বুধবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০৯:২৮:৪৯

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বব্যাংক মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংকটের জাল ছিন্ন করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে।

তিনি বলেন, ‘রূপকল্প ২০২১’-কে সামনে রেখে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১)’ প্রণয়ন করে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-১৫) বাস্তবায়িত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন অগ্রাধিকারভত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা সরকারের উন্নয়ন বাজেট বা বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন বাজেটে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট ছিলো মাত্র ২৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৯১ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ কোটি ১০ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মত ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো বিনির্মাণের বিষয়গুলো। বিগত বছরগুলোতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় যেমন, মোট দেশজ আয়, প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সামাজিক খাতের দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু নিরাপত্তায় অগ্রগতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সরকারের সাফল্য অভূতপূর্ব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০১৬ সালের নমিনাল জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৬ তম এবং ক্রয় ক্ষমতার সমতার জিডিপি’র ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অর্জন করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১১ উন্নীত হয়েছে। এ বছরের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২। বর্তমানে (২০১৬) মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার এসে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশে। ২০২০ সাল নাগাদ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী জনগণের সংখ্যা ১৮ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাল উৎপন্ন হয়েছে ৩৪৭ লাখ মেট্রিক টন। দেশের দরিদ্র পরিবারের শতভাগ শিশু শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বর্তমানে ১৫ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। দেশের মোট প্রজনন হার ২ দশমিক ১০-এ নেমে এসেছে, একই সময়ে শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ২৯ জন এবং পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ৩৬ জনে নেমে এসেছে, যা ২০১১ সালে ছিল ৪৪ জনে ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতি এক লাখ জীবিত জন্মে এ হার ১৭০ জনে নেমে এসেছে, যা ২০১১ সালে ২০৯ জনে ছিল। দেশে জনগণের গড় আয়ু বেড়ে ৭০ দশমিক ৯ বছর হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ২০১৫ সালে এসে টেলি ডেনসিটি ৭৯ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ৫ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮ হাজার ২শ’ ই-পোস্ট অফিস থেকে জনগণকে ২শ’ ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন ১৩ কোটির বেশি মোবাইল সীম ব্যবহার করা হচ্ছে। ইন্টারনেট গ্রাহক প্রায় ৬ কোটি।
০৮ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে