বুধবার, ০৫ এপ্রিল, ২০১৭, ০৮:৫৬:২১

মেয়রদের বরখাস্তে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ!

  মেয়রদের বরখাস্তে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ!

তারেক: সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্তে দায়িত্বপ্রাপ্তদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বরখাস্তের ঘাটনা প্রধানমন্ত্রীর অজ্ঞাতসারে ঘটেছে। এর পেছনে যুক্তি কী, কারণ কীÑ এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। তবে আমি যতটুকু জানি, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানেন না।’ ১০ দিন আগে দায়িত্ব পাওয়া হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছকেও গতকাল সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

বর্তমানে ঢাকায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক আইপিইউ সম্মেলন চলছে। এতে গণতান্ত্রিক ১৩২টি দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন। সম্মেলনে টেকসই গণতন্ত্র, সুষম উন্নয়ন, জঙ্গিবাদ দমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

এমন একটি সময়ে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়রদের বরখাস্ত করার ঘটনাটি সামনে আসায় অংশগ্রহণকারী অতিথিদের মাঝে গণতান্ত্রিক চর্চায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে। বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। গত বৃহস্পতিবার মেয়রদের বরখাস্ত আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। কিন্তু কেন এত তড়িঘড়ি করে এটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হলো সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হওয়ায় এর আগে মন্ত্রণালয়ের আদেশে তিন মেয়রকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

সাময়িক বরখাস্ত আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে সম্প্রতি তারা পক্ষে রায় পান। জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং হবিগঞ্জ পৌরসভা মেয়রও আজ আপিল করতে পারেন।

রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়রদ্বয়কে সাময়িক বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আইপিইউ সম্মেলন চলাকালে দেশের দুটি প্রধান শহরের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সিটি মেয়রের শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির সদস্য হওয়ায় প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এক কলমের খোঁচায় বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে দেশে গণতন্ত্র যে কতটা কর্তৃত্ববাদী ও একচোখা তা আবার প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় দফায় করা সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একটি রিটের শুনানি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ স্থগিতাদেশ দেন।

গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের রোববারে বরখাস্তের আদেশ স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। সেই আবেদনের শুনানি করে স্থগিতাদেশ দেন। প্রথমবার সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার প্রায় দুবছর পর গত রোববার উচ্চ আদালতের নির্দেশে আরিফুল হক নগর ভবনে যান। মেয়রের চেয়ারে বসতে না বসতেই ফের আবার বরখাস্ত হন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, আরিফুলের বিরুদ্ধে একটি মামলায় ২২ মার্চ সুনামগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সম্পূরক অভিযোগপত্র গৃহীত হয়। এ কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

দ্বিতীয় দফায় বরখাস্ত করার বিষয়ে আরিফুল হক বলেন, মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিরুদ্ধে আমি আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। একই সঙ্গে জনগণের কাছেও বিচার দিলাম। জনগণ ভোটের মাধ্যমে এ অবিচারের জবাব অবশ্যই দেবেন। এর সঙ্গে যোগ করেন, বরখাস্ত করা হলেও আমি মেয়র। জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র। মন্ত্রণালয় আমার দপ্তর কেড়ে নিয়েছে।

কিন্তু জনগণের ভোট তো কেড়ে নিতে পারবে না। তাই আমি এখন দপ্তরবিহীন মেয়র। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বরখাস্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য গতকালই ঢাকায় এসেছেন। আজকে বরখাস্তের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করবেন বলে জানা গেছে। গত রোববার সকালে সাময়িক বরখাস্তের দীর্ঘ ২৩ মাস পর আদালতের রায় হাতে নিয়ে নগরভবনে যান তিনি। কিন্তু নগরপিতার কক্ষ তালাবদ্ধ দেখতে পান।

এ নিয়ে নগরভবন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে রাসিকের কয়েক কর্মকর্তাকে নিয়ে মেয়র ও বিএনপিপন্থি কাউন্সিলররা তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বিএনপিপন্থি কাউন্সিলররা রাসিকের কর্মকর্তাদের তালা খুলতে বললে তারা অপারগতা জানায়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে তালা ভাঙা হয়।

নগরভবনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কক্ষে বসতে না বসতেই ফের সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ আসে। সাংবাদিকদের বুলবুল বলেন, তিনি আইনগত পদক্ষেপ নেবেন। কারণ সুপ্রিমকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আদালতে কোনো মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হলেও পলাতক না থাকলে কোনো জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা যাবে না।

দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১০ দিনের মাথায় আবার বরখাস্ত হওয়া হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছও আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানা গেছে। রোববার স্থানীয় সরকারের এক আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ওপর হামলা মামলায় মেয়র জিকে গউছ চার্জশিটভুক্ত আসামি।

বরখাস্তের প্রতিক্রিয়ায় জিকে গউছ বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। জানা গেছে, বরখাস্ত আদেশের বিরুদ্ধে জিকে গউছ আজ হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন।-আমাদের সময়
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে