নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসের চার বছর পরেও শ্রমিকরা বিচারের অপেক্ষা করছেন।
এই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ শুধুমাত্র তিনজন আছেন কারাগারে। বাকি সবাই জামিনে মুক্ত অথবা পলাতক আছেন।
অনেক অভিযুক্তই আদালতে গেছেন অভিযোগ গঠনের পুনর্বিবেচনার জন্য। আর শ্রম আদালতের মামলাগুলোর কোন ধরনের কার্যক্রমই শুরু হয়নি।
রানা প্লাজার সাবেক শ্রমিক, নিহতদের আত্মীয় স্বজন এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সাভারের সেই দুর্ঘটনাস্থলে এসেছিলেন।
সেখানে গিয়ে দেখা গেলো রানা প্লাজা যে জায়গাটিতে ছিলো সেই জায়গাটিতে অনেক আগে থেকেই পানি জমে পুকুরের মতো হয়ে গেছে। কচুরিপানায় ঢেকে যাওয়া সেই পুকুরে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। সকাল থেকেই ছিলো মুষল ধারায় বৃষ্টি। তার মাঝেই দাঁড়িয়ে চোখের অশ্রু ফেলছিলেন অনেকেই।
যারা এসেছিলেন তাদের সবার মুখেই ছিল ক্ষতিপূরণ আর এই ঘটনার বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ক্ষোভ।
নিউ ওয়েভ স্টাইলস-এ কাজ করতেন নিলুফার ইয়াসমিন। তিনি বলছেন, "এখন আমরা যেভাবে বেঁচে আছি তার চেয়ে মরে যাওয়াও ভাল ছিলো।"
ক্রাচে ভর দিয়ে এসেছেন মাহমুদ হাসান। তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, "অনুদান হিসেবে আমাদের নাম মাত্র ভিক্ষা দেয়া হয়েছে। আর এত লোক মারা গেলো তাতে দোষী যেসব আসামী ছিলো তার মধ্যে তিনজন এখন শুধু জেলে। আর সবাই বাইরে। আমরা কি কোনদিন বিচার পাবো?"
এই প্রশ্নটি বছর ঘুরে আবারো উঠেছে। বাংলাদেশে গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার বলেছেন, বিচারে বিলম্ব শ্রমিকদের মধ্যে হতাশার জন্ম দিচ্ছে।
"বিচার বিভাগ ইচ্ছে করলেই দ্রুত এর বিচার করতে পারতো। বিচার যদি হয়ে যায় তখন কারখানার মালিক শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং তারা ভাববে সেটা যদি তারা না করে তাহলে তাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাতে তারা আইনও মেনে চলবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে কারখানা চালাবে না," বলেন তিনি।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাস স্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সব মিলিয়ে রয়েছে ১৪টি মামলা। অবহেলা-জনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের মামলা, রাজউকের করা ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন এবং নিহত একজন পোশাক শ্রমিকের স্ত্রীর দায়ের করা খুনের মামলা।
হত্যা মামলায় ৪১ জন অভিযুক্তর ৩০ জন ইতোমধ্যেই জামিন পেয়েছেন। ভবন মালিক সোহেল রানাসহ তিনজন আছেন কারাগারে।
এসব মামলার দিকে নজর রাখছে বাংলাদেশে লিগাল এইড অ্যন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট। সংস্থাটির আইন শাখার উপপরিচালক মোঃ বরকত আলী বলছেন, এসব মামলার কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়েই রয়েছে।
তিনি বলেন, "হত্যা মামলাসহ যে মামলায় অভিযোগ গঠন হয়েছে সেগুলোর শুনানি এখনো শুরু হয়নি। বেশ কটি তারিখ ছিলো শুনানির কিন্তু সাক্ষীর অভাবে শুনানি শুরু হয়নি।"
তিনি আরো বলেন, "তিনটি মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে অভিযুক্তরা রিভিশনের জন্য আদালতে গেছেন।"
অন্যদিকে, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতা বা সরকারি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে ব্যর্থতাসহ বেশ কটি অভিযোগে শ্রম আদালতে মামলা রয়েছে ১১ টি। সেগুলোর এখনো পর্যন্ত অভিযোগ গঠনের কোনো শুনানিই হয়নি।
দুর্ঘটনার ১২ দিন পর তার লাশ পাওয়া গিয়েছিলো। চার বছর পর তিনি আবারও এসেছিলেন দুর্ঘটনাস্থলে।
মোঃ বরকত আলী বলেছেন, "আমরা আশা করেছিলাম যে এই ধরনের বিশেষ একটি ঘটনার মামলা হয়তো বিশেষ নজর পাবে বা বিশেষ গতিতে চলবে। দুর্ভাগ্য হলো সেটা হচ্ছে না। যেমন শ্রম আইনের ১১টি মামলার বেশির ভাগেরই অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়নি। অর্থাৎ মামলার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুই হয়নি।"
বিচারের অপেক্ষায় থাকা শ্রমিকদের অনেকেই পোশাক শিল্পে কাজ করতে এখনো ভয় পান তাই বেকার হয়েই রয়েছেন।
আহতদের অনেকেই বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন আঘাতের যন্ত্রণা। শ্রমিকেরা পুনর্বাসনের দাবিও তুলেছেন।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম.জে