মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:১৭:৩৮

এই নতুন ২ অতিথি মাতিয়ে রেখেছে মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা

এই নতুন ২ অতিথি মাতিয়ে রেখেছে মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা

কমল জোহা খান : মাত্র পাঁচ দিন বয়সী জেব্রাশাবকটিকে দেখতে জেব্রা শেডের সামনে তখন আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন দর্শনার্থীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই শাবকটিকে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আনা হলো। শাবকটিকে প্রথম দেখে দর্শনার্থীদের সে কী উচ্ছ্বাস!

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেতরে গতকাল সোমবারের এই দৃশ্য ছিল অনন্য। ডোরাকাটা ছোট্ট শাবকটি এবং তার মা কুইনের সঙ্গে তখন মোবাইলে সেলফি তুলতে ও ভিডিওচিত্র ধারণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন দর্শনার্থীরা। কিন্তু কুইন যেন ভয়ে গুটিসুটি হয়ে যাচ্ছিল। ভয় তো পাবেই। কারণ, ২০১৫ সালের শেষের দিকে ওর সঙ্গী সম্রাট মারা যায়। মা ভয় পেলেও শাবকটি নানা কসরত দেখিয়ে মুহূর্তের মধ্যে দর্শনার্থীদের মাতিয়ে তোলে। জেব্রা শিশুটি যেন এরই মধ্যে বুঝে গেছে তার কদর। তাই কখনো লেজ নাড়াচ্ছে, কখনো দুধ খাওয়ার জন্য মায়ের শরীরের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখছে।

চিড়িয়াখানার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনোয়ার শাহাদাৎ বলেন, শাবকটির বয়স ২১ দিন না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ যত্নে রাখা হবে। গত বৃহস্পতিবার ভোর চারটার দিকে জন্মের পর থেকেই তার যত্ন করা হচ্ছে। ২ অক্টোবর পর্যন্ত জেব্রা শেডের সামনের জায়গা ঘিরে রাখা হয়।

এখন পর্যন্ত সুস্থই রয়েছে কুইনের শিশু জেব্রাটি। এ কথা জানিয়ে আনোয়ার শাহাদাৎ বলেন, জন্ম নেওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে হাঁটাচলা শুরু করে জেব্রাশাবকটি। এর দুই ঘণ্টা পর মায়ের দুধ পান করে। এখন মায়ের দুধ ছাড়া জেব্রাশাবককে অন্য কোনো খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছে না। ওর দেড় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানো হবে। এরপর জেব্রাটিকে ঘাস, সঙ্গে ভুসি খেতে দেওয়া হবে।

এদিকে মা কুইনও একই শেডে থাকা অন্য দুই সঙ্গীকেও ওর সন্তানের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। মানুষ ও সঙ্গী—সবাই যেন এখন কুইনের চরম শত্রু। জেব্রার তত্ত্বাবধানকারীরাও কুইনের সন্তানের কাছে যেতে পারছেন না। তাই এখনো বোঝা যাচ্ছে না কুইনের শাবকটি ছেলে, নাকি মেয়ে।

জলহস্তী আগন্তুর একটি ছেলেসন্তান হয়েছে। জলহস্তীশাবকটির জন্ম এক মাস আগে গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে। আগন্তুও বেশ আদর-যত্নে আগলে রেখেছে ওর বাচ্চাকে। শেডের ভেতর কাদাপানি নিয়ে সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে রাখছে, আবার শুকনো জায়গায় এনে হাঁটাচলা করানোর কাজ করছে মা জলহস্তীটি।

জলহস্তীশাবকটিও বেশ চালাক। ওদের তত্ত্বাবধায়ক নূরে আলম শুকনো ভুসি খেতে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগন্তু ওর মুখটি বড় করে ‘হাঁ’ করছে। এই সুযোগে শাবকটি চটপট করে মায়ের দুধ খেয়ে নিচ্ছে।

মাত্র এক মাস বয়স হলেও শেডের ভেতরে দুই ভাই জলহস্তীর সঙ্গে ঝগড়াও করছে শাবকটি। কখনো মারামারিও করছে। এসব মিটমাট করছেন তত্ত্বাবধায়ক নূরে আলম।

তিনি বলেন, ‘ওদের মা আগন্তু, দাদা টিটো ও দাদি ডায়ানাকে আমিই বড় করেছি। চিড়িয়াখানায় এখন ১৩টি জলহস্তী রয়েছে। ওরা সবাই আমার কথা শোনে। আগন্তুর নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয়। ওরা ঝগড়া করলে আমি কথা বললে চুপ হয়ে যায়।’
নূরে আলম জানান, জলহস্তীশাবকটির ওজন এক মাসে প্রায় ৩৫ কেজি বেড়েছে। জন্মের সময় ওর ৪০ কেজি ছিল, এখন হয়েছে ৭৫ কেজি।

২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রাণী জন্ম নিয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেব্রা-জলহস্তীশাবকদের নতুন নাম দেওয়া হবে। নতুন প্রাণীর আগমন ও এদের নাম দেওয়া হলে চিড়িয়াখানায় দর্শক আকর্ষণও বেড়ে যায়। -প্রথম আলো।
০৪ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে