সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬, ০৮:৫৩:৪০

বুক চাপড়ে রিশার মা বললেন, ‌‘আমার মেয়ে তখন মৃত্যু যন্ত্রণায় দাপাচ্ছিল’

বুক চাপড়ে রিশার মা বললেন, ‌‘আমার মেয়ে তখন মৃত্যু যন্ত্রণায় দাপাচ্ছিল’

জাকিয়া আহমেদ : ‘আমার মেয়ে মরতো না। ছুরিকাহত হওয়ার পরও সে বেঁচে ছিল।  শুধু একটি গাড়ি যদি স্কুলকর্তৃপক্ষ দিত, তাহলেই রিশাকে হয়তো বাঁচানো যেত।  কিন্তু, তারা দেয়নি।  পুলিশ কেসের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।  শিক্ষক নাকি অভিভাবক! আর সেই অভিভাবকের সামনেই মেয়েটি আমার মৃত্যুযন্ত্রণায় দাপাচ্ছিল।  মেয়েটি আমার চিরদিনের জন্য চলে গেল!- হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে এ কথাগুলোই বারবার বলছিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার রিশা মা তানিয়া হোসেন।  তাকে সান্ত্বনা দেয়ার সব চেষ্টাই যেন ব্যর্থ হচ্ছিল।

গত বুধবার (২৪ আগস্ট) উইলস ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী রিশাকে ছুরিকাঘাত করে বৈশাখী টেইলার্স কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খান।  গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর রোববার (২৮ আগস্ট) রিশা মারা যায়।

এদিনই ঘাতকের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।  সোমবার (২৯ আগস্ট) রিশা হত্যার বিচার চেয়ে ফের জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা।  প্রথমে স্কুল মাঠে এবং পরে কাকরাইলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রিশার বাবা মো. রমজান হোসেন, মা তানিয়া হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।  ছিলেন অন্য অভিভা্বকরাও। ডিএমপির পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক ওবায়দুলকে গ্রেফতার করার আশ্বাস দেয়া হলে অভিভাবকরা বিক্ষোভ স্থগিত করেন।

এদিন উপস্থিত রিশার অভিভাবক, অন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ঘাতকের পাশাপাশি রিশার মৃত্যুর পেছনে স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করেন।  

তাদের অভিযোগ, রিশা ছুরিকাহত হওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও দায়িত্ব নেয়নি।  তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিলে রিশাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেয়া যেত। এমনকি ওইসময় ঘটনাস্থলে স্কুলের গাড়ি থাকলেও তা দেয়া হয়নি। এগিয়ে আসেননি কোনো শিক্ষক। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের কোনো গাফিলতি ছিল না।

কাকরাইলে অবস্থিত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুল মাঠে জড়ো হয়েছে স্কুল শিক্ষার্থীরা।  তারা সেখানে এ হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেয়।  সেখানে উপস্থিত ছিলেন রিশার বাবা মো. রমজান হোসেন, মা তানিয়া হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।

এ সময় বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন রিশার মা তানিয়া হোসেন।  রিশার অভিভাবকরা বলেন, 'রিশা ছুরিকাহত হয় স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে। সেখান থেকে সে রক্তাক্ত অবস্থায় এসে দাঁড়ায় স্কুলের ভেতরে, তখন তার পেটের বাম দিক থেকে রক্ত পড়ছিল।

স্কুলের গাড়িটা তখন পাশেই ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে গাড়িটা দেয়নি।  কোনও শিক্ষক এগিয়ে আসেননি। এ অবস্থায় প্রথমে কলেজ সেকশনের দু'জন শিক্ষার্থী এসে ওর ওড়না খুলে পেটে বেঁধে পাশের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যায়।

কিন্তু তারা গুরুতর আহত বলে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। রিকশায় করে এখান থেকে ওকে তারা নিয়ে যায়। পুলিশ কেস হবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসেনি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল বলেছেন, মামলা হবে, ধরা যাবে না।''

রিশার মা বিলাপ করে বলেন, 'আমার বাচ্চার রক্ত পড়ছিল, কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালসহ কেউ এগিয়ে আসেননি। শিক্ষার্থীরা কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, পেটের ভেতর থেকে নাড়ি বের হয়ে গিয়েছিল।''

এ সময় তিনি স্কুল কম্পাউন্ডে থাকা গাড়ি দেখিয়ে বলেন, 'ওই যে কতগুলো গাড়ি, কিন্তু আমার বাচ্চাকে কেউ একটা গাড়ি দেননি।  দিলে আমার বাচ্চাটা বাঁচতো, ওরে তাড়াতাড়ি নেয়া যেত হাসপাতালে।'

স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও রিশার শিক্ষক সুমিত বলেন, 'ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়েছে কিন্তু তিনি পুলিশ কেস বলে মন্তব্য করে তার রুম থেকেই বের হননি।'

এদিকে বিক্ষোভে উপস্থিত অভিভাবকরা বলেন, 'আমরা যখন কাল মানববন্ধ করেছি, তখন শিক্ষকরা আমাদের কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নিয়েছেন। তারা আমাদের নামে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। একজন শিক্ষিকা আমাদের অশিক্ষিত, মূর্খ বলেছেন।'

শিক্ষার্থীদের মানবন্ধন নিয়েও স্কুল কর্তৃপক্ষ বিরূপ আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।  

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সদস্য সচিব আঞ্জুমান আরা বলেন, 'নিজ বাসার পরে একটি শিশুর নিরাপদ জায়গা হলো তার স্কুল।  কিন্তু এই ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ) অদক্ষ।  তিনি রিশা আহত হওয়ার পর কোনো পদক্ষেপ নেননি। সহযোগিতা করেননি। গাড়িটা পড়ে ছিল স্কুল মাঠে কিন্তু রিশাকে গাড়িটা দেননি তিনি।''

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন।  

তিনি বলেন, 'অভিভাবকদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি যখনই শুনেছি, তখনই ঢাকা মেডিকেলে ছুটে গেছি। অভিভাবকরা আমার নামে মিথ্যা কথা বলছেন।'

এদিকে সোমবার দুপুরে ঘাতক ওবায়দুলকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার আশ্বাস দিয়ে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।  তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আসামিকে গ্রেফতারের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। -বাংলা ট্রিবিউন
২৯ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে