নিউজ ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে গ্রেফতারের পর ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে ভারত। হস্তান্তরের আগে ভারতীয় সীমান্তে বিএসএফের একটি ক্যাম্পে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ওই সময় তিনি জানিয়েছেন, ভারতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকাবস্থায় তিনি ভালো ছিলেন। ভারতের বিশাল ওই কারাগারে তিনি সবজি চাষও করেছেন। বাইরে থেকে নিয়মিত মাছ-মাংস এনে খেতেন।
মঙ্গলবার দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই জবানবন্দির রেকর্ডের একটি কপি তাদের কাছে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রথম ৬ মাস আমি ভারতের কারাগারে ভালোই ছিলাম। বাইরে থেকে মাছ-মাংস এনে খেতাম। ভারতের ওই কারাগারটি বিশাল। সেখানে আলু, লালশাক লাগিয়েছি। ফুলকপি, বাঁধাকপির চাষ করেছি। বাংলাদেশ থেকে আমার লোকজন গেলে দেখা সাক্ষাৎ হতো। কিন্তু ছয় মাস পর একটু অসুবিধা হয়।’
জিজ্ঞাসাবাদের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে নূর হোসেন বলেন, ‘আমি সব কইয়া দিমু। আমাকে টিভির টফ শোতে (টকশো) নিয়া যান। সেখানে সব বলব।’
তিনি জানান, ঘটনার দিন মেজর আরিফ নূর হোসেনকে ফোন করে জানতে চান নজরুল আদালতে গেছে কিনা? আরিফের ফোনের পর নজরুলের অবস্থান জানার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা খোকন সাহাকে ফোন করেন নূর হোসেন। আদালতে নজরুলের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে মেজর আরিফকে তা জানান।
নজরুলকে অপহরণে র্যাবের আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে নূর হোসেন বলেন, ‘আরিফ একটা জমি দখলের জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু নজরুলের কারণে আমি সেটা করতে পারছিলাম না। আরিফকে এটা বলার পর র্যাবের পক্ষ থেকে নজরুলকে অপহরণের পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্য র্যাব আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সাও নিয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দু’টি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
এ মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনও পলাতক রয়েছেন ১২ জন।
আসামিদের দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও নানা সাক্ষ্য প্রমাণের উপর দীর্ঘ শুনানি শেষে গত বছরের নভেম্বরে ১৬ জানুয়ারি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন। রায়ে নূর হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।-যুগান্তর
১৭ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর