ঢাকা : অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশে আসার নির্ধারিত সময় ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। এর আগের দিন ২৭ সেপ্টেম্বর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এক গোয়েন্দা রিপোর্ট মারফত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আসার আগের নানা হুমকি ও আশঙ্কার কথা জানায়। দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে হুমকির চিত্র তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। ওই রিপোর্টে হুমকির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সম্ভাব্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে ১৮ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সফরে সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড ঘটার সম্ভাব্য নয়টি লক্ষ্যবস্তুর কথা বলা হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের সফরকালে জঙ্গিদের আক্রমণ এবং এ বছর পাকিস্তানে জিম্বাবুয়ে সফরের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দল বাংলাদেশ সফরকালে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক সন্ত্রাসীমূলক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাদের বাংলাদেশ সফরকালে সার্বক্ষণিক পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়ে, বর্তমান বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরকালে গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের হুমকির আশঙ্কা বিবেচনায় নেয়া উচিত।
দেশীয় প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা হুমকি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জোটভুক্ত জামায়াতে ইসলামী ও তাদের মদতপুষ্ট ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের আটক, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরসহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলসহ সর্বোপরি অস্তিত্বের সংকটের কারণে দলটির নেতাকর্মীরা বিগত বছরগুলোতে প্রতিনিয়ত যানবাহনের উপর অতর্কিত হামলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর আক্রমণ, ককটেল বা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ, রাস্তা অবরোধ করাসহ নানাবিধ অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড সৃষ্টির মাধ্যমে সারা দেশে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল।
সামপ্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এর মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকায় জামায়াত-শিবির যে কোন ধরনের সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রমের চেষ্টা চালাতে পারে। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বর্তমান সরকার তাদের পূর্বের নীতি তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, উগ্র জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান, জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধকরণসহ ব্যাপক অভিযান, কর্মমুখী আধুনিক শিক্ষানীতি, নারী নীতির বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে। ফলে জামায়াত-শিবির, বিএনপিসহ স্বার্থান্বেষী মহল দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় যে কোন রকম অরাজক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে বলে জানা যায়।
প্রটেকশন না দিয়ে কোন খেলোয়াড়/কর্মকর্তা হোটেল ত্যাগ করতে না পারে ওই ব্যবস্থা রাখতে হবে। অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরকালে যে কোন প্রকার নাশকতামূলক ঘটনা বা সন্ত্রাসী হামলা সংক্রান্ত অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে রাজনৈতিক দল/সংগঠন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের এবং ক্রিকেট সমর্থক ও গোষ্ঠীর উপর নজরদারি বাড়াতে দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে।
১ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ