রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:২১:১৮

এক রোহিঙ্গা নারীর করুণ আর্তি: মুসলমান বলেই কি আমাদের ওপর এত নির্যাতন?

এক রোহিঙ্গা নারীর করুণ আর্তি: মুসলমান বলেই কি আমাদের ওপর এত নির্যাতন?

নিউজ ডেস্ক : অবুঝ শিশুর চোখে-মুখে হাসির ছাপ; কিন্তু মা! মায়ের বুকজুড়ে হাহাকার। ওপারে কয়েক একর জমির মালিকÑ এপারে চার বর্গহাতের পলিথিন মোড়ানো ঘরে রাত যাপন। ক্ষুধা আর ভয় নিয়ে অন্ধকার জীবনে পদার্পণ করলেও বাঁচার আকুতি নাছিমা আকতারের। বুকে একটাই স্বপ্ন একদিন হয়তো ফিরে পাবেন নিজ ভিটাবাড়ি, জন্মভূমি মিয়ানমার।

নাছিমা আকতারের বয়স ২৫ ছুঁই ছুঁই। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ও বর্বরতা থেকে প্রাণে বাঁচতে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন এই রোহিঙ্গা নারী। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন? ফ্যালফ্যাল করে থাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর নিজের দিকে থাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। চোখ দিয়ে অঝোরে পড়ছে দেশ ও স্বজন হারানোর বেদনার অশ্রু।

কোনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম দু’জনেই। কিছুক্ষণ (প্রায় ১০ মিনিট) চুপ থাকার পর জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের ভবিষ্যৎ কী? এক ভয়াবহ উত্তর দিলেন।

নাছিমা আকতার বললেন, ‘আমরা তো মানুষ। ভয়ঙ্কর কোনো প্রাণী নই যে, আমাদেরকে পৃথিবীর বুক থেকে শেষ করে দিতে হবে। আমরা রোহিঙ্গা। আমরা মুসলমান। আমাদের আদি নিবাস আরাকানে; কিন্তু এত নির্যাতন-নিপীড়ন কেন আমাদের ওপর? মানুষ বলেই কি নির্যাতন? নাকি দুনিয়ার সবাই আমাদের হিংস্র পশু মনে করে? আমরা তো মাটি ফেটে আরাকানের জমিনে আসিনি, আমাদের তো একটা দেশ আছে। মিয়ানমার সরকার (বার্মা) বলছে আমরা বাংলাদেশী, আর বাংলাদেশ সরকার বলছে আমরা বার্মার নাগরিক রোহিঙ্গা। যে দেশেরই হই দুই দেশ- বাংলাদেশ-মিয়ানমার সরকার বসে একটা সমাধান করুক। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা আমরা মেনে নেবো। আর যদি তা না পারে, আর কত সহ্য করব এই নির্যাতন? নিজের জীবন তো শেষ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কী অবস্থা হবে? এ কথা বলে আবারো ডুকরে কেঁদে নিচের দিকে তাকিয়ে দেশ ও স্বজন হারানোর বেদনার অশ্রু ফেললেন। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। কাছে গিয়ে বসলাম। সান্ত্বনা দেয়ার বৃথা চেষ্টা করলাম।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবারো বলা শুরু করলেন, ‘মিয়ানমার থেকে নৌকা করে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার সময় যেভাবে গভীর সমুদ্রে আমাদের মা-বোনদেরকে ফেলে দেয়া হয়েছে, সেভাবে আমাদের সব রোহিঙ্গাকে গভীর রাতে জাহাজে করে গভীর সমুদ্রে ফেলে দেয়া যায় না। তাহলে তো সবার মাথাব্যথা বন্ধ হয়ে যাবে। এই জীবন তো আর সহ্য হচ্ছে না। এই কথা বলে আবারো ডুকরে কেঁদে উঠলেন। ততক্ষণে সেখানে আরো অনেক শরণার্থী জড়ো হয়ে গেছেন। সবার চোখ ছল ছল করছে বেদনার অশ্রুতে। একটু পরেই মাগরিবের আজান ভেসে এলো মসজিদ থেকে। চোখ মুছতে মুছতে উপস্থিত সবাই যার যার মতো করে চলে এলাম।
১১ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে