মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৩:৩১

এবারও সিংহভাগ পশুর চামড়া যাবে হাজারীবাগে

এবারও সিংহভাগ পশুর চামড়া যাবে হাজারীবাগে

গোলাম মওলা : সাভারে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হলেও এবারও কোরবানির পশুর সিংহভাগ কাঁচা চামড়া যাবে রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর না করায় যদিও মালিকদের প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হচ্ছে।

তারপরও তারা হাজারীবাগ থেকে সরতে চাইছেন না। বিকল্প হিসেবে সাভার উপযুক্ত হয়ে না ওঠায় ১৩০ থেকে ১৪০ ট্যানারি-মালিক সেখানেই আড়ৎদারদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনবেন বলে জানা গেছে।

২০০১ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এদিকে, সরকারও ঢাকার অদূরে সাভারে ২০০ একর জমিতে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলতে শুরু করে ২০০৪ সালে। ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্টের আরেক আদেশে ট্যানারি শিল্প সরানোর জন্য ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সরকার পক্ষের আবেদনে সেই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানোও হয়।

একপর্যায়ে ২০১৪ সালে রিটকারী সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই ১০টি প্রতিষ্ঠানের মালিককে তলব করেন। আদালতের ওই আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় রিটকারী আদালতে সম্পূরক আবেদন করেন। পরে গত ১৬ জুন আদালত ১৫৪টি ট্যানারি সাভারে না সরানো পর্যন্ত পরিবেশ দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রত্যেক ট্যানারি মালিককে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার আদেশ দেন।  রায়ের বিরুদ্ধের আপিল শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আপিল নিষ্পত্তি করে। এতে ১৫৪ মালিককে ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

তারপরও সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে এখন পর্যন্ত স্থাপিত হয়েছে কেবল ২৫ থেকে ৩০টি ট্যানারি। বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংযোগ আর বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি প্ল্যান্ট) না থাকায় উৎপাদনে যেতে পারছেন না ওই ট্যানারির মালিকেরা। শুধু তাই নয়,  শোধনাগার (ইটিপি প্ল্যান্ট) তৈরি না হওয়ায় সেখানে কাঁচা চামড়া কিনতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ট্যানারি মালিকেরা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, ‘এবারও কোরবানির পশুর সিংহভাগ কাঁচা চামড়া হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো কিনবে। কারণ, সাভারের ট্যানারিগুলোতে এখনও বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়নি। সেখানে এখনও বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করে দেওয়া হয়নি। এমনকী এখনও গ্যাসের সংযোগও দেওয়া হয়নি।’ তিনি মনে করেন, বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি প্ল্যান্ট) ছাড়াই যে, ৫/৬টি ট্যানারি চালু করা হয়েছে, তাদের কারণে সেখানকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শাহিন আহমেদ বলেন, ‘সাভারে চালু হওয়া ৫/৬টি ট্যানারির মধ্যে অনেকেই জেনারেটর দিয়ে কোনও মতে ট্যানারি চালাচ্ছেন।’

এদিকে, লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচও বাড়ছে। এ অবস্থায় স্থানীয় আড়ৎদারেরা এবার লাভ করা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। কারণ, লোকসান এড়াতে ট্যানারি-মালিকেরা এবার আড়ৎদারদের কাছ থেকে ৫০ টাকা বর্গফুট দরে গরুর চামড়া কিনবেন।

এ প্রসঙ্গে শাহিন আহমেদ জানান, লোকসান এড়াতে চামড়ার দাম এবার তুলনামূলকভাবে কম নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী, প্রতি বর্গফুটে ২০ টাকা করে কমলেও বাংলাদেশে গতবারের চেয়ে বর্গফুট প্রতি মাত্র ৫ টাকা কমানো হয়েছে।’

এ হিসাবে ৭ মণের ওপরে মাংস হওয়া গরুর চামড়ার আকার যদি ৩০ থেকে ৩২ বর্গফুট হয়, তাহলে প্রতি বর্গফুট ৫০ টাকা হিসাবে চামড়ার দাম পড়বে ১ হাজার ৭শ টাকা। ৫ মণের কাছাকাছি মাংস হওয়া গরুর চামড়ার আকার ২৮ থেকে ৩০ বর্গফুট হলে প্রতি বর্গফুট ৫০ টাকা হিসাবে দাঁড়াবে দেড় হাজার টাকা। ৩ মণ মাংস হওয়া গরুর চামড়ার আকার যদি ২০ থেকে ২২ বর্গফুট হয়, তাহলে ৫০ টাকা বর্গফুট দরে এ ধরনের গরুর চামড়ার দাম হবে ১,১০০ টাকা।  

আর যে গরুর মাংস ২ মণের কাছাকাছি হবে, তার চামড়ার আকার হবে ১৬ থেকে ১৮ বর্গফুটের। ৫০ টাকা বর্গফুট দরে এ ধরনের চামড়ার দাম হবে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।  এক্ষেত্রে লোকসান এড়াতে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঢাকার আড়ৎদারদের কিনতে হবে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা বর্গফুট দরে। একইভাবে বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে ঘুরে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে হবে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা বর্গফুট দরে। তা না হলে লোকসান গুনতে হতে পারে। বাংলা ট্রিবিউন

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে