বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৪১:৫২

দেশে ফিরতেও হাজীদের চরম দুর্ভোগ

দেশে ফিরতেও হাজীদের চরম দুর্ভোগ

নিউজ ডেস্ক : পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফেরা নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশী হাজীরা। এয়ারলাইন্সগুলোর সিডিউলে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে লাগেজ ও জমজমের পানি পরিবহনও।

ফিরতি হজ ফ্লাইটের যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে ও সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার জেদ্দা বিমানবন্দরে আটকে পড়া একাধিক হাজীও জানিয়েছেন দুর্ভোগের একই কাহিনী। তারা বলছেন, মিনা দুর্ঘটনার পর হঠাৎ নিরাপত্তার নামে কড়াকড়ি আর সৌদি সরকারের হজ ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড সার্ভিসের গাফিলতি।

ঢাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সদরদফতর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সংকটের জন্য জেদ্দা হজ টার্মিনাল ও সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দায়ী করেছে।

জানানো হয়, এ জন্যই প্রতিটি হজ ফ্লাইট কমপক্ষে ৭ থেকে ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হচ্ছে। একই কারণে বিমানের প্রথম ফ্লাইটটি সকাল সাড়ে ৮টার পরিবর্তে ১১ ঘণ্টা দেরিতে রাত ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে। শুধু বিমান নয়, ওইদিন জেদ্দা হজ টার্মিনাল থেকে আসা সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটও কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকায় আসে।

বিমানের কাস্টমার সার্ভিসের পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোসাদ্দিক আহমেদ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিবছরই প্রথম প্রথম ৬-৭ দিন ফিরতি ফ্লাইটগুলো কয়েক ঘণ্টা দেরি হয়। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সৌদি আরবের হঠাৎ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যে কারণে মক্কা থেকে লাগেজ ব্যাগেজ নিয়ে হাজীদের জেদ্দা হজ টার্মিনালে আসতে সময় লাগছে বেশি।

হেরেম শরিফে ক্রেন দুর্ঘটনা ও মিনায় পদদলিত হয়ে বহু হাজী হতাহতের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। সৌদি হজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি ও অদক্ষতার বিষয়টি উঠে আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হজ ব্যবস্থাপনায় হঠাৎ ব্যাপক কড়াকড়ি আনা হয়। নিরাপত্তা বিড়ম্বনার শিকার হন হাজীরা।

জানান- সোমবার ভোর ৫টায় প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ধরার জন্য মক্কার মিসফালাহ থেকে কয়েকশ’ হাজী জেদ্দা হজ টার্মিনালের উদ্দেশে রওনা হন আগের দিন রোববার সন্ধ্যায়। কিন্তু চেক ইন করার অন্তত ছয় ঘণ্টা আগে রওনা দিয়েও তারা সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেনি বিমানবন্দরে। লাগেজ পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত একাধিক স্থানে নিরাপত্তার নামে অহেতুক থামিয়ে রাখা হয় তাদের বাস। জেদ্দা টার্মিনালে পৌঁছার পরও সঠিক সময়ে বিমানের চেক ইন করা সম্ভব হয়নি। চেক ইন শুরুর পরও ৪১৯ যাত্রী যখন নির্ধারিত সময়ের ছয় ঘণ্টা পর টার্মিনালে পৌঁছেন তখনও তাদের বলা হয় আরও দেরি হবে।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, লাগেজ, হাজী ও ককপিট ক্রুরা ফ্লাইটে ওঠার পরও যথা সময়ে ফ্লাইট ছাড়তে পারেননি পাইলট। ক্যাপ্টেনের কাছে লোড শিট আসে দুই ঘণ্টা দেরিতে। জেদ্দা এয়ারপোর্টের গ্রাউন্ড সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার নামে এভাবে প্রতিদিনই ফ্লাইট নিয়ে দেরি করাচ্ছে। মূলত এ কারণে বিমানের প্রথম ফ্লাইটটি ১১ ঘণ্টা দেরিতে ঢাকায় আসে।

শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সোমবার রাতের ফ্লাইট মঙ্গলবার সকাল ৯টায়, রাত ১২টার ফ্লাইট মঙ্গলবার বিকাল ৫টায়, ভোর ৪টার ফ্লাইট মঙ্গলবার রাত ৮টায় ঢাকায় পৌঁছেছে।

সোমবার রাতে যখন একই সময়ে তিন হজ ফ্লাইট শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে অবতরণ করে তখন দেখা দেয় নানা জটিলতা। শাহজালালে ৫, ৬, ৭ ও ৮ নং বেল্টে এ তিন ফ্লাইটের লাগেজ ডেলিভারি দেয়ার জন্য ন্যূনতম জনবল ছিল না। রাত ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, বেল্টের পশ্চিম মাথায় একটি প্লেট থেকে মাত্র দু’জন বিমানকর্মীকে একটি করে লাগেজ নামিয়ে বেল্টে দিতে। এ কারণে রাত ২টায় ডেলিভারি দেয়ার কাজ শেষ হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যদি ৪ জন করে কর্মী দেয়া হতো তাহলে রাত ১২টার আগেই সব লাগেজ ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হতো।

এ সম্পর্কে বিমানের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইল হেউড এই প্রতিবেদককে বলেন, একসঙ্গে তিনটা ফ্লাইট নামার কারণে কাজের চাপ বড়ে গিয়েছিল। আর লোকজন কম থাকায় জনবলও বাড়ানো সম্ভব হয়নি। পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক বলেন, রাতে আরও কিছু জনবল বাড়ালে ভালো হতো। তবে আজ থেকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে কেউ যদি বাড়তি ডিউটি পালন করতে রাজি না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোমবার রাতে দেখা গেছে, সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের হাজীদের লাগেজ আসলেও জমজমের পানি আসেনি। এ নিয়ে হাজীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যারা জেদ্দা থেকে ৯ রিয়াল দিয়ে পানি কিনে বুকিং দিয়েছিলেন তাদেরগুলো আসলেও অন্যদের পানি আসেনি।

এ প্রসঙ্গে সৌদিয়া কর্তৃপক্ষ বলছে পরের ফ্লাইটে পানি আসবে। এসব বিষয়ে বিমানের জনসংযোগ শাখার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জেদ্দা হজ টার্মিনালে হাজীদের অস্বাভাবিক চাপ এবং পবিত্র হারাম শরিফ এলাকায় সৌদি কর্তৃপক্ষ আরোপিত বিশেষ নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থায় হাজীদের বিলম্বে বিমানবন্দরে রিপোর্টিং করার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইট অস্বাভাবিক বিলম্বে সোমবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছে। প্রথম হজ ফ্লাইটে ৪১৯ জন হাজী দেশে ফিরেছেন।

জেদ্দা বিমানবন্দরে বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে বিমানসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইটসমূহও বিলম্বে চলাচল করছে। এ পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৩টি হজ ফ্লাইট ঢাকা পৌঁছেছে। রাতে আরও ২টি ফ্লাইটে মোট ৮৩৮ জন হাজী দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। এ অবস্থা আরও ২-৩ দিন চলতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমান মাসব্যাপী ফিরতি হজ ফ্লাইট কার্যক্রমের আওতায় ১০৯টি ডেডিকেটেড এবং ৩১টি সিডিউল ফ্লাইটসহ ১৪০টি ফ্লাইটের মাধ্যমে মোট ৫৪ হাজার ৮৪৫ হাজী দেশে ফিরিয়ে আনবে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ফিরতি হজ ফ্লাইট চলবে।-যুগান্তর
১ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে