বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:৩০:৪৪

বিএনপির স্টিয়ারিং যাচ্ছে তারেক রহমানের হাতে

বিএনপির স্টিয়ারিং যাচ্ছে তারেক রহমানের হাতে

মজুমদার ইমরান : বিএনপির রাজনীতির স্টিয়ারিং দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে যাচ্ছে। দল পুনর্গঠন, রাজনৈতিক রণকৌশল থেকে শুরু করে নতুন নির্বাচন আদায়ের আন্দোলন সবকিছুতেই তার পরামর্শকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বিএনপির রাজনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন তারেক রহমান। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে জামিনে কারামুক্ত হয়ে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তারেক রহমান লন্ডনে বসবাস করছেন। চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেও মূলত বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা রাজনৈতিক কারণেই বর্তমানে দেশে ফিরতে পারছেন না। দীর্ঘসময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করলেও বিএনপির আন্দোলন, দল ও অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনে তার মতামত প্রাধান্য পেয়ে থাকে। গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দফা সরকারবিরোধী কঠোর দীর্ঘ আন্দোলন করেও দাবি আদায়ে ব্যর্থ বিএনপি সম্প্রতি আবারো দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়।

একইসঙ্গে রাজপথে সব ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি বন্ধ করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ের জন্য নতুনভাবে রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণে পরিকল্পনা নিয়েছে। দল পুনর্গঠন ও নতুন রাজনৈতিক রণকৌশল নির্ধারণের পূর্বে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে লন্ডন গেছেন। ১৬ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন ঢাকা ছাড়েন। অনেকদিন পর লন্ডনে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদও উদযাপন করেছেন। লন্ডন সফর শেষে তার আগামী ২ অক্টোবর দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু জানা গেছে, খালেদা     জিয়া দেশে ফিরতে আরো সময় নেবেন।

একটি সূত্র জানায়, লন্ডনে তিনি তার চোখের অপারেশন করাবেন। গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার সময় পুলিশের ছোড়া পিপার স্প্রেতে তার চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বর্তমানে ইস্ট লন্ডনের একটি ভাড়া বাড়িতে পুত্র তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, নাতনি জাইমা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলের বউ শর্মিলা রহমান ও তার দুই মেয়ের সঙ্গে অবস্থান করছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সফরকে ব্যক্তিগত চিকিৎসার কথা বলা হলেও এর রাজনৈতিক তাৎপর্য নিয়ে খোদ দলটিতেই চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। দেশের ভেতরেও খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকে ঘিরে এক ধরনের কৌতূহল রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের সফরকে সামনে রেখে দলের কয়েক প্রভাবশালী নেতাও লন্ডনে গেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, দেখুন তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে তার বিরাট প্রভাব রয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী অনেক সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার পরামর্শ নেয়া হয়। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন। শারীরিক অবস্থা অনুকূলে থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। বিএনপির ওই নেতা বলেন, দুই দফা সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখনো দলের বহু নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন। এ অবস্থায় আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি নতুন করে সাজাতে হবে। এজন্য দল পুনর্গঠন জরুরি। আমাদের দলের চেয়ারপার্সন সেই কাজ করছেন।

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপির অপর এক নেতা বলেন, লন্ডনে থাকার কারণে তারেক রহমানের অনেক নির্দেশনা, পরামর্শ দলের চেয়ারপার্সনের কাছে সময় মতো সঠিকভাবে পৌঁছে না। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সমস্যা হয়। এবার আমাদের চেয়ারপার্সন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই এবার দল পুনর্গঠনসহ সার্বিক রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণে কোনো অসুবিধা হবে না।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা শেষে দেশে ফিরেই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করবেন। যেখানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। এ ছাড়া দলের একজন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব নির্বাচিত করা হবে। জানা গেছে, ইতিমধ্যে মহাসচিব হওয়ার জন্য বিএনপির বেশ কয়েক সিনিয়র নেতা জোর লবিং শুরু করেছেন। ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন এমন নেতারাও মহাসচিবের দৌড়ে আছেন। অপর একটি সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ ও সম্পাদক পদের পরিবর্তন হলেও বড় কোনো অঘটন না ঘটলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেই মহাসচিবের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।

এদিকে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির পুনর্গঠনের উদ্যোগও যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে দল গোছানোর কাজ নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে হবে না। সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে সাড়ে সাত শতাধিক কমিটি নতুন করে গঠনের জন্য গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্র থেকে জেলা কমিটিকে চিঠি দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল ও নেতাকর্মীদের নামে মামলা থাকায় জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ এগোচ্ছে না। সারাদেশে বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার অধীনে সাড়ে সাত শতাধিক ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা ও পৌর কমিটি রয়েছে। জানা গেছে, দলের চেয়ারপার্সন দেশে ফিরে এলে জেলা পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজও জোরদার করা হবে।-মানবকণ্ঠ
১ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে