শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:৩৬:১৮

সরকার ও দলকে আলাদা করার প্রক্রিয়া শুরু

সরকার ও দলকে আলাদা করার প্রক্রিয়া শুরু

রফিকুল ইসলাম রনি : সরকার ও দলকে আলাদা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সরকার পরিচালনা করবেন। আর সংগঠন শক্তিশালী করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। দলীয় নেতারা জানান, যারা মন্ত্রিসভায় থাকবেন, তাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হচ্ছে না।

তবে আঞ্চলিকতার কারণে কাউকে কাউকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হতে পারে। যারা মন্ত্রী ও একই সঙ্গে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের বিষয়ে নিকট ভবিষ্যতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে দলে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হচ্ছে। যাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হবে না, তাদের মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদ্য ঘোষিত চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের একজনও মন্ত্রিসভায় নেই। এর মধ্যে দীপু মনি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাহাঙ্গীর কবির নানক ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী। অবশ্য প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। আট সাংগঠনিক সম্পাদকের কেউ মন্ত্রিসভার সদস্য নন। বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। তাকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হয়নি। সম্পাদকমণ্ডলীর ঘোষিত ২২টি পদধারীর কেউ মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নন। বরং বিগত কমিটিতে থাকা চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কোনো পদে নেই।

ধারণা করা হচ্ছে, দলকে গতিশীল ও সরকারের কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করতেই এ নীতি নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের গত কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। ঘোষিত কমিটিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক পদ পেয়েছেন টিপু মুন্সী। আর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিলকে। গত কমিটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকের পদে ছিলেন ইয়াফেস ওসমান। এ কমিটিতে এখনো কাউকে নেওয়া হয়নি।

অবশ্য ১৪ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দলীয় পদ এবং সরকার দুই জায়গায়ই আছেন। পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। দলীয় সূত্রমতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেছে দলের উচ্চ পর্যায়। সে কারণেই জাতীয় সম্মেলনের এক দিন পর জেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিয় সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। কমিটি ঘোষণার পর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর শুরু হবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা দলীয় পদে রয়েছেন তারা কেবল দলেই সময় দেবেন। তাদের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হবে না। আর যারা মন্ত্রিসভায় থাকবেন, তারা দেশ পরিচালনা করবেন। আওয়ামী লীগের ঘোষিত ৪৩টি পদের মধ্যে ২৭টিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কেউ মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নেই। আওয়ামী লীগের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, দল ও সরকারকে আলাদা করার একটা চিন্তা আগে থেকেই আওয়ামী লীগে ছিল। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটা একটু কঠিন কাজ। এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে ওই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ক্ষমতায় থাকার কারণে দল সরকারে মিশে গেছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ে বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। অধিকাংশ স্থানেই মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভালো সম্পর্ক নেই। তাই একসঙ্গে দল ও সরকারে দুটি পদে না রাখার বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন
২৮ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি‌ ‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে