বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৪১:১৩

যা যা থাকছে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে

যা যা থাকছে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে

কূটনৈতিক ডেস্ক : সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, এখন শুধু অপেক্ষা মাহেন্দ্রক্ষণের। চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামীকাল (শুক্রবার) দিনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।

সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সরবরাহ করা তথ্য মতে, ভারতের ভারি শিল্প বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয় এবং দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী নয়াদিল্লির পালাম এয়ারফোর্স স্টেশনে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবেন।

পররাষ্ট্র, আইন, পানি সম্পদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৪০ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। পররাষ্ট্র সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের ডজন খানেক কর্মকর্তা সফরের অ্যাডভান্স টিম হিসাবে এরই মধ্যে দিল্লি পৌঁছেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সুসম্পর্ক আরো গভীরতর করাসহ উভয়ের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের দ্বার উন্মোচিত হবে। তারা বলছেন, এবারের সফরে দিল্লিতে বিরল সম্মান জানানো হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

এরই মধ্যে ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি তার বিশেষ আতিথেয়তা গ্রহণের জন্য শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সম্মানজনক সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং সফরকালে রাষ্ট্রপতি ভবনেই থাকছেন। রাষ্ট্রপতি ভবনেই তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উপস্থিত থাকবেন। পরে রাজঘাটস্থ মহাত্মা গান্ধির সমাধিতেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন শেখ হাসিনা।

কর্মকর্তারা জানান, আগামী শনিবার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক এবং আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকের আলোচনার টেবিলে অনেক এজেন্ডা রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বহুল আকাক্সিক্ষত তিস্তার পানি বণ্টনসহ দুই দেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানির সুষম ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে ঢাকা। তবে ওই আলোচনায় নাটকীয় কিছু না ঘটলে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা একেবারে নেই বলেই আভাস দিচ্ছে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

একদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা হবে। সেখানে তিস্তা কতটুকু গুরুত্ব পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী স্পষ্ট কোনো জবাব দেননি। তিনি দুই দেশের সার্বিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট টেনে বলেন, দুটি বন্ধু রাষ্ট্রের সম্পর্ক যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, এর মধ্যে একটা হলো, এটা হলো না, এতে কিছু যায় আসে না।

মন্ত্রী বলেন, দেখতে হবে যে (আমাদের সম্পর্কের) মূল ধারাটা কোথায় যাচ্ছে। আমার মনে হয় তার মধ্যে একটা হবে কি হবে না বা কি হবে এটা এখন আমরা কিছু বলতে চাই না।’ প্রধানমন্ত্রীর সফরে দুদেশের মধ্যে প্রায় ৩৩টি চুক্তি সইয়ের আভাস দিয়ে মন্ত্রী জানান এর মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়টিও রয়েছে। দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারও গতকাল বিবিসি বাংলাকে প্রায় অভিন্ন কথাই বলেছেন।

হাই কমিশনার বলেন, তিস্তা নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার একান্ত বৈঠকে এবং আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে আলোচনা হবে। তার মতে, আলোচনা হওয়া, আর না করার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। তিস্তা চুক্তি সইয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ যে জটিলতা রয়েছে হাসিনা-মোদি আলোচনায় সেই বিষয়টিও আসবে বলে মনে করেন তিনি। তবে হাই কমিশনার এখনই এ নিয়ে নিরাশ নন বলে জানান। বিবিসির সঙ্গে আলাপে বাংলাদেশ-ভারত প্রথম সামরিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়েও কথা বলেন হাই কমিশনার।

তার ভাষ্য মতে, প্রতিরক্ষা খাতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতায় কোনো দোষ নেই। এ খাতে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং সহযোগিতা রয়েছে। এমওইউ সইয়ের মধ্যে দিয়ে সেই সহযোগিতাকে একটি কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

জবাবে মন্ত্রী বিস্তারিত উল্লেখ না করে বলেন, ‘হলেই বুঝতে পারবেন, সব তো দেখতেই পারবেন। কোনো কিছু গোপন করার নেই, যা হবে তা এক্কেবারে সর্বসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।’ প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক নিয়ে আগাম যে সমলোচনা শুরু হয়েছে তার প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে যেগুলো বলা হচ্ছে, তা আমাদের নিন্দুকরা বলছেন। এগুলোর মধ্যে এর কিচ্ছু নেই, তা সময় হলেই সবাই দেখতে পারবেন।

মন্ত্রী জানান, ভারতের সঙ্গে যে সব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে তার মধ্যে প্রতিরক্ষা ছাড়াও বর্ডার হাট স্থাপন, তথ্য ও সম্প্রচার, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, ভারত কর্তৃক প্রদেয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি), কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, হাসিনা-মোদি শীর্ষ বৈঠক শেষে দিল্লিতে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল এবং ত্রিপুরার পালটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও অংশ নিতে পারেন।

ওই উদ্বোধন শেষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী মিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। সফরকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যেসব সেনা শহীদ হন, তাদের মরণোত্তর সম্মাননা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ৭ জন শহীদের নিকট আত্মীয়ের হাতে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক এবং সম্মাননাপত্র তুলে দেবেন। এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

দিল্লি সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ-বৈঠক হবে। মমতা ব্যানার্জিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি হবে অতিথি ভবন হায়দ্রাবাদ হাউসে। ওই বৈঠক শেষে দুই দেশ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবে।

বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন- দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, পদ্মা (গঙ্গা) ব্যারেজ নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবসম্পদ রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী আজমির শরীফ জিয়ারতে যাবেন।

সফরের সমাপনীতে দিল্লিতে দুই দেশের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি বিজনেস ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা করবেন। সেখানে সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অংশ নেবেন। ওই বিনজেস ইভেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা ছাড়াও তাদের বাংলাদেশে আরও বেশী বিনিয়োগে আহ্বান জানানো হবে। আগামী ১০ই  এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এমজমিন
০৬ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে