বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০:২০

ইসি পুনর্গঠনে বিএনপির পরামর্শের বিষয়ে কি ভাবছে আওয়ামী লীগ?

ইসি পুনর্গঠনে বিএনপির পরামর্শের বিষয়ে কি ভাবছে আওয়ামী লীগ?

পাভেল হায়দার চৌধুরী : নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির পরামর্শ নেওয়ার বিষয়টিকে জরুরি মনে করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইস্যুটি নিয়ে দলটি অতিমাত্রায় দর কষাকষি ও শর্তের খেলায় জড়ালে সরকার তাদের পরামর্শ নেবে না। এই ইস্যুতে বিভিন্ন কৌশলে বিএনপিকে এড়িয়ে চলতে পারে সরকার। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস মিলেছে।    

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তার আগে নতুন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। গতবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে সবার মতামত নিয়ে করেন। এবার কোন প্রক্রিয়ায় নতুন কমিশন গঠন করা হবে—তা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকরা জানিয়েছেন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে এবং তাদের মতামত গ্রহণ করে এবার নতুন নির্বাচন কমিশন করা হবে।  

এদিকে গত ২ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গ উঠলে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে বিএনপির পরামর্শ শুনলে তো ও রকম নির্বাচন কমিমন করতে হবে-যারা ভুয়া ভোটার করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন আপনারা কি ওই রকম নির্বাচন কমিশন চান? আওয়ামী লীগ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, মূলত ওই দিন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

জানা গেছে, বিএনপির অতীত ইতিহাস টেনে ও আগুনসন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো সামনে টেনে এনে এবং বিএনপি বিরোধী দলে নেই এমন কিছু যুক্তি তুলে বিএনপিকে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না করার মতো সিদ্ধান্তও নিতে পারে আওয়ামী লীগ। বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দল তাই তাদের পরামর্শের প্রয়োজন নেই এ বিষয়টি ‘স্ট্যাবলিস্ট’ করে তাদের এড়িয়ে যেতে পারে ক্ষমতাসীনরা। একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্বস্ত সূত্র দাবি করে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপিকে যুক্ত না করার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক থাকলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ফেলবে ক্ষমতাসীনরা। জামায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সংগঠন হওয়ায় তাদের তো এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত করবে না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে দর কষাকষি ও বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে বিএনপি জড়ালে আওয়ামী লীগ কঠোর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

গত রবিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন শেষে সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এ প্রসঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যেন মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অটুট থাকে, মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হোক তা আমরা চাই না। তাতে গণতন্ত্র দুর্বল হবে।’

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ব্যাপারে সেই বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। তাই যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন করা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এক্ষেত্রে কার পরামর্শ নেওয়া হলো, বা কার নেওয়া হলো না—এটা বড় বিষয় নয়।’  

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ম অনুযায়ী হবে। প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি ঠিক করবেন কিভাবে কমিশন গঠন করা হবে। নিয়মের ভেতরে যা করার, তাই করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। এটা সবাই জানে। তাদের গঠিত কমিশন ভুয়া ভোটার বানিয়েছে। মাগুরা মার্কা উপনির্বাচন করেছে। এক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ নেওয়া কতটা যৌক্তিক হবে, তা ভাবতে হবে।’

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একটি বক্তব্য দিয়েছেন। আমি মনে করি সেটাই সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থান।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এ ব্যাপারে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। অনুসরণ করা পদ্ধতিতে বিএনপির পরামর্শ গ্রহণ প্রয়োজন না হলে নেওয়া হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো এখন জনবিচ্ছিন্ন দল। তারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বিএনপির আমলে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ইতিহাস তো খুবই কলঙ্কজনক। তাদের পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন ভুয়া ভোটার তালিকা করেছে। তাদের আমলে হওয়া উপনির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
০৬ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে