বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৩৬:৫০

উগ্রপন্থী আখ্যা দিয়ে বিএনপিতে ধরপাকড়

উগ্রপন্থী আখ্যা দিয়ে বিএনপিতে ধরপাকড়

হায়দার আলী ও শফিক সাফি : রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের তালিকা করে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। তালিকাভুক্ত এই নেতাকর্মীদের বলা হচ্ছে ‘উগ্রপন্থী’। জানা গেছে, নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে কিংবা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে- বিএনপির এমন নেতাকর্মীদেরই উগ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া বিগত সময়ে দলটির যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে, তাদের ধরপাকড় চলছে। বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গেল এক সপ্তাহে সারা দেশে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলাপর্যায়ের অনেক সিনিয়র নেতা রয়েছেন। কেবল গ্রেপ্তারই নয়, স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নাশকতার নানা অভিযোগে মামলা করা হচ্ছে।

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, দল পুনর্গঠন করে যাতে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করা হয়েছে।

উগ্রপন্থী আখ্যা দিয়ে বিএনপিতে ধরপাকড়
এতে নতুন করে বিপাকে পড়েছে বিএনপি। মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীরা আবারও ঘরছাড়া। গ্রেপ্তার আতঙ্কে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে সারা দেশের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিএনপির চেয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরাই গ্রেপ্তার হচ্ছে বেশি। জানা গেছে, গত মাসের করা ২০ দলীয় জোটের নাশকতাকারী নেতাকর্মীদের আরেকটি তালিকা ধরেই জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলেন, আমরা অত্যন্ত বিস্ময় ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি, সম্প্রতি ইতালি ও জাপানের নাগরিকের নৃশংস, ঘৃণ্য খুনের পরপরই সরকার এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত না করেই বিরোধী দলকে ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য অপপ্রচার শুরু করেছে এবং বিরোধী দল ও মতকে দমন করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরসহ কর্মীদের গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। সরকার বরাবরের মতোই তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে বিরোধী দল ও মতকে দমন করতে চাইছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সম্প্রতি দল পুনর্গঠনে খালেদা জিয়ার ঘোষণা আসার পরই সরকার তা বাধাগ্রস্ত করতে এই ধরপাকড় শুরু করেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হামলা-মামলা সরকারের পরিকল্পনারই অংশ।

বিএনপির চলমান পুনর্গঠন কার্যক্রমে সরকার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ধরপাকড় করছে উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গুরুতর অসুস্থ তরিকুল ইসলামসহ যশোরের নেতাদের বিরুদ্ধে একটি পরিপূর্ণ কাল্পনিক গল্প বানিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, মামলা দিয়ে সরকার বিএনপির কার্যক্রম বন্ধের কৌশল নিয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতেই বিএনপি নেতাদের তালিকা ধরে গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে সরকার। পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ে নেতারা এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমনকি জামিনের জন্য আবেদন করলেও আদালত জামিন দিচ্ছেন না।

দলটির সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম এই প্রতিবেদকে বলেন, গত কয়েক দিনে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি নতুন করে মামলায় জড়ানো হয়েছে হাজারখানেক নেতাকর্মীকে।

ছাত্রদলের সহসভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, নতুন ও পুরনো মামলা মিলিয়ে ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান খোকন, দক্ষিণখান থানা সভাপতি নবী হোসেনসহ সারা দেশে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে নতুন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যুবদলের দপ্তরও বলছে, তাদের সংগঠনের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রাজধানীর শাহ আলী থানা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মো. হানিফ মিয়া নাশকতার মামলায় চার মাস জেল খেটে গত জুলাই মাসে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়েছেন। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা দুটিই পরিবারের সঙ্গে উদ্যাপন করেছেন, কিন্তু ঈদুল আজহার পর থেকেই শাহ আলীর জে ব্লকের বাড়িতে তিনি ঘুমাতে পারছেন না; ঢাকার বাইরে আত্মগোপন করে আছেন। মোবাইল ফোনে কথা হয় যুবদল নেতা হানিফ মিয়ার সঙ্গে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, নাশকতার মামলায় জেল খেটে জামিনে বেরিয়েও শান্তি নেই। ঈদের পর থেকে পুলিশ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

শাহ আলী থানার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম কবির বলেন, জামায়াত কিংবা জঙ্গিরা কোনো ঘটনা ঘটালেই সব দোষ আমাদের ওপর এসে পড়ে। দুই বিদেশি হত্যার পর থেকে পুলিশ তালিকা ধরে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। আটকের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আছি।

খিলক্ষেত থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানায়, সম্প্রতি নির্দেশ পেয়ে খিলক্ষেত থানার পুলিশ তাদের ভাষায় উগ্র বিএনপি নেতাদের তালিকা তৈরি করে। বিএনপির ১২ জনের নাম উল্লেখ করে সেই তালিকা গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া হয়। এখন সেই তালিকা ধরেই মাঠে নেমেছে পুলিশ। খবর পেয়ে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন বিএনপির সব স্তরের বেশির ভাগ নেতা।
খিলক্ষেত থানা বিএনপির সভাপতি শাহিনুর আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশ বিএনপির নেতাদের কোনো তালিকা করছে কি না জানি না। তবে ঈদের পর পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান জোরালো হয়েছে। আমাদের থানার বেশির ভাগ নেতাই এখন এলাকাছাড়া।

খিলক্ষেত থানার ওসি শহিদুল হক প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের উগ্র নেতাকর্মীদের ধরতে এ থানার পুলিশ বুধবার (মঙ্গলবার) থেকেই অভিযানে নেমেছে। যাদের তালিকা করা হয়েছে তারা সবাই পালিয়েছে। আমার জানা মতে, রাজধানীর প্রতিটি থানাতেই এমন অভিযান চালানো হচ্ছে। সরকারকে বিপদে ফেলার মতো কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা অপরাধ যাতে রাজধানীতে সংঘটিত হতে না পারে, সেই জন্যই তালিকা ধরে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

শেরে বাংলানগর থানা শ্রমিক দলের সভাপতি মো. সেলিম মিয়া অজ্ঞাত স্থান থেকে বুধবার এই প্রতিবেদককে বলেন, কোনো কিছু ঘটলেই পুলিশ এখন আমাদের খোঁজে। আগে চোর-ডাকাত আর জঙ্গিদের খুঁজত, এখন বিএনপি নেতাদের খোঁজে। জীবনের ভয়ে এখন পালিয়ে আছি। শুধু আমিই না, আমাদের ওয়ার্ডের সব নেতাই পালিয়েছেন।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহামেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, যারা নাশকতা ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযান চালানো হচ্ছে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

বিএনপির দপ্তর সূত্র আরো জানায়, গত সোমবার দুপুরে ভোলায় বিএনপির একটি সম্মেলন থেকে ২১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ যশোর জেলা বিএনপির ৩৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় নাশকতার মামলা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, শহর বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা কমিটির সহসভাপতি রফিকুর রহমান তোতন, জাফর সাদিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন। দুই বিদেশি হত্যার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের ছোট ভাই ও রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ উন নবী খান বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি ইসরাইল মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শামীমকে নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ২০১৪ সালে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় আত্মসমর্পণ করলে আদালত গত সোমবার যশোর সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সল আহমদ এবং ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে কারাগারে পাঠান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দুই বিদেশি হত্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দোষারোপমূলক বক্তব্য প্রকৃত ঘটনা থেকে দৃষ্টি অন্যত্র ফেরানোর নামান্তর। তিনি বলেন, দেশে দুজন বিদেশি নিহত হয়েছে- এটা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। এই হত্যার সুযোগে বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করা এটা আবার দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নেওয়ার নামান্তর। কেবল তাই নয়, কোনো তদন্ত ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী যেভাবে আমাদের দল ও নেতাদের অভিযুক্ত করেছেন, তাতে মনে হয়, দেশে তদন্তকারী সংস্থা বা কোনো বিচারালয়ের প্রয়োজন হবে না। এখন সরকার তদন্ত ছাড়াই আসামি নির্ধারণ করবে এবং তাদের সাজা দিয়ে দেবে।

ধরপাকড়ে জামায়াত বেশি
খুলনা জেলা জামায়াতের আমিরসহ তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন জেলা আমির মাওলানা ইমরান হোসাইন, সদর থানার আমির মাওলানা ওয়ালি উল্লাহ ও দৌলতপুর থানার সাবেক আমির অধ্যাপক আল ফিদা হোসেন। খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একরামুল হাবিব বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

সাতক্ষীরায় জামায়াতের ১০ জন আটক হয়েছে। এর মধ্যে আশাশুনিতে তিনজন, কলারোয়ায় পাঁচজন ও পাটকেলঘাটা থানায় দুজন রয়েছে। তাঁরা সবাই বিভিন্ন মামলার আসামি।

সিলেট বিভাগে গত ১০ দিনে জামায়াত-শিবিরের ২৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সিলেটে দুজন, সুনামগঞ্জে ছয়জন, মৌলভীবাজারে দুজন ও হবিগঞ্জে ১৩ জন রয়েছে। আটকৃতদের বেশির ভাগই পুরনো মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। বিএনপি-জামায়াতের সন্দেহভাজন নেতা-কর্মীদের ওপর নজরদারি জোরদার করেছে পুলিশ।

মাগুরায় বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন শ্রীপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ মেম্বার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সেলিম শেখ, মোজাম্মেল শেখ ও অনুত বিশ্বাস। তাঁরা নাশকতার উদ্দেশে জোটবদ্ধ হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন সহকারী পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায়।

নীলফামারীতে জামায়াত-শিবিরের পাঁচ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

নড়াইলে জেলা যুবদলের সভাপতি মো. মশিয়ার রহমানকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার মামলা রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার রকিবুল ইসলাম।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম মাস্টারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাশকতামূলক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ত্রিশালের ওসি মনিরুজ্জামান।

বরিশালে পুলিশ অভিযান শুরু হওয়ায় গত তিন দিন ধরে মাঠে বিএনপি-জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যাচ্ছে না।
রাজশাহী বিভাগে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মঙ্গলবার বগুড়া জেলা যুবদলের সভাপতি শিপার আল বখতিয়ারসহ তিন-চারজন নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। একই দিন রানীনগর উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল্লাকে আটক করে পুলিশ।

রংপুর বিভাগে গ্রেপ্তার-ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার জাপানি নাগরিক হত্যার পর থেকে এ পর্যন্ত রংপুরে বিএনপির আটজন এবং জামায়াতের ৯ জন নেতা-কর্মীকে আটক-গ্রেপ্তার করা হয়। কুড়িগ্রামের চিলমারীর রমনা ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মফিজল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানকে সোমবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পঞ্চগড়ে গত চার দিনে বিএনপি-জামায়াতের তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নীলফামারীর জলঢাকা ও ডোমারের জামায়াত-শিবিরের সাত কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ। এ কারণে দল দুটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের অনেককেই ধরে পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। আবার বিদেশ-ফেরত অনেক যুবককে ধরে ‘জামায়াত-শিবির’কে অর্থায়ন করছে এমন অভিযোগে আটক করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যদিও পুলিশ বলছে, নাশকতার পরিকল্পনা করছে এমন আসামিদের ধরা হচ্ছে। বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় সীতাকুণ্ড উপজেলা জামায়াতের আমির শফিকুল মাওলাকে (৫০)। তাঁর বিরুদ্ধে ৪০টি মামলা আছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হাসান। অক্টোবর মাসের প্রথম সাত দিনে জেলার সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া ও সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ এক বিএনপি নেতা ও ২৪ জন জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীকে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।

সবশেষ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা পুলিশ বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মোবারক হোসেন এবং ছয়জন জামায়াত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এই নিয়ে এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ৩২ জনে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ নাঈমুল হাসান বলেন, রাতে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি নাশকতার মামলা আছে।-কালের কণ্ঠ
৮ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে