রবিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:২২:৪৮

যে পরিকল্পনা করেছিল গাজীপুরের নিহত জঙ্গিরা

যে পরিকল্পনা করেছিল গাজীপুরের নিহত জঙ্গিরা

জামাল উদ্দিন ও আমানুর রহমান রনি: গুলশান হামলার মতোই বিদেশি হত্যাসহ বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল গাজীপুরে নিহত জঙ্গিরা। একইসঙ্গে এসব জঙ্গি ছিল আত্মঘাতী দলের সদস্য। বিদেশি হত্যাসহ মার্কেটপ্লেসে হামলা চালানোর পরিকল্পনাও ছিল তাদের। এমনকি সাভারের আশুলিয়া থেকে শনিবার রাতে নব্য জেএমবি’র অর্থদাতা আব্দুর রহমানকে ৩০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব।

শনিবার পুলিশ ও র‌্যাবের জঙ্গিবিরোধী সিরিজ অভিযানে নব্য জেএমবি’র আত্মঘাতী দলের জঙ্গিরা নিহত ও অর্থদাতা গ্রেফতার হওয়ায় আবারও মুখথুবড়ে পড়েছে নব্য জেএমবি। একই সঙ্গে বড় ধরনের নাশকতার হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে বলে মনে করেন জঙ্গি দমনে নিয়োজিত পুলিশ ও র‌্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান,নব্য জেএমবি’র শীর্ষ সংগঠক ও অর্থের যোগানদাতা তামিম আহমেদ চৌধুরী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জাহিদুল ইসলাম নিহত হওয়ার পর নব্য জেএমবি অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু নেপথ্যে থাকা অর্থদাতারা নিষিদ্ধ এ জঙ্গি সংগঠনটির অন্য সদস্যদের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছিল।

একইসঙ্গে বাইরে পালিয়ে থাকা জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হয়ে তাদের নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে তাদের শেষ চেষ্টাও অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে গেল।

গুলশান হামলার পর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অপারেশন স্টর্ম-২৬ অভিযানে রাজধানীর কল্যাণপুরে নয় জঙ্গি নিহত হয়। এরপর নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া অভিযানে তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ নিহত হয় আরও তিন শীর্ষ জঙ্গি।

এরপর রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত হয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর জাহিদুল ইসলাম। যিনি নব্য জেএমবি’র সামরিক প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতো। তাকে নব্য জেএমবি’র সদস্যরা ডাকতো ‘মেজর স্যার’ বলে।

এরপর আজিমপুর অভিযানের সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে তানভীর কাদেরী নামে আরেক শীর্ষ জঙ্গি নিজেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে আত্মহত্যা করে। সে ছিল একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। যার কাজ ছিল নব্য জেএমবি’র আস্তানা তৈরিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়া।

সর্বশেষ শনিবার গাজীপুরের হারিনাল,পাতারটেক ও টাঙ্গাইলের কাগমারায় নব্য জেএমবি’র আরেক সংগঠক আকাশসহ ১১ জন নিহত হয়েছে। একই দিনে সাভারের আশুলিয়া একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। তখন ওই বাড়ির পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে পালানোর চেষ্টাকালে র‌্যাবের হাতে আটক হয় সংগঠনটির মূল অর্থদাতা আব্দুর রহমান। রাতে হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে মূল সংগঠকরা নিহত হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ে নব্য জেএমবি’র সদস্যরা। পলাতক জঙ্গিরা এসবের প্রতিশোধ নিতেই আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল বলে মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, গাজীপুর অভিযানে নিহত আকাশ শোলাকিয়া হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল।

এছাড়া নব্য জেএমবি’র ঢাকা বিভাগের কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিল সে। গুলশান হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত সকল জঙ্গিই একই গ্রুপের বলে জানান তিনি। গাজীপুর অভিযানের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, 'তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর ফরিদুল ইসলাম আকাশের নেতৃত্বেই নব্য জেএমবি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল।

গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য পেয়েই পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। তবে অভিযানের আগে জঙ্গিদের বার বার আত্মসমর্পণ করতে বলা  হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা না শুনে উল্টো পুলিশের ওপর গ্রেনেড ছুড়ে মারে এবং গুলি করে। পুলিশও আত্মরক্ষায় আক্রমণ চালাতে বাধ্য হয়। অভিযান শেষে ভবনের দ্বিতীয় তলায় আকাশসহ সাত জঙ্গির লাশ পাওয়া যায়।-বাংলাট্রিবিউন

০৯ অক্টোবর, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/ফিরোজ/এফএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে