বুধবার, ০৪ জানুয়ারী, ২০১৭, ১১:৫০:৩১

এমপি লিটন হত্যা: স্ত্রীসহ ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ, অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই

এমপি লিটন হত্যা: স্ত্রীসহ ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ, অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই

নিউজ ডেস্ক : গাইবান্ধা-১ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার চতুর্থ দিনের মাথায় এসে তদন্তে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। মঙ্গলবার স্ত্রীসহ এমপির ১৩ ঘনিষ্ঠভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংসদ সদস্যের এক নিকটাত্মীয়কে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক হলেই ১৩ জনের মধ্যে যে কাউকে যে কোনো দিন আটক করা হতে পারে বলে জানা গেছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এবং থানা পুলিশ দিনভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে পিবিআই দুপুর ১২টার পর এবং র‌্যাব বিকাল ৪টার পর জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এদিকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার ফারুক আহমেদ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। গাইবান্ধা জেলার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডে আমরা অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে তথ্য মিলবে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। এ ক্ষেত্রে কারও দলীয় বা অন্য কোনো পরিচয় দেখা হবে না। আসামিকে আসামি হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।’

গাইবান্ধা-১ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ লিটনকে মুমূর্ষু অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রংপুর, ঢাকা এবং গাইবান্ধায় জানাজা শেষে মঙ্গলবার পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। হত্যার পর থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তদন্তে নামেন।

১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ : মঙ্গলবার এমপি লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি, শ্যালক বেদারুল আহসান বেতারসহ অন্তত ১৩ জনকে এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা। এদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দফায় দফায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদিকে লিটনের শ্যালক বেতারকে বিকালে থানায় এনে প্রায় আধা ঘণ্টা প্রশ্ন ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করে থানা পুলিশ। এর বাইরে লিটনের ছেলে সাকিব সাদমান রাতিন, রাতিনের বডিগার্ড মাজেদুল ইসলাম, এমপির গাড়িচালক ফোরকান আকন, বাড়ির তিন কেয়ারটেকার ইসমাইল, ইউসুফ ও সৌমিত্র, এমপির ভাগ্নি মারুফা সুলতানা শিমু, এমপির চাচি শামীম আরা আইনী, সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একান্ত সহকারী সচিবকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আরও কিছু তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, হঠাৎ করে ওইদিন বাড়ি খালি হয়ে যায় কেন? ঠিক ওই সময় কেন গৃহকর্মীকে দোকানে পাঠানো হল, নিরাপত্তারক্ষীকে কেনই বা পান আনার জন্য বাড়ির ভেতর যেতে হল? এসব প্রশ্নের উত্তরে তার স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি বলেছেন, ঘটনাগুলো কাকতালীয়ভাবেই ঘটেছে।

ঘটনার সময় বাড়িতে অবস্থানকারী লিটনের শ্যালক দেদারুল আহসান বেতার জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, খুনিদের তিনি দেখেছেন। তবে তিনি তাদের চেনেন না। তারা গাইবান্ধার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছে। অপরিচিত ব্যক্তিদের এমপির বৈঠকখানায় ঢুকতে দিলেন কেন- এ বিষয়ে তারা দু’জনই বলেন, এমপি উদার ছিলেন। এ কারণে হয়তো ঢুকতে দিয়েছিলেন। অপরিচিত ব্যক্তিদের রেখে বাইরে গেলেন কেন- গোয়েন্দাদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমপি যেখানে কথা বলছেন, সেখানে তিনি কী বলবেন।

এদিকে এমপির গাড়িচালক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার মাথা ঠিক ছিল না। তিনি কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। এ কারণে তিনি খুনিদের পেছনে ধাওয়া করেছিলেন। এমপির ছেলের বডিগার্ড মাজেদুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি পান আনতে গিয়েছিলেন। তিনি কিছু জানেন না। বিভিন্ন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এমপির স্ত্রী এবং তার শ্যালকের উত্তর নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছে না পুলিশ। তাদের কাছ থেকে আরও সহযোগিতা আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ঘটনার দিন বিকালে হঠাৎ করেই বাড়ি ফাঁকা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি পরিকল্পিত কিনা তা খতিয়ে দেখছে বিভিন্ন সংস্থা।

একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, তদন্তের এ পর্যায়ে তারা মনে করছেন লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার এ ঘটনা সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। তবে এখনই তারা নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে চান না। তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলছেন, এমপি লিটন বাড়ির ভেতরে কখন, কী করছেন, কী অবস্থায় ছিলেন- বাড়ির ভেতর থেকেই কেউ হয়তো এ সংক্রান্ত তথ্য খুনিদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। ফলে খুনিদের পক্ষে আক্রমণের সময় নির্ধারণ এবং ছক তৈরি করতে সুবিধা হয়েছে। -যুগান্তর।
০৪ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে