মানিক মোহাম্মদ : ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সংসদের বাইরে রয়েছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই পরিস্থিতিতে প্রকৃত নেতাকর্মীদের সাংগঠনিকভাবে মূল্যায়ন করে জনগণের আস্থা অর্জনে বিএনপির প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন দেশের রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।
দলটির কার্যক্রম নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, কৌশলে সংঘাত এড়িয়ে ঘর গুছানো হবে বিএনপির প্রথম কর্তব্য। ২০১৭ সালের মধ্যে সব জেলায় সাংগঠনিক স্ট্রাকচারগুলোর কাজ শেষ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে যারা ত্যাগী এবং কর্মঠ তাদের দায়িত্বে নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি নমনীয়ভাবে আন্দোলনের মাত্রাটা যুক্ত রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারির মতে, বিএনপির নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু করা উচিত। কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন এবং নির্বাচন দুটোকে পাশাপাশি রাখতে হবে। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে যারা রাজনৈতিক বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন তাদের সহযোগিতা নিতে হবে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দলকে অগ্রসর করতে হবে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেভাবে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করতেন এবং মেধাবীদের দলে সমন্বয় করতেন সেভাবে অগ্রসর হতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে যারা বেঈমানি করেছে তাদের সম্পর্কে বিএনপিকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম বলেন, সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এটা আগে দরকার। আরেকটা বিষয়, মামলা মোকাদ্দমা হুমকি ধামকি যতই থাকুক না কেন তারপরও আমি মনে করি কেমন যেন একটা স্থবিরতা এসেছে। এই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে হবে। সর্বোপরি মনে করি সংগঠিত হওয়া দরকার। স্থবিরতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে। গা ঝাড়া দিয়ে সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দলটির বর্তমান বাস্তবতায় বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ নেয়ার তাগিদ দেন তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাছানাত আলী বলেন, আগামী ২০১৯ সালের যে নির্বাচন, সে নির্বাচন বিএনপির মূল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রথমে দেশের যে কমিটিগুলো পুর্নগঠন হয়নি সে কমিটিগুলো অতি দ্রুত গঠন করতে হবে।কিন্তু সেটি তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে, ঢাকায় বসে নয়। যারা ১/১১ পর থেকে নির্যাতিত, যাদের দলের প্রতি কমিটমেন্ট আছে, তাদের হাতে নেতৃত্ব দিতে হবে। নতুন এবং পুরাতনের সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে দল পুর্নগঠন করতে হবে।
দ্বিতীয় যে কাজটি করতে হবে দল পুর্নগঠনের সঙ্গে সঙ্গে আমি মনে করি, সাতটি বা আটটি বিভাগে বিএনপি চেয়ারপারসনের একটা মহাসমাবেশ করা উচিত, দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য। এই সমাবেশ হবে শুধুমাত্র বিএনপির। জোটের কোন দলকে রাখার দরকার নেই। প্রত্যেকটি জেলায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অথবা মহাসচিব-যুগ্ম মহাসচিবের নেতৃত্বে জেলা প্রতিনিধি সমাবেশ করতে হবে।
তৃতীয়ত যেটি হলো মহানগরীগুলোকে অনতিবিলম্বে দুই ভাগ বা চার ভাগ করে প্রত্যেকটি কমিটিকে ঢেলে সাজাতে হবে। যারা কাজ করে, কমিটমেন্ট যাদের আছে, যারা বিএনপির আমলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছে সেই সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য যারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে বসে থাকবে তাদের বাদ দিয়ে কর্মীবান্ধব নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
চতুর্থত সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি করতে হবে। যেমন নিষ্ত্রিয় ছাত্রদল। ছাত্রদল দেশে আছে কি না সেটাই বোঝা যায় না এখন। ছাত্রদলকে ছাত্রদের হাতে তুলে দিতে হবে। বিবাহিত ব্যবসায়ী, কন্ট্রাকটর, সিজনাল পলিটিশিয়ান এদের হাত থেকে উদ্ধার করে শুধু ছাত্র যারা তাদের দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সারা বাংলাদেশের ছাত্রদলের কমিটি পূর্নগঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে ছাত্রদল মহিলা দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুর্নগঠন করতে হবে। ২০১৭ সাল হবে মূলত দল পুর্নগঠনের বছর। কর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য শান্তির্পূণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এসব কাজই বিএনপিকে ২০১৭ সালে করা উচিত। -জাগো নিউজ।
১৩ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম