শনিবার, ০১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৩৬:৪৮

মাকে ডাক্তার দেখানো হলো না লে. কর্নেল আজাদের

মাকে ডাক্তার দেখানো হলো না লে. কর্নেল আজাদের

রুদ্র মিজান : রাতের খাবার টেবিলে। মা, স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে খাবার খেয়েছিলেন লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ। মা সায়েদা করিম গ্রামের বাড়ি থেকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় আজাদের বাসায় এসেছিলেন। তার চোখে সমস্যা। কথা ছিলো আজাদ তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন।

খাবার টেবিলে বসে বলছিলেন আমার এখন জরুরি কাজ, সিলেটে চলে যাব। দোয়া করো আমার জন্য। মা সায়েদা করিম বলেছিলেন, ‘যাও বাবা। দোয়া করি তোমার জন্য।’ সায়দা করিম আশায় ছিলেন তার সন্তান ফিরে আসবে। তাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবে।

আজাদের স্ত্রী সুমাইয়া সুলতানা শর্মি জানান, আজাদের ব্যস্ততার শেষ ছিলো না। প্রায়ই দেশের বিভিন্নস্থানে যেতে হতো তাকে। সেদিন বনানীর সেনানিবাস এলাকার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রী শর্মি তার পিছু পিছু গিয়েছিলেন লিফট পর্যন্ত। যেতে যেতে আজাদ বলেছিলেন, বাচ্চাদের দিকে খেয়াল রেখো। সিলেটের অবস্থা ভালো না। আমার দুই একদিন দেরি হতে পারে।

শর্মি জানান, বাইরে কোথাও গেলে আজাদ অন্তত একবার কল দিতেন। কিন্তু সেদিন আজাদ কল দেননি। দুপুরের দিকে শর্মি নিজেই কল করেছিলেন আজাদের ফোনে। কিন্তু তা আর রিসিভ হয়নি। লে. কর্ণেল আজাদের মা, স্ত্রী ও সন্তানেরা অপেক্ষায় ছিলেন তিনি ফিরে আসবেন। তিনি ফিরে এসেছেন ঠিকই। কিন্তু লাশ হয়ে।

গতকাল বেলা ৩টায় র‌্যাব সদর দপ্তরে আবুল কালাম আজাদের দ্বিতীয় নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে সেনানিবাস থেকে লাশবাহী গাড়িতে করে আজাদের লাশের কফিন র‌্যাব সদর দপ্তরে পৌঁছালে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের পতাকায় মোড়ানো কফিনটি যখন প্রায় ২০ জন সহকর্মী গাড়ি থেকে নামান তখন বেদনাবিদুর এক পরিবেশের সৃষ্টি হয় র‌্যাব সদর দপ্তরে। ফুলেল শ্রদ্ধা শেষে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। বেজে উঠে বিউগলের করুণ সুর। প্রিয় কর্মস্থলে আজাদের লাশ দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি সহকর্মীদের অনেকেই। এই করুণ, কঠিন দৃশ্য ছিলো সেনানিবাস, র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে বনানীর সেনা কবরস্থান পর্যন্ত।

সেনা কবরস্থানে লাশবাহী গাড়িটি পৌঁছানোর পর কফিনটি উঠানো হয় রিদলিংকে। চার পাশে সেনাবাহিনীর সৈনিকরা দাঁড়িয়ে  সশ্রস্ত্র সম্মান জানাচ্ছিলেন। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় সেখানে। তারপর লাল ফিতা বাঁধা লাশবাহী রিদলিংক টেনে নিয়ে যান সৈনিকরা। সঙ্গে ইমাম। পড়ছিলেন কালেমা। তার সঙ্গে সমবেতরা। কাঁদছিলেন আজাদের স্বজন, সহকর্মীরা। অদূরে দাঁড়িয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছয় বছরের মেয়ে জারা। কোনো কথা নেই তার। শুধু ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি। চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিলো।

কাঁদতে কাঁদতেই জানতে চাইছিলো, আব্বুকে ওরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? সঙ্গে থাকা নারী কোনো জবাব দিতে পারেননি। জারার কথায় তিনি নির্বাক জল ফেলেছেন। বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’ আজাদকে যখন দাফন করা হচ্ছিলো তখনও অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মা সায়েদা করিম শ্বাশুড়ি নূরে শাওয়া শিরিন, স্ত্রী শর্মি। সঙ্গে ছিলেন আজাদের তিন সন্তান। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র জারিফ, প্রথম শ্রেণির ছাত্রী জারা ও দুই বছর বয়সী জাবির। আজাদকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন তার গ্রামের লোকজনও। তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন, ঢাকাস্থ চাপাইনবাবগঞ্জ সমিতির নেতৃবৃন্দ।

এর আগে সকাল ৯টায় লে. কর্ণেল আজাদের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক’র ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, বোমার সিপ্রন্টার লে. কর্ণেল আজাদের বাম চোখ দিয়ে ঢুকে ব্রেইনে আঘাত করে। তার ব্রেইন থেকে সিপ্রন্টার উদ্ধার করা হয়েছে। সিপ্রন্টারের আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।  এমজমিন
০১ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে