উদিসা ইসলাম : কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করেও মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন বাদী হামিদুল ইসলাম। মামলাটি স্থানীয় আদালত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর বাদী এধরনের একটি আবেদন করেছেন।
ইতোমধ্যে মামলাটি তদন্ত সংস্থায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। তবে মামলা থেকে বাদীর সরে যাওয়ার খবর পেয়েও তারা কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না বলেও জানা গেছে। এদিকে, বাদী ক্ষমতাশালী এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে কোনও সুরক্ষা পাননি বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। তারা বলছেন, ‘ক্ষমতার দাপট’ এর কারণে হয়তো মামলা থেকে বাদীকে সরে আসতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাবুল চিশতী একজন সুপরিচিত শিল্পপতি ও ফারমার্স ব্যাঙ্কের উদ্যোক্তাও।
২০০৯ সালের ৫ জুলাই বাবুল চিশতীসহ ১৩ জন আলবদর-রাজাকারের নাম উল্লেখ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের ভাই হামিদুল ইসলাম অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।ওই বছরের ১৩ জুলাই এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে ১৪ জুলাই শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানার ওসি মামলাটি আদালতে পাঠান। এরপর গতবছর ২৯ ডিসেম্বর ধার্য তারিখে ঝিনাইগাতি আমলি আদালতের বিচারিক হাকিম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিবেচনায় মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আদেশ দেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই অভিযোগ গত ডিসেম্বরে ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দিলে জামালপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, ‘ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে শেরপুরের ঝিনাইগাতি থানায় বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদী সেই মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদনও করেছেন।’
যদিও জামালপুরের বক্সি বাজারের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তকরণ ও অমুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্নকরণ কমিটির সভাপতি গোলাম মাওলা স্বাক্ষরিত ২০১০ সালের ৭ মে তারিখের একটি কাগজে লেখা, ‘মাহবুবুল হক বাবলু চিশতী ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জে দেড় মাস ছিলেন এবং তার হাতিয়ার ছিল এসএমজি। উক্ত হাতিয়ারসহ তিনি পাকবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন এবং অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষকে প্রত্যক্ষ গুলি করে হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের মতো অনেক মানবতাবিরোধী কর্মে লিপ্ত হন।তার ভাই মাহবুবুল হক হিরু চিশতী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিবার্তা নম্বর ০১১৩০৭০৩১৪ এবং বাংলাদেশ গেজেট নং ২০৯০। এসব কাগজপত্র দৃষ্টে হিরু চিশতি সরকারি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে থাকেন কিন্তু বাবুল চিশতী ওই সব নম্বরের পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেন এবং পরিচয় দিয়ে থাকে। বাবলু চিশতীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যুদ্ধাপরাধী মামলা নিম্ন আদালতে বিদ্যমান। বর্তমানে তিনি মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। এতথ্য সম্বলিত কাগজে এই বিতর্কিত এবং অমুক্তিযোদ্ধাকে তালিকা থেকে বাতিল করার জন্য অত্র কামটির সুপারিশসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় ।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাবুল চিশতী এবং তার সহযোগীরা আলবদর-রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর বাবুল চিশতী এবং তার সহযোগীদের সহায়তায় ঝিনাইগাতী উপজেলার নাচুনমুহুরী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানকে ধরে আহমদনগর পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে, নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের বাবা কাংশা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. মোখলেছুর রহমানকে বাবুল চিশতীর নেতৃত্বে অপহরণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে ছেলের অংশগ্রহণের অভিযোগে তাকে যুদ্ধের শেষ সময়ে ৯ ডিসেম্বর বকশীগঞ্জ উপজেলার গরুহাটি এলাকায় বটগাছের সঙ্গে বেঁধে হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে নৃশংস নির্যাতনের পর গুলিতে হত্যা করা হয়।
তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘আমাদের কাছে মামলা আছে। কিন্তু তদন্ত এখনও শুরু হয়নি। তিনি তো নিজে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। তদন্ত করলে জানা যাবে আসল ঘটনা।তবে আমরা জানি, বাদী ইতোমধ্যে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।’
বিবাদী ক্ষমতাশালী হওয়ায় মামলা তুলে নিতে বাধ্য করতে পারেন কিনা প্রশ্নে হান্নান খান বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। আমরা বেশ কিছু মামলার কাজ করছি। এখনও এমামলা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এদিকে, মামলা দায়েরের পর বাবুল চিশতী ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন।পরবর্তীতে ২০১০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। -বাংলা ট্রিবিউন।
০৮ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম