ওয়েছ খছরু ও রিপন আহমদ : বাহারের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিল ঝুমা। তিন বছর ধরে দিচ্ছিল প্রেম প্রস্তাব। ঝুমা তাকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এরপরও পিছু ছাড়েনি বাহার। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাবে আসে বাহার। ঝুমার পিতা মুসলিম উদ্দিনের কাছে দেয় বিয়ের প্রস্তাবও। কিন্তু তারা বিয়ের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয় বাহারউদ্দিন। ঝুমাকে কাছে পেতে ব্যর্থ হয়ে সে গ্রামের রাস্তায় ধারালো অস্ত্র নিয়ে চালিয়েছে হামলা। উপর্যুপরি কুপিয়েছে এ কলেজ ছাত্রীকে।
তবে, ভাগ্য ভালো ঝুমার সঙ্গে ছিল মা করিমা বেগম। তিনি এগিয়ে আসায় ঝুমা কিছুটা রক্ষা পায়। এদিকে, গতকাল ডাক্তাররা জানিয়েছেন- ঝুমা এখন শঙ্কামুক্ত। সিলেটের জকিগঞ্জের রসুলপুর গ্রামের মুসলিম আলীর কন্যা ঝুমা বেগম সুমা। সে পাশের থানা বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। আর বাহার উদ্দিনের বাড়িও একই এলাকায়। তার পিতা আবদুল গফুর। বাহার সিলেট আলীয়া মাদরাসা থেকে এ বছর আলীম পরীক্ষা দিয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে ইলেক্ট্রিকের কাজ করত।
এলাকার সুবাদে ঝুমার বাড়িতে যাতায়াত ছিল বাহারের। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা ঝুমা বেগম জানিয়েছেন- ‘প্রত্যাখ্যানের প্রতিশোধ নিতেই আমার উপর হামলা চালায় বাহার। সে আমাকে দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করছিল। বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিল, কিন্তু আমি রাজি হইনি।’ ঝুমার মা করিমা বেগম জানিয়েছেন- রোববার ঝুমা ও তার ছোটো ছেলে আরিফকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় ইছামতি উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। আরিফকে ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে তারা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সাবেক ইউপি সদস্য ময়মুছ মেম্বারের বাড়ির সামনে পৌঁছলে বাহার উদ্দিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঝুমা বেগমকে আকস্মিকভাবে কুপানো শুরু করে।
তিনি বলেন- হঠাৎ তিনি দেখেন তার মেয়েকে কুপাচ্ছে বাহার। এ দৃশ্য দেখে তিনি দৌড়ে কাছে যান। গিয়েই ঝুমাকে ঝাপটে ধরেন। এ সময় বাহার ঝুমার মাকেও আক্রমণ করে। এতে ঝুমার মাও আহত হন। এদিকে, ঝুমা ও তার মায়ের চিৎকারে ছুটে আসেন এলাকার মানুষও। তারা এগিয়ে এলে বাহার এক সময় পিছু হটে। এবং গ্রামের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে, এ ঘটনার পর ঝুমাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঝুমা বেগমের নাভির উপরে বাম পাশে, বাম হাতের কনুইর নিচে ও আঙুলের গোড়ায় পরপর কয়েকটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
হাসপাতালে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কলেজছাত্রী ঝুমা বেগমকে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ও তার হাতে ১৯টি সেলাই দেয়া হয়েছে। ঝুমা বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। সে ওসমানী মেডিকেলের ৪র্থ তলার ৬নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। একই হাসপাতালে ঝুমা বেগমের মা করিমা বেগমকেও ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই জকিগঞ্জ থানা পুলিশ বাহারকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে। বাহারকে না পেয়ে গতকাল সকালে তার বড় ভাই নাসির উদ্দিনকে আটক করেছে পুলিশ। ঝুমার চাচাতো ভাই আবদুল হাছিব জানান- অনেক দিন ধরে ঝুমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বাহার। মানিকপুর ইউপি সদস্য আবদুল কাদির জানান, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বাহার প্রকাশ্যে ঝুমাকে কুপিয়েছে।
থানায় আটক বাহারের বড় ভাই গাড়ি চালক নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন- ঝুমার সঙ্গে তার ভাই বাহারের ২ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে তার ভাইকে পারিবারিকভাবে বারবার শাসালেও বাহার তার পরিবারের কারও কথা শুনেনি। কেন তার ভাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান- তার ভাইয়ের সঙ্গে ঝুমা ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হয়তো কোনো কিছু নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে। জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার জানিয়েছেন, মামলা নেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বাদী এলেই মামলা নেয়া হবে। আসামি বাহারকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। -এমজমিন
১৭ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি