সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৪০:১৮

দুর্ধর্ষ তুষারের টার্গেট একটাই, পুলিশের পিস্তল

দুর্ধর্ষ তুষারের টার্গেট একটাই, পুলিশের পিস্তল

সাখাওয়াত কাওসার : ১৫ বছর বয়স থেকে অস্ত্র চালানো শুরু করলেও পুলিশের পিস্তলের প্রতি বিশেষ লোভ ছিল রামপুরার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীম খান ওরফে তুষারের। অবশেষে মাত্র ছয় মাস আগে সেই শখ পূরণ করেছে সে। রামপুরা থানা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর কাছ থেকে এক লাখ টাকা দিয়ে ৭ পয়েন্ট ৬২ এমএম সেই পিস্তলটি কিনেছে তুষার।

কেবল এই অস্ত্রটি দিয়েই গত ছয় মাসে ৩০ রাউন্ড গুলি করেছে বলে গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করেছে তুষার। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার গভীর রাতে রাজধানীর রামপুরা টিভি গেটের পাশের একটি ভবন থেকে ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইকবাল হোছাইনের নেতৃত্বে একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থল থেকে তুষারের একটি অস্ত্র উদ্ধার করলেও রাতেই তাকে নিয়ে আরও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, রামপুরার শীর্ষসন্ত্রাসী কাইল্যা পলাশের ভাগ্নে তুষার। ছোটবেলায় মামাকে দেখেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হয় তুষার। রামপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই নিজে অস্ত্র কিনে তুষার। জড়িয়ে পড়ে অপরাধ কর্মকাণ্ডে। একে একে তার বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যা এবং চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে রাজধানীর খিলগাঁও ও রামপুরা থানায় মোট ১৯টি মামলা আছে।

২০০৬ সালে প্রতিপক্ষ দিলীপকে নিজ হাতে খুন করে সে। আড়াই বছর জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় জড়িয়ে পড়ে অপরাধ কর্মকাণ্ডে। গত এপ্রিলে তুষার রামপুরা মুক্তির গলিতে উদ্ধারকৃত পিস্তল দিয়ে টানা ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। গতকাল গ্রেফতারের সময় ঘটনাস্থলেই এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে তুষারের সাবলীল উত্তর, 'ভাই দিলীপ্যারে না মারলে সে আমারে মাইরা ফালাইতো।

এর লাইগ্যা তারে খুন করতে বাধ্য হইছি। এর বাইরে আমার আর কোনো উপায় আছিল না।' ডিবি সূত্র জানায়, মামা কাইল্যা পলাশ এবং ভাগ্নে তুষারের অধীনে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ জন ক্যাডার কাজ করে। আগে আলাদাভাবে কাজ করলেও বর্তমানে কারাবন্দী শীর্ষসন্ত্রাসী শাহাজাদার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে তুষার। মালয়েশিয়া থেকে আরেক সন্ত্রাসী স্বপনও নিয়মিত যোগাযোগ রাখে তুষারের সঙ্গে।

তবে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন রামপুরা থানা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি তপু। টেম্পো স্ট্যান্ড, বিভিন্ন মার্কেট এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা উঠায় এরা। একই সঙ্গে রামপুরা এবং এর আশপাশের এলাকার গার্মেন্টের ঝুটের পুরো নিয়ন্ত্রণ তুষারদের হাতে। তুষারের বাবার নাম লিয়াকত আলী খান। মা ডালিয়া আক্তার ডলি। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তুষার। তবে নানা বাড়িতে থাকার কারণে মামা কাইল্যা পলাশকেই ছোটবেলা থেকেই অনুসরণ করতে শুরু করে তুষার।

ডিবির জ্যেষ্ঠ এসি ইকবাল হোছাইন বলেন, মাঝেমাঝেই তুষার রামপুরা এবং এর আশপাশের এলাকায় ঢুকে নিজের অবস্থান জানান দিতে নিজেই ফাঁকা গুলি ছুড়ত। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে তপুকে খোঁজা হচ্ছে। উদ্ধারকৃত পুলিশের অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা এসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। পুলিশের কোনো সদস্যের এই ক্ষুদ্রাস্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। একই সঙ্গে তুষার এই অস্ত্রের গুলি কোথা থেকে সংগ্রহ করত তাও খতিয়ে দেখা হবে।-বিডিপ্রতিদিন
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে