আল্লাহর দিদার লাভ করবে। তাদের যত নেয়ামত দান করা হয়েছে, এর মধ্যে এই দিদারই হবে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। এ কথা বলে রসুল সা. কোরআনের এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন : যারা নেক কাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত এবং আরও অতিরিক্ত একটি নেয়ামত। অর্থাৎ আল্লাহর দিদার বা সাক্ষাৎ। মুসলিম শরিফ। হে করুণাময় আল্লাহ! তুমি আমাদের তোমার এ সর্বোচ্চ নেয়ামত দিয়ে ধন্য কর। আমিন!
লেখক : খতিব।
১৮এপ্রিল২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এএম