ড. বদিউল আলম মজুমদার : সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, পৃথিবী জুড়েই সন্ত্রাস কিংবা উগ্রবাদ নিয়ে ভয়ানক আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। থাকুক আর না-ই থাকুক, সন্ত্রাস-উগ্রবাদের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। এটি দমাতে হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাদা-ছোড়াছুড়ি বক্তব্য ছেড়ে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করাও জরুরি। এ জন্য জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন সুজনের এই সাধারণ সম্পাদক।
তার মতে, ‘বাংলাদেশের দুঃখ হলো, পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে উগ্রবাদী কিংবা জঙ্গিবাদীরা পার পেয়ে যায়। এ জন্য প্রথমেই একে অপরকে দোষারোপ বন্ধ করতে হবে। যারা সন্ত্রাসী কিংবা উগ্রবাদী, তাদের কোনো ধর্ম নেই। উগ্রবাদ কিংবা সন্ত্রাসই তাদের ধর্ম। তাদের ধরতে রাজনৈতিক ঐক্য জরুরি।’ড. মজুমদার বলেন, সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক হবে না। এটি খুবই দুঃখজনক। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের নির্মোহভাবে ধরতে হবে। এ নিয়ে কোনো রাজনীতি করা চলবে না।
যেহেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তাই এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়াও ঠিক হবে না। এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। প্রকৃত দোষীরা সাজা না পেলে বিদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে রেষারেষি দূর করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। জাতিসংঘে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে সমর্থন করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন। এর বিরুদ্ধে সমগ্র বিশ্বকে একসঙ্গে লড়তে বলেছেন। আমি তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সন্ত্রাস কিংবা জঙ্গিবাদ কোনোটাই পছন্দ করে না। তাই এদের বিরুদ্ধে জনমত আছেই। এখন রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে এলে এসব দমন করা কোনো সমস্যাই নয়। দেশে উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ থাকলে কারও জন্যই কল্যাণ হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবাই।
বিদেশি বায়ারদের দেশ ছাড়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি, বিদেশি বায়াররা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে অর্থনীতিতে ধস নামবে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেরই অর্থনীতি অনেকটা সচল। এটি অচল হয়ে পড়বে। জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে। এ জন্য জরুরি হবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া। সবাই যেন বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিদেশিদের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে সম্প্রতি দুই খুনের ঘটনা। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, না পরিকল্পিত, তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। বিদেশিদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সত্যিকারের দোষীদের সাজা দিতে পারলেই বিদেশিদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।
নাগরিক সমাজের এই প্রতিনিধির মতে, দেশে এখন আইনের শাসনের অভাব রয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিও বিদ্যমান। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। ব্যক্তিতন্ত্র কিংবা পরিবারতন্ত্র এখনো বিরাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আগে গণতন্ত্রের চর্চা জরুরি। দলে গণতন্ত্র না থাকলে দেশে গণতন্ত্র কীভাবে থাকবে! আর সব সমস্যাই দূর করতে হবে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে।
নতুন বছরের শুরুর দিকে পৌর কিংবা ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দলীয় বা নির্দলীয় নির্বাচন দিয়ে কোনো লাভ নেই। বিগত তিন সিটিসহ বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। তাহলে দলীয়ভাবে নির্বাচন দিয়েও তো লাভ নেই। এটি অর্থহীন হবে, যা গণতন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।-বিডিপ্রতিদিন
১১ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে