সাজেদুল হক : জীবনের দাম কত? একটি সহযোগী দৈনিকের অনলাইন সংস্করণ শিরোনাম করেছে, ‘জীবন যখন কচুপাতার পানি।’ নাকি, জীবনের দাম তার চেয়েও কম। মৃত্যুর মিছিল চলছে। মারা যাচ্ছে মানুষ। কেউ হচ্ছেন চিরতরে পঙ্গু। সড়কে সক্রিয় ঘাতকেরা। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা।
ঈদের পর গত কয়দিনের সংখ্যাগুলো ভয়ঙ্কর। কোনো দিন ২১। কোনো দিন ৩৫। বর যাচ্ছিলেন কনে বাড়ি। দুর্ঘটনায় সব শেষ। আরেক জায়গায় এমন ঘটনার শিকার কনে। হাসির বদলে কান্না। এভাবে মুছে যাচ্ছে কত মানুষের জীবন। উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পথে বসে যাচ্ছে কত পরিবার।
সড়ক-মহাসড়ক যেন এক মৃত্যুফাঁদ। প্রতিদিন প্রাণ হারায় কত মানুষ। একসময় এসব সংবাদ শিরোনাম হতো। এখন আর তাও হয় না। মানুষের জীবনের যেন কোনো দামই নেই। বাংলাদেশে দুর্ঘটনার হার খুবই উচ্চ। রথী-মহারথীরা অবশ্য এসব মানতে রাজি নন। কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশিত হলেই তারা প্রতিবাদ করেন। সোচ্চার হন ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে। কোনো লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। যাদের লাইসেন্স আছে তাদের বেশির ভাগও অবশ্য কোনো কিছু কেয়ার করেন না। ওভারটেক তাদের প্রধান নেশা।
গতির লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত তাদের নিজেদেরও যাচ্ছে জীবন। কত চালক আর তাদের সহকারী প্রাণ হারাচ্ছেন। পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন অনেকে। সে অর্থে তাদের কোনো সঞ্চয় থাকে না। দুর্ঘটনায় যে ক্ষতিপূরণ পান তাও সামান্য। অথৈ সাগরে পড়তে হয় একেকটি পরিবারকে। কিন্তু তবুও তাদের হুঁশ হয় না। এ যেন এক মরণ নেশা। চালকেরা অবশ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সকল আইনের ঊর্ধ্বে। কোনো অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি পাওয়া এক বিরল ঘটনা।
কিছু হলেই ধর্মঘট ডেকে তারা সবকিছু অচল করে দেন। তাদের পক্ষে থাকেন প্রভাবশালী নেতারা। কখনও কখনও এসব প্রভাবশালীর ভাষা এতো কদর্য যে কল্পনাও করা যায় না। ভাবা যায়, এরাই নাকি শ্রমিক নেতা। জীবনে কোনোদিন পরিবহন শ্রমিক ছিলেন না। তবুও তারা শ্রমিক নেতা। তারা আমাদের ভাগ্য দেবতা। আমাদের জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি সময়ে আমরা তাদের উপরই নির্ভর করি। বাহ্ কি বিচিত্র!
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সফলতা-ব্যর্থতা দুটোই তার সঙ্গী। তবে মানুষটা চেষ্টা করছেন। এই কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। তিনি ছুটছেন নিরন্তর। এখান থেকে সেখানে। তার প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে যেন তিনি কিছু পদক্ষেপ নেন। এমন মৃত্যু আমরা আর মেনে নিতে পারি না। প্লিজ, এই অস্বাভাবিক মৃত্যু, হত্যা বন্ধে আপনি ত্বরিত পদক্ষেপ নিন মাননীয় মন্ত্রী। চালক ভাইদের প্রতি অনুরোধ নিজের জীবন এবং মানুষের জীবন যে গুরুত্বপূর্ণ এটা অনুধাবন করুন।
হ্যাঁ, এটা সত্য যে, বহু ক্ষেত্রেই আপনারা অমানবিক পরিশ্রম করে থাকেন। বিশেষ করে ঈদের সময়ে হয়তো টানা ২৪-৩৬ ঘণ্টা গাড়ি চালান। যানজট কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়। হয়তো আপনাদের অবসাদগ্রস্তও করে। কিন্তু এটা স্মরণ রাখবেন, মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছুই নয়।
কয়েকটি মিনিট আগে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য এতো বিপুল সংখ্যক যাত্রীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। গতির নেশা থেকে বেরিয়ে আসুন। বিপজ্জনক ওভারটেকিং থেকে বিরত থাকুন। ভয়ঙ্কর এই খেলায় নিজেকে জড়াবেন না। মনে রাখবেন, আপনার ওপর শুধু আপনি নন, আপনার পরিবারও নির্ভরশীল। তাদের কথা একটু ভাবুন। সংশ্লিষ্ট সব মহলের প্রতি আমাদের অনুরোধ, এখনই আপনারা কিছু একটা করুন। সড়কে মৃত্যুর খেলা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। প্লিজ, আমাদেরকে বাঁচান।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি