রফিকুল ইসলাম রনি : সম্মেলনের চার বছর পেরিয়ে গেলেও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটির আশা দেখছেন না নেতা-কর্মীরা। কেবল দুই নেতার ইশারায় চলছে থানা-ওয়ার্ডের দলীয় কর্মকাণ্ড। দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় পদ-পদবি প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবে হবে করেও কমিটি না হওয়ায় মহানগরের কেউ কেউ রাজনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
অথচ আওয়ামী লীগের যে কোনো কর্মসূচিতে এই ওয়ার্ড ও থানা কমিটিই লোক সমাগম করে। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। এর তিন বছর তিন মাস পর ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঢাকা মহানগরের দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ ও ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করেন। এরপর থানা ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও কবে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারেন না।
গত ২ জানুয়ারি রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবিলম্বে মহানগরের সব থানা ও ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দিনভর বর্ধিত সভা হলেও কমিটি গঠনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। মহানগরের নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন বলে সভায় জানিয়েছেন। তবে কবে থেকে শুরু করবে তা জানানো হয়নি।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, আমরা আগামীতে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক করে মহানগরের নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেব। থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তারা কমিটি গঠন করবেন। এ কমিটিতে কোনো হাইব্রিড ও বিতর্কিতদের স্থান হবে না বলেও জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের গতকালের বর্ধিত সভায় দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করা, হাইব্রিডদের দলে জায়গা করে দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূলের নেতারা। বর্ধিত সভায় বলা হয়, আগামীতে সংসদীয় আসন ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। ওই বৈঠকে ওয়ার্ড-থানার নেতারা অভিযোগ করেন, কমিটিতে মাদক ব্যবসায়ী ও বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। তারা নেতাদের ম্যানেজ মিশনে নেমেছেন।
তারা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ইতিমধ্যেই দলের শীর্ষনেতাদের অফিস-বাসা বাড়িতে আনাগোনা শুরু করেছেন। তারা যদি কোনোক্রমে আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নের কমিটিতে স্থান পায়, তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের বিপদ আসন্ন। সময়-সুযোগ বুঝে তখন তারা ঘরের বেড়া কাটার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠতে পারে। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সর্তক থাকারও অনুরোধ জানান তারা।
ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আসন্ন কমিটিতে চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের দূরে রাখতে হবে। তারা কমিটিতে স্থান পেতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। আমরা সবাইকে চিনি ও জানি। কোনো হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের স্থান দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। অনুপ্রবেশকারীরা দলে ঢুকলে সময়-সুযোগ বুঝে তখন তারা ঘরের বেড়া কাটার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠতে পারে।
বর্ধিত সভায় ৫২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, বিএনপি-জামায়াতে যাদের আত্মীয়স্বজন আছে, তারা হয়তো চাইবেন ওয়ার্ড কমিটিতে স্থান দিতে। কিন্তু এটা যেন কোনোভাবেই কেউ করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দক্ষ ও যোগ্যদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। ওই কমিটিতে যেন কোনোভাবেই বিএনপি-জামায়াত এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর দক্ষিণের একাধিক নেতা জানান, সংগঠনের প্রথম কার্যনির্বাহী সংসদ ও ওয়ার্ড-থানা নেতাদের নিয়ে বর্ধিত সভা করা হলেও কমিটি গঠনের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কবে নাগাদ হবে তাও কেউ জানে না। ওয়ার্ড-থানা সভাপতি-সম্পাদকরাও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে চাপ প্রয়োগ করছেন না। ফলে দুই নেতাদের নিয়ে চলছে আওয়ামী লীগের এই ইউনিট। উত্তরের একাধিক নেতা জানান, একাধিক বার কমিটি গঠনের তোড়জোর করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কবে নাগাদ হবে সেই নির্দেশনাও নেই। ফলে অনেক নেতা-কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। পরিচয় সংকটে থাকায় তারা নিজেদেরকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে গত বুধবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন বলেন, থানা-ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে সে ব্যাপারে দক্ষিণের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় কেউ কেউ মতামত দিয়েছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির তিনটি সভা ও একাধিক বর্ধিত সভা করা হয়েছে।
এতে কমিটি গঠন নিয়ে তারা মতামত দিয়েছেন। এ ছাড়া মাঠে আটটি টিম কাজ করছে। এই টিমের নেতৃত্বে আছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। তারা বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সভাপতি/সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য নাম প্রস্তাব করবেন। -বিডি প্রতিদিন
১৭ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি