সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:৪৪:২২

সুমাইয়াকে কি আর পাওয়া যাবে না?

সুমাইয়াকে কি আর পাওয়া যাবে না?

নিউজ ডেস্ক : ২২ দিন ধরে মুনিয়া বেগমের চোখ শুকায় না। সারা দিন মেয়ের ছবি নিয়ে কাঁদেন।

তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে সুমাইয়া বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ, কাউকে দেখলেই সেই ছবিটি দেখিয়ে বলেন, ‘এই যে, এই নীল প্যান্টটাই পরা ছিল।

আর সাদা গেঞ্জি। চুলে সেদিন শ্যাম্পু করে দিয়েছিলাম। কোঁকড়া চুল বাতাসে উড়ছিল।’ তারপর অঝোরধারার কান্নায় থেমে যায় তাঁর কণ্ঠ।

২ এপ্রিল বিকেলে কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রামে বাসার সামনে থেকে জাকির হোসেন ও মুনিয়া বেগমের একমাত্র সন্তান সুমাইয়া নিখোঁজ হয়। পুলিশ, র‍্যাব, জনপ্রতিনিধির কাছে ধরনা দেওয়ার পর এখন তাঁরা যাচ্ছেন গণকের কাছে। এলাকার মানুষ মুঠোফোনে ছবি নিয়ে খুঁজছেন ফুটফুটে মেয়েটিকে।

সুমাইয়াকে প্রতিবেশীরা চিনত সবাই। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় গ্রামের এবড়োখেবড়ো পথ ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে চলছিলেন জাকির হোসেন। প্রতিবেশীদের কৌতূহলী প্রশ্নের জবাবে বলে যাচ্ছিলেন, ‘না ভাই। সুমাইয়াকে পাই নাই।’ কিছুক্ষণের জন্য আলোচনায় উঠে আসে নিখোঁজ সুমাইয়া।

ও কত দুষ্টু আর মিষ্টি ছিল, সেই সব গল্প করেন সবাই। জাকির কিছুক্ষণ ওদের কথা শোনেন। তারপর আবার মেয়েকে খুঁজতে শুরু করেন।

স্থানীয় এক স্টিল কারখানার কর্মী জাকির হোসেন বললেন, ঘটনার দিনই তাঁরা কামরাঙ্গীরচর থানায় জিডি করেন। থানার কোনো তোড়জোড় নেই। র‍্যাবের কাছে বলেছেন, কেউ গুরুত্ব দেয় না। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনকে বলেছেন, তিনিও কিছু করছেন না।

নিজেই এলাকায় মাইকিং করেছেন, পোস্টার সাঁটছেন। কয়েক দিন আগে তাঁদের বাসার পাশের একটি বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাসার সামনে থেকে সুমাইয়া কালো বোরকা পরা এক নারীর হাত ধরে স্বচ্ছন্দে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ফুটেজে নারীর মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে সুমাইয়ার বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা ওই নারীকে আগেও দেখেছেন বলে দাবি করেন। সুমাইয়ারা এখন যে বাসায় থাকে ওই নারী একসময় সেই বাসাতেই ভাড়া থাকতেন।

সামনের মুদির দোকান থেকে তিনি বাকিতে কেনাকাটা করতেন। সেখানে তাঁর নাম লেখা আছে অথৈ আক্তার বৃষ্টি। একটি মুঠোফোন নম্বরও আছে। সেই নম্বরটি এখন বন্ধ।

অথৈ আক্তার বৃষ্টি যে টিনের ছাউনির বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়িওয়ালা হাসনাহেনা  বলেন, ভাড়া নেওয়ার সময় তাঁরা বলেছিলেন হাজারীবাগে তাঁদের একটা কাপড়ের কারখানা আছে।

স্বামী-স্ত্রী প্রতিদিন ঝগড়া করতেন। শেষে বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে তুলে দেন। পরে বাসাটি সুমাইয়াদের ভাড়া দেওয়া হয়। এই বাসা ছেড়ে গেলেও বৃষ্টি এর আগেও দুএকবার সেখানে বেড়াতে এসেছেন।

সুমাইয়ার মা মুনিয়া বেগম বলেন, ঘটনার দিন বৃষ্টি এসে বাড়িওয়ালার খোঁজ করছিলেন। বাড়ির মালিক ছিলেন না। তিনি বৃষ্টিকে পরে আসতে বলেন।

কিন্তু বৃষ্টি সুমাইয়াদের ঘরের বাইরের বারান্দায় গিয়ে বসে অপেক্ষা করছিলেন। সুমাইয়ার সঙ্গে তিনি যে গল্প করছিলেন, সে কথা শুনতে পাচ্ছিলেন মুনিয়া। একপর্যায়ে মূল ফটক বন্ধের শব্দ পান। বাইরে বেরিয়ে দেখেন সুমাইয়া নেই।

সুমাইয়ার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করছেন কামরাঙ্গীরচর থানার উপপরিদর্শক রজিবুল। সুমাইয়ার ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও বৃষ্টির মুঠোফোন নম্বর সবই পুলিশের কাছে। পরিবারের অভিযোগ, ২২ দিন ধরে তিনি কেবল প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যাচ্ছেন ও তিনি বলেন চেষ্টা করছেন।

লালবাগ অঞ্চলের উপকমিশনার ইব্রাহীম খান বলেন, ভিডিও ফুটেজ আছে, মুঠোফোন নম্বর আছে, অবয়ব দেখে সন্দেহ করা হচ্ছে একজনকে—এসব খবর তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে র‍্যাবের এএসপি সোহরাব হোসেনও কিছু জানেন না বলে জানান। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেছেন, তিনি শুনেছেন। শিশুটির বাবা-মা একবারই এসেছেন।

কেরানীগঞ্জের বড়গ্রামে সেই বিকেলেও লোকের অভাব ছিল না। সুমাইয়াকে যখন বোরকা পরা নারী নিয়ে যাচ্ছেন, তখন সেখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন সুমাইয়াদের প্রতিবেশী অনেকেই।

তাঁদের একজন খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (র.) ভ্যারাইটি স্টোরের মালিক মো. শাহাদৎ বলছিলেন, ‘সুমাইয়াকে এই এলাকার সবাই চেনে। চোখের সামনে দিয়াই গেছে। বুঝতে পারি নাই। ও যদি ওই সময় একটু চিল্লাইত তাইলেই আমরা ধইরা ফেলাইতাম। এখন সবাই মোবাইলে ওই ফুটেজ নিয়া ঘুরতেছে।’
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম.জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে