সাইফুল ইসলাম, খুলনা প্রতিনিধিঃ আমি যদি হজে গিয়ে ইন্তিকাল করি অর্থাৎ আল্লাহপাক আমাকে যদি কবুল করেন, তবে আপনারা সবাই দু’বার আলহামদুলিল্লাহ বলবেন।আমার লাশ এখানে না এনে ওখানেই দাফন করবেন।একমাত্র জামাইকে দিয়ে এখানেই আমার
গায়েবানা জানাযা পড়াবে। হজ্বে যাবার আগে সর্বশেষ জুমার (গত ১১ সেপ্টেম্বর) নামাযের খুতবায় মাওলানা শহীদুল ইসলাম (৪৮) এভাবেই মুসল্লিদের সামনে তার শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।তিনি নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় তৃতীয় ফেজে অবস্থিত ছানিয়াতুল বিদা জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।আল্লাহপাক তার শেষ ইচ্ছাই পূরণ করলেন । সৌদি আরবে হজ্ব পালনকালে মিনায় শয়তানকে পাথর মেরে তাঁবুতে ফেরার পথে পদদলিত হয়ে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বৃদ্ধ মাতা,স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই মেয়ে, চার ভাই ও দুইবোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গত শনিবার গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের মাধ্যমে পরিবার সদস্যরা মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে তার মৃত্যুর সংবাদে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।গত রোববার বাদ আছর মরহুমের গায়েবানা জানাযা ওই মসজিদেই অনুষ্ঠিত হয়।তার ইচ্ছানুযায়ী জামাই নাজমুল হক জানাযা পড়ান। জানাযায় এলাকাবাসী, গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ শরীক হন মাওলানা শহীদুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর থানার ওটরা ইউনিয়নে।সেখানে তার পিতা মরহুম ফয়জর আলী মোল্লার প্রতিষ্ঠিত চকমান
ইসলামিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন ।তিনি এরপর গ্রাম জুগেরকান্দা আব্দুর বর মাদরাসা থেকে আলিম ও গৌরনদীর কাশেমাবাদ সিদ্দিকিয়া আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন।
কাজের সন্ধানে ১৯৯১ সালে খুলনা শহরে চাকরিরত বড় ভাই জাফর আলী মোল্লার কাছে আসেন। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত ছোট বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধমীর্য় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। একই সময়ে করিমনগর মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন।এরপর ২০০৩ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছানিয়াতুল মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন।এলাকাবাসীর কাছে তিনি ছিলেন একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ। ব্যক্তিজীবনে যা আয় করেছেন তার সবটুকুই পরিবারের ভরণপোষণে ব্যয় হয়েছে। তারকিছুই সঞ্চয় করে রেখে যেতে পারেননি।
তবে ঋণও রেখে যাননি । ইচ্ছা ছিল বড় মেয়ে মোসাম্মাৎ রহিমা খাতুনকে জামাইয়ের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেবেন। তাকে মুফাসসিরে কুরআন ও দুই ছেলে মো. বেলাল হোসাইন ও হাফেজ মো. নাঈমুল ইসলামকে বড় আলেম বানাবেন। তার মৃত্যুতে এখন সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পথে।গত ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় হজ্বে গমনের আগে ৩ সন্তানকে বারবার নিয়মিত নামায আদায়ের তাগিদ দেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আরাফাতের ময়দান থেকে মেয়ে ও জামাইকে মোবাইলে বলেন আমি ভাল আছি, তোমরা আমার জন্য দোয়া কর,
আমি তোমাদের জন্য দোয়া করবো, এর পর থেকে নিখোঁজ হন চিরতরে।
৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস