কাফি কামাল : ব্যালটের রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। যদিও তা একতরফা। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে ভোট চেয়ে জনগণের দুয়ারে যাওয়া শুরু করেছে। অন্যদিকে, এখনো ভোটের মাঠে দেখা মেলেনি বিএনপির। দলটি কি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে- সে প্রশ্নও উচ্চারিত হচ্ছে নানা মহলে। কী ভাবছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এমনিতে কথা বলেন কম। ইদানীং বক্তৃতা-বিবৃতি আরো কমিয়ে দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি অন্তত দুটি অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচন নিয়ে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন খালেদা জিয়া। সাংবাদিক নেতারা দেখা করতে গেলে তিনি নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না বলেও নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেন তিনি।
সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী মনিরুল হক সাক্কু দেখা করতে গেলে নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সাক্কু যুদ্ধ করে জিতেছে। সুষ্ঠু ভোট হলে এবার সাক্কুর ভোটের ব্যবধান হতো ৫০ হাজার। মনিরুল হক সাক্কুর মতো যুদ্ধ জয়ের জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, এই বিজয়ে শুধু আনন্দিত হলে চলবে না, পরবর্তীর জন্য তৈরি হতে হবে। আগামী দিনে যে যুদ্ধ করবেন, তাতে দলকে প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের সেজন্য তৈরি হতে হবে। দেশকে ধ্বংস করার আগেই তাদের (আওয়ামী লীগ) বিদায় করার জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক জেলায় জেলায় যদি আমাদের সৈনিকরা এমনভাবে তৈরি হয়, যে যুদ্ধ সাক্কু জিতে এসেছে, তাহলে ইনশাআল্লাহ্? বাকি যুদ্ধেও আমরা বিজয়ী হতে পারবো। আমরা সফল হবো।
নির্বাচন প্রশ্নে খালেদা জিয়ার অবস্থান হয়তো সহসাই পরিষ্কার হওয়া যাবে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নিশ্চিতভাবেই আরো সময় নেবেন তিনি। তবে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে নির্বাচন প্রশ্নে এখনো দলটির নেতাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বই লক্ষ্য করা গেছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাবার পক্ষে দলীয় ফোরামে মুখর একজন নেতা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে ধারণা হচ্ছে- আগামী জাতীয় নির্বাচনেও সরকার গণতন্ত্রের স্বার্থে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না। বিএনপিকেই শেষ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে নির্বাচনের স্রোতে সাঁতার দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি এখন সংকটাপন্ন। বর্তমান সংসদ নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন রয়েছে। তারপরও বাংলাদেশে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলন সরকারের জন্য একটি বিশেষ অর্জন। অন্যদিকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। মামলা-মোকদ্দমায় দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাও বিপর্যস্ত। বহু নেতা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে দলের ঐক্য এবং সাংগঠনিক ভিত ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তাই ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সংসদীয় রাজনীতিতে টিকে থেকে সক্রিয় রাজনীতির সুযোগ তৈরি ও দলের নেতাকর্মীদের ধরে রাখা।
তবে এ পরিস্থিতিতেও নীতিনির্ধারক ফোরামের একজন সদস্য গ্যারান্টি দিয়ে বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। অন্য দুইজন বলেছেন, বিএনপি সহায়ক সরকারের অবস্থান থেকে সরবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আমরা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব না। আমরা অবশ্যই নির্বাচনে যাবো যদি একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন হয়। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। যদি আমরা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার কায়েম করতে না পারি তখন কি হবে সে সিদ্ধান্ত তখনই নেয়া হবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে যাবে না এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পরিবেশ ও ফলাফল বিএনপির আগের অবস্থানে ন্যূনতম প্রভাব ফেলেনি। কারণ কুমিল্লায় বিএনপি জিতেছে কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেসব অপকর্ম হয় সেটা ঠিকই হয়েছে। অপকর্মের মাত্রার কিছুটা হেরফের হয়েছে জনগণের সক্রিয় ভূমিকা পালন করায়।
তিনি বলেন, মানুষ বুঝে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারের ইশারার বাইরে কিছু করতে পারে না। তাই যেখানে মানুষের আস্থা নেই সেখানে বিএনপি আস্থা রাখবে কি করে। দুই নেতার সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমাদের দলের অবস্থান পরিষ্কার।
বিএনপি সে অবস্থান থেকে সরেনি। অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না। বিএনপি চেয়ারপারসন যে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছেন সেটা আদায় করে তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যাবো। সে জন্য আমাদের প্রস্তুতিও আছে। কিন্তু সরকার একেক সময় একেক রকম পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এমজমিন
০৭ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি