বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:১২:৫৪

অশনি সংকেত, চলুন সূত্র মিলাই, সমীকরণের সূত্র!

অশনি সংকেত, চলুন সূত্র মিলাই, সমীকরণের সূত্র!

নিউজ ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের পর কানাডাও তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থানকালে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকায় আমেরিকান ক্লাব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলও বন্ধ রাখা হয়।

অন্যদিকে, ঢাকায় এক ইতালীয় নাগরিককে হত্যা এবং 'অব্যাহত হুমকি' নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে 'ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ' রাখার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা বাংলাদেশকে 'একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদার মনে করে' বলে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়।

বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও আইসিসিও কো-অপারেশনের 'প্রফিটেবল অপরচ্যুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি' কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন তাবেলা।

মধ্যপ্রাচ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থা জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশে এই গোষ্ঠীর তৎপরতার কথা নাকচ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অবগত থাকার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, নিহতের পরিবার ও বন্ধুবান্ধব এবং ইতালির প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এর আগে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় 'মার্কিন স্বার্থের ওপর' জঙ্গি হামলার 'সম্ভাব্য পরিকল্পনার' তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সোমবার হালনাগাদ করা ওই বার্তায় তাদের নাগরিকদের বলেছে, বাংলাদেশে জঙ্গিরা অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থে আঘাত হানতে পারে বলে 'নির্ভরযোগ্য নতুন' তথ্য তারা পেয়েছে। এ ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

বার্তায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেসব নতুন তথ্য পাচ্ছে তাতে ধারণা করা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার জঙ্গি দলগুলো ওই অঞ্চলে মার্কিন স্থাপনা, মার্কিন নাগরিক ও মার্কিন স্বার্থের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে।

'ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায়' পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা দপ্তরের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশে বড় ধরনের জমায়েত বা আন্তর্জাতিক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (যেখানে বিদেশিরা সমবেত হতে পারে) অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের অন্য নাগরিকদেরও একই পরামর্শ দিয়ে রেস্তোরাঁ, হোটেলসহ সব জনসমাগমস্থলে চলাফেরার ক্ষেত্রে 'উচ্চমাত্রায় সতর্কতা' অবলম্বন করতে বলেছে মার্কিন দূতাবাস।

'নিরাপত্তা ঝুঁকির' কথা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল গত শনিবার বাংলাদেশ সফর পিছিয়ে দিলে হঠাৎ করেই জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গটি সামনে আসে।

তার আগের দিন অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) বাংলাদেশে ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে এক বার্তায় তাদের নাগরিকদের জানায়, জঙ্গিরা বাংলাদেশে 'অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থের ওপর' আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে_ এমন 'নির্ভরযোগ্য তথ্য' তাদের হাতে রয়েছে।

এরপর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তাপ্রধান শন ক্যারল নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তাকে আশ্বস্ত করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বিষয়টি ভিত্তিহীন, বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা পূর্ণ নিরাপত্তা পাবে।

এরই মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানে তাবেলা সিজার নামে এক ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে রাতেই তথ্য দেয় 'সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ' নামের একটি ওয়েবসাইট, যারা জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুক্তরাজ্য সরকারও বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাফেরা সীমিত করে আনার পরামর্শ দেয়। যুক্তরাজ্যও বলেছে, বাংলাদেশে জঙ্গিরা পশ্চিমা স্বার্থের ওপর আঘাত হানতে পারে বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।

'জঙ্গিদের কাছ থেকে হুমকি রয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর জঙ্গিদের আঘাত হানার পরিকল্পনার নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে।

বাংলাদেশের পুলিশের হাতে এ ধরনের কোনো তথ্য যে নেই তা অস্ট্রেলিয়ার সতর্কতা জারির পরদিনই জানিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। সেদিন তিনি বলেছিলেন, 'ঢাকা মহানগর পুলিশ কোনো থ্রেটের খবর জানে না। তাদের কেউ আমাদের কিছু জানায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও অস্ট্রেলিয়ার আশঙ্কা 'ভিত্তিহীন' বলে উড়িয়ে দেন।

ধর্মীয় উগ্রপন্থী তৎপরতার অভিযোগে বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে কয়েক শ ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গি দলের যোগাযোগের কথাও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে বড় কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটেনি।

চলতি শতকের শুরুর দিকে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশ 'জঙ্গিবাদের উর্বর ক্ষেত্রে' পরিণত হচ্ছে বলে কথা ওঠে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও।

সারাদেশে ধারাবাহিক বোমা হামলা চালানোর জন্য দায়ী দল জেএমবি পরবর্তীতে র‌্যাব-পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে আসে। জনমনে আতঙ্কও অনেকটা কমে যায়।

গত দুই বছরে একের পর এক বস্নগার হত্যার ঘটনায় বার বার জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, পুলিশও জোরের সঙ্গে উগ্রপন্থীদের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহের কথা বলেছে। তবে বাংলাদেশে বিদেশি কোনো নাগরিক জঙ্গি হামলায় খুন হওয়ার অভিযোগ এর আগে কখনো ওঠেনি। তাই পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা গোটা ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন।-যায়যায়দিন
১ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে