শুক্রবার, ০৪ নভেম্বর, ২০১৬, ০৪:০৫:১৮

মাঠে নামার কৌশল খুঁজছে বিএনপি

মাঠে নামার কৌশল খুঁজছে বিএনপি

মোশাররফ বাবলু: সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে কয়েক দফা ব্যর্থতার পর আবারও মাঠে নামার পথ ও কৌশল খুঁজছে বিএনপি। অবশ্য কাউন্সিল করার পরও সংগঠনটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অগোছালোই রয়ে গেছে। দলেও রয়েছে নানা মতবিরোধ। এ কারণে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় রয়েছে হাইকমান্ড। দলের নেতারা অবশ্য মনে করছেন, সাংগঠনিক কার্যক্রমের পথে এসব সমস্যা পর্যায়ক্রমে দূর করা যাবে।

মাঠে নামার প্রক্রিয়ায় বিএনপি এখন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও সার্চ কমিটি গঠনের রূপরেখা প্রণয়ন করছে। সরকারকে এ রূপরেখা দেওয়ার পাশাপাশি দলটি আগামী ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী জনমত গঠনের লক্ষ্যে জেলা সফর করবে। নতুন বছরের শুরু থেকেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ দাবি নিয়ে বিএনপি মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক নেতা।

যেসব জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে বিএনপি রাজপথে সক্রিয় হতে চাইছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গরিবদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণে অনিয়ম ছাড়াও বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম।

ইসি পুনর্গঠন ইস্যু :সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির প্রস্তাবনা বা রূপরেখা প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে এ ছাড়াও 'একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে' ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা, দল গোছানোর প্রক্রিয়া জোরদার করা, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে না যাওয়ার প্রতিক্রিয়া, সার্চ কমিটি গঠনে সকল রাজনৈতিক দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা, ৭ নভেম্বর 'জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস' উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি না পাওয়াসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়। ঠিক হয়, চলতি মাসেই দলটি বিদেশি কূটনীতিক, সুশীল সমাজ ও দেশবাসীর কাছে ইসি বিষয়ক প্রস্তাবনা তুলে ধরবে।

নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী ইসি পুনর্গঠনের ইস্যুই হবে তাদের মাঠে নামার কৌশল। তবে এর আগে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের প্রস্তাব দেবে। বৈঠকে ঠিক করা হয়, সরকার বিএনপির প্রস্তাবনাকে অগ্রাহ্য করলে এর প্রতিবাদে তারা রাজপথে নামবে। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ।

এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'আমাদের দল গোছানোর প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। নতুন নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে আমরা সরকারের কাছে একটি সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব রাখব।

আমরা মনে করি, সার্চ কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় যেসব রাজনৈতিক দল সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে তাদের নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। আরও আলোচনার পর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।'

আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে কখনও আন্দোলন হয় না। আমরা পর্যায়ক্রমে জনমত গঠন করে আন্দোলনে যেতে চাই।' তিনি আরও বলেন, 'সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দমননীতি অব্যাহত রেখেছে। আমরা ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে চাই। সরকার এ দিনেও বাধা দিলে প্রতিরোধ-প্রতিবাদ করতে হবেই।'

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এ নির্বাচনে পরাজয়ের পাশাপাশি বিএনপি চারদলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এককভাবে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতেও ব্যর্থ হয় দলটি। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার শুরু হওয়ার পর দলের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ ও দূরে না থেকে জামায়াত তাদের রক্ষা করতে তৎপর হয়ে ওঠে।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির আন্দোলন থেকে জামায়াত দূরে অবস্থান করে। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াত আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চালায় এবং বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে। এ সময় নির্বাচন প্রতিরোধ করার নামে বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ২০ দলীয় জোট মাঠে নামে এবং নির্বাচন বয়কট করে। তাদের এ কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল, এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিসহ আরও কয়েকটি ছোট ছোট রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয় এবং সরকার গঠন করে। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' পালন করতে চাইলে বাধার মুখে পড়ে। ওই বছর ৩ জানুয়ারি রাত থেকে বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে লাগাতার হরতাল-অবরোধ ডেকে বসেন।

এ অবরোধ চলে টানা তিন মাস। অবরোধের নামে নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্দোলন বন্ধ হয়। এরপর আর বিএনপি মাঠে নামতে পারেনি।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমরা আন্দোলনের মধ্যেই রয়েছি। নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে আন্দোলন চলছে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'মানুষ যেমন আন্দোলন চান, বিএনপি হয়তো সেই পর্যায়ের আন্দোলনে নেই। বিএনপি সব সময় শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ধারায় আন্দোলনে বিশ্বাসী। জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি করে না।' তিনি আরও বলেন, 'দলের পুনর্গঠন চলছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে শিগগিরই চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে।'

দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, '৭ নভেম্বর উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেওয়া না হলে পর্যায়ক্রমে আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা না হলে আমরা প্রতিবাদ করব। চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হতে একটু সময় লাগতে পারে। আন্দোলনের মাধ্যমেই এ সরকারের পতন ঘটানো হবে।'-সমকাল

০৪ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে