উদিসা ইসলাম: সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে খাদিজা বেগম নার্গিস (২৩) নামের এক শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি কোপানোর ঠিক দেড়ঘন্টা আগে ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস দেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলম। স্ট্যাটাসে সে লিখেছে,‘নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষগুলোর কাছে আমি সবিনয়ে ক্ষমাপ্রার্থী। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া কেউ আপন নয়।’ মনোবিশ্লেষকরা বলছেন, স্ট্যাটাস থেকে বোঝা যায় তিনি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এর ফল কী হতে পারে সে বিষয়ে তিনি ততক্ষণে অবহিত।
আহত খাদিজা বেগম নার্গিস বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ৭২ ঘন্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। খাদিজা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামিক ইতিহাস বিভাগের ডিগ্রির শিক্ষার্থী ও নগরীর আখালিয়া এলাকার মাশুক মিয়ার মেয়ে। তার ওপর হামলাকারী বদরুল ইসলাম শাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জোছনা বাজারের বাসিন্দা।
২১ সেপ্টেম্বর বদরুল তার স্ট্যাটাসে লিখেছে, ‘বিশ্বাসঘাতকতার যন্ত্রণা হজম করা খুব কঠিন। তবে বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করে দিতে পারা সর্বোচ্চ মহানুভবতার পরিচায়ক। সুন্দর ব্যবহার প্রদর্শনের মাধ্যমে যারা বিশ্বাসঘাতকদের বিশ্বস্ত করে গড়ে তুলতে পারেন; তারাই মানবতার মহান শিক্ষক। তা-ই যেন করতে পারি। বিশ্ব শান্তি দিবসে বিশ্বস্ত আর বিশ্বাসঘাতক দুই সম্প্রদায়ের লোকদের জন্যই শান্তি কামনা করি। আল্লাহুম্মা আমিন-ছুম্মা আমিন।’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আসিফ বলেন, ‘তার স্ট্যাটাসের বেশিরভাগই রাজনৈতিক। তবে মাঝে মাঝে দেওয়া কিছু স্ট্যাটাসে মনে হয়, সে কোনও একটি বিষয় নিয়ে বিচলিত আছে। এবং নিজেকে স্থির রাখতে নানা কথা বলছে। সর্বশেষ ৩ অক্টোবর ঘটনার দেড়ঘন্টা আগে যে স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয়েছে সেটি থেকে এটা স্পষ্ট যে, সে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে তার ক্ষমা প্রার্থনা করতে হচ্ছে। সে এধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটানোর সিদ্ধান্ত ততক্ষণে নিয়ে ফেলেছে বলে অনুমান করি।’
সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন বলেন, ‘তার এই নৃশংসতার কোনও ব্যাখ্যা নেই। পরবর্তীতে সে যে প্রেম বা সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছে, সেটাতেও বিষয়টি ব্যাখ্যা হয় না। সে যা করেছে সেটা তার পারিবারিক ও সাংগঠনিক বেড়ে ওঠার ব্যর্থতা। তার আচরণ থেকে মনে হয় ঠাণ্ডা মাথায় সে সিদ্ধান্ত নিয়েই কাজটি করেছে ‘
আহত খাদিজা বেগম নার্গিসকে সোমবার বিকেলে এমসি কলেজের পুকুর পাড়ে কথিত প্রেমিক ছাত্রলীগ নেতা বদরুল হামলা করে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মধ্যরাত পর্যন্ত সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অস্ত্রোপচার হলেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মঙ্গলবার ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর দৃশ্য দূর থেকে ভিডিও ধারণ করলেও কেউ এগিয়ে যায়নি। পুলিশ জানায়, তারা ভিডিওটি দেখেছেন এবং কোপানোর ধরন দেখে বোঝা যায় হত্যা করার উদ্দেশ্যেই কোপানো হচ্ছে।
ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী একজনের মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সোমবার রাতেই প্রকাশ পেয়েছে। ঘটনার সময় কয়েকজন যুবক এগিয়ে গেলেও আবার তাদের দৌড়ে পালিয়ে আসতে দেখা গেছে। এসময় ভিডিও ধারণকারী নারী কণ্ঠে শুধু ‘ও মাই গড…ও মাই গড’ বলতে শোনা যায় এবং ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছে,হামলাকারীকে স্থানীয়রা আটকের পর গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সপোর্দ করে। -বাংলা ট্রিবিউন।
০৫ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম