উদিসা ইসলাম : গত দুই বছরে ভাগ্যের ফেরে সব হারানো ফারজানা বেঁচে উঠেছিল খালা-খালুর সংস্পর্শে। পরিবারের ১০ সদস্যকে একসঙ্গে চোখের সামনে নিহত হতে দেখা এই মেয়ে বাঁচার তীব্র আকাঙ্খা নিয়েও জীবনযুদ্ধে হারতে বসেছে। তবে সবাই হাত বাড়িয়ে দিলে মেয়েটি আবারও মাথা তুলে দাঁড়াবে- এই আকাঙ্খায় চিকিৎসা করিয়ে যাচ্ছেন তার একমাত্র সহায় খালা-খালু।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ১০তলা ভবনের ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৬ নম্বর বিছানাটি গত এক সপ্তাহ ধরে ফারজানার ঠিকানা। জীবনযুদ্ধে জিততে এই তরুণী লড়ে চলেছে বটে, কিন্তু ভয়ংকর সব অসুখে শরীর ক্লান্ত। ফারজানা জানে না, তার কী হয়েছে। কিন্তু শরীরের যন্ত্রণা বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত- সে ভালো নেই।
২০১৪ সালের জুনে মিরপুরের কালশীতে বিহারি ক্যাম্পে ভয়াবহ সহিংসতায় লাগানো অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের ৯ সদস্য মারা যাওয়ার স্মৃতি ফিকে হয়ে আসলেও ফারজানা সেই পরিবারের একমাত্র সাক্ষী। সেদিনের আগুনে সে হারিয়েছে মা, তিন ভাই, তিন বোন, এক ভাইয়ের বউ ও ভাগ্নে। সেই পরিবারের একমাত্র মেয়ে ফারজানা গুরুতরভাবে দগ্ধ হলেও প্রাণে বেঁচে যায়। সেই ক্ষত না মুছতেই ফারজানার বাবা নিহত হন বাসের ধাক্কায়।
গত ঈদের পর থেকে হঠাৎ করেই ফারজানা অসুস্থ হতে থাকে। অবস্থা গুরুতর হলে ঢামেক নেওয়া হয় তাকে। কিন্তু খরচ? যে রোগ হয়েছে, তা সারবে কিনা সন্দেহ তো আছেই, তার ওপর আবার ভালো থাকতে হলে দরকার লাখ-লাখ টাকা। পরিবারের সব সদস্যদের হারানো ফারজানা তাহলে বাঁচবে কী আশায়!
তার শারীরিক জটিলতা নিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, মোটাদাগে সে কিডনির জটিলতায় ভুগছে। ফারজানার রোগটি হচ্ছে ‘সিস্টেমেটিক লুপাস ইরিথেম্যাটোসাস’ (Systemic Lupus Erythematosus) বা সংক্ষেপে ‘এসএলই’। অটো ইমিউন সংক্রান্ত রোগ। শরীরের নানা জায়গায় হয়। ফারজানার হয়েছে কিডনিতে।
ফারজানার দেখাশোনা করছেন তার খালা-খালু। খালু আসলাম বলেন, ‘এই মেয়ের এখন বাবাও আমি, মা-ও আমি। গত দুই বছর ধরে আদরে মানুষ করে যাচ্ছি। এই বিপর্যয় কীভাবে সামলাবো জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে রোগ হয়েছে, আমরা তো তার নামও জানি না। আর ডাক্তাররা যে খরচ বলছেন, সেটা জোগাড় করা আরও সম্ভব না।’
ব্যস্ততায় বেশিক্ষণ কথা বলতে না পারলেও তিনি জানান, ‘আমি আর আমার স্ত্রী হাসপাতালে সময় দিচ্ছি। কিন্তু সব কাজ ফেলে এখানে পড়ে থাকাও সম্ভব না, সাধ্যও নেই। চিকিৎসাভার কেউ বহন করলে মেয়েটিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম।’ কথাগুলো বলার সময় ধরা গলায় তিনি বলেন, ‘এ রোগ একশ জনে একজন নারীর হয় বলে শুনছি। আমরা মেয়েটাকে বাঁচাতে চাই।’
সবসময় ফারজানার খোঁজ রাখার পাশাপাশি আসলামকে সহযোগিতা করছেন, এমন একজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই দম্পতি যা করণীয়, করছেন। কিন্তু এখন অনেক অর্থ দরকার। আর দরকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফারজানার চিকিৎসা বিষয়ে খোঁজখবর রাখা। যদি কেউ এগিয়ে আসেন।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
১০ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম