বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:১৩:৪৩

নার্গিসের রুমের পাশে জায়নামাজ বিছিয়ে পড়ে আছেন চাচা করম আলী

নার্গিসের রুমের পাশে জায়নামাজ বিছিয়ে পড়ে আছেন চাচা করম আলী

জাকিয়া আহমেদ: নার্গিসকে তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছেন করম আলী। নিজের সেই ছাত্রী লাইফ সাপোর্টে আছে শুনে সিলেট থেকে তিনি ছুটে এসেছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের সামনে এসেই জড়িয়ে ধরলেন নার্গিসের চাচা আব্দুল কুদ্দুসকে। দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।এ সময় নার্গিসের চাচা আব্দুল কুদ্দুস কেবল ‘আমার বাচ্চা আমার বাচ্চা’ বলে আহাজারি করছিলেন।

কিছুক্ষণ মৌন থাকার পর ওই শিক্ষক বলেন, ‘নার্গিসের এই অবস্থার জন্য যে দায়ী, তার উপযুক্ত শাস্তি চাই আমি। এটা কেমন সভ্য দেশ, কোন সভ্য সমাজ যে, একজন মানুষ কারও প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে তাকে এই রকম নৃশংসতার শিকার হতে হবে! কোনও স্বাধীন দেশে এটা হতে পারে না, আমার এই ছাত্রীর কাছে আমি কী জবাব দেবো?’

প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম সিলেটের এমসি কলেজের পুকুর পাড়ে নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। স্কয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের সামনে থেকে নড়ছেন না নার্গিসের চাচা ও মামা। তারাই নার্গিসকে সিলেট থেকে ঢাকায় এনেছেন। নার্গিসের বাবা সৌদি আরবে থাকেন। তিন-চার দিনের মধ্যেই ঢাকায় আসার কথা তার।

আর মা মনোয়ারা বেগম জানেন না, তার মেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে কি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। নার্গিসের মামা আব্দুল বাসেত বলেন, ‘একটু পরপরই বোনটা ফোন দেয়; মেয়েরে খোঁজে। তার সঙ্গে কথা বলতে চায়। কিন্তু তারে কেমনে বলি, মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আর কোনওদিন কথা বলবে কিনা, সেটাও জানি না।’

নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের পাশের একটা ফাঁকা জায়গায় জায়নামাজ বিছিয়ে পড়ে থাকেন চাচা আব্দুল কুদ্দুস। যিনি ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন নার্গিসকে। তিনি বলেন, ‘যদি মেয়েটা কাকা বলে ডাকে-এই আশায় বুক বেঁধে আছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি নার্গিসকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে সুস্থ থাকতে পারবো না; অজ্ঞান হয়ে যাবো। শুধু বলবো, এই মেয়ের মতো আমার পরিবারে কোনও মানুষ নাই-আর কিছু বলার নাই আমার।’

চাচা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘লম্বা বক্তৃতা দেওয়ার মতো অবস্থা আমার নাই। শুধু আমিই জানি আমরা কী হারাচ্ছি।’ বদরুলকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘যার ভেতরে মনুষত্ববোধ আছে, সে এ ধরনের কাজ করতে পারে না।’

মামা আব্দুল বাসেত বলেন, ‘মিছিল, মিটিং, মানবন্ধন- এগুলোই শুধু হবে। কিন্তু বিচার কোথায়? এভাবে যদি মেয়েদের মারা হয় তাহলে তো মেয়েরা ঘরের বাইরে যেতে পারবে না; ঘরে বসে থাকতে হবে। মেয়েদের স্বাধীনতা কিভাবে দেবে এই রাষ্ট্র?’ তিনি বলেন, ‘এই দেশ স্বাধীন দেশ-স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার সবার আছে। এ দেশ শুধু বদরুলের না, নার্গিসেরও। সেই দেশে নার্গিসের কেন এই অবস্থা হবে?’-বাংলা ট্রিবিউন
৬ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে