শুক্রবার, ০৫ মে, ২০১৭, ১২:১৪:০৬

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থীরা এখনই টেনশনে

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থীরা এখনই টেনশনে

উৎপল রায় : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার আগেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। বর্তমান এমপিদের অনেকে আছেন শঙ্কায়। নিজেদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বর্তমান এমপিদের অনেকে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না।

এক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আসবে নতুন মুখ। তৃণমূলের পর্যালোচনা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য ও হাইকমান্ডের মূল্যায়নে যথার্থ হলেই কেবল দলীয় মনোনয়ন মিলবে। এমপি হলেই মনোনয়ন মিলবে না এমন বার্তা ইতিমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে হাইকমান্ডের তরফে।

এদিকে নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, এটি এখন থেকেই চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিশেষ সংস্থা, নানা পেশাজীবী ও নিজস্ব টিমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের সংসদীয় এলাকাগুলোতে খোঁজখবর নিচ্ছেন।

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, আওয়ামী লীগের যারা ‘গডফাদার’ চরিত্রের তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না। নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ও ক্লিন ইমেজসম্পন্ন ব্যক্তিদের। বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করা এবং পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে জয়লাভ করে যেসব এমপি, মন্ত্রী নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দল ও নিজেকে বিতর্কিত করেছেন, তাদের ব্যাপারে দলের শীর্ষ পর্যায়ে ইতিমধ্যে আলোচনা চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এতে করে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে ভর করেছে দুশ্চিন্তা। রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে নানা কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্যে অন্তত ৫০ থেকে ৭০ জন বাদ পড়তে পারেন। যদিও কতজন বাদ পড়বেন কিংবা বিতর্কিত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে এখনো তেমনভাবে জরিপ শুরু হয়নি বলে মানবজমিনকে জানান সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা।

এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, কোন্দল নিরসন ও নির্বাচনে ক্লিন ইমেজসম্পন্ন প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের এমপি ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ওই বৈঠক ধারাবাহিকভাবে চলবে বলে জানান দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। গত ২৫শে এপ্রিল ঢাকা ও তার আশেপাশের বেশক’টি সংসদীয় আসনের এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে আগামী নির্বাচনসহ সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আলোচনা হয়।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, কোনো কর্মকাণ্ডের ফলে কারো জনপ্রিয়তা যদি কমে যেতে থাকে, তাকে তার মূল্য তো দিতেই হবে। ফলে তার দুশ্চিন্তা থাকাটাই স্বাভাবিক। একজন বর্তমানে এমপি হিসেবে আছেন, এটা কোনো ব্যাপার নয়। তার বর্তমান সমর্থন কেমন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটাই দেখা হবে।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কোনো তালিকা হচ্ছে কিনা বা কতজন বর্তমান এমপি বাদ পড়তে পারেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এটি এখনো ওই পর্যায়ে চিহ্নিত করা শুরু হয়নি। এ বিষয়ে এখনো মূল্যায়নও শুরু হয়নি। তবে, এটি বলা যায়, একজন বর্তমানে এমপি হিসেবে আছেন আর তাকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিতেই হবে-এর প্রশ্নই উঠে না।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, আমাদের দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে ঘিরেই এখন আমাদের সবকিছু। সাংগঠনিক কার্যক্রম বলতে আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই দলের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলা যায়। আর আমাদের দলের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি আছে। এ সংস্কৃতির মাধ্যমেই সবকিছু চলে, এর মধ্য দিয়েই মনোনয়ন দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রার্থী যেহেতু দেশের বাইরে থেকে আনার সুযোগ নেই, তাই মূল কথা হলো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও দক্ষতা। এখন কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে বা হবে না-এ সংক্রান্ত যে কথাগুলো উঠছে সংগঠন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঠিক থাকলে তার মর্মার্থই পাওয়া যাবে না।

আওয়ামী লীগের বেশক’জন কেন্দ্রীয় নেতা আলাপকালে জানান, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে আগামী নির্বাচনের জন্য মাঠপর্যায়ে প্রার্থী বাছাই করার প্রক্রিয়াটি দেখভাল করছেন। কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, কে বাদ পড়বেন- এটিও যেমন দলের সভাপতি নির্ধারণ করবেন তেমনি চলমান সংসদের যেসব এমপির নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে আগামী নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব পড়তে পারে তাদের ব্যাপারেও দলীয় সভাপতিই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া। আর নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেয়াটাই বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা এবং চিন্তা। সেই ভাবনা থেকেই তিনি জরিপকাজ চালাচ্ছেন। এখন জরিপে তুলনামূলক বিচারে যারা যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী তাদেরকেই তিনি মনোনয়ন দেবেন।

আবদুর রহমান বলেন, বিদ্যমান সংসদে যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি নেতিবাচক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকেন এবং সে ধরনের খোঁজখবর তিনি (শেখ হাসিনা) পান যে, সেই প্রার্থী আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে দলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারেন, সেক্ষেত্রে তো দলীয় সভাপতি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেই পারেন।    
      
এদিকে আগামী ২০শে মে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত  হবে। ওই সভায় উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ পাচ্ছেন (ইতিমধ্যে অনেকে মৌখিকভাবে ও টেলিফোনে আমন্ত্রণ পেয়েছেন) আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের তৃণমূলের বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে ওই সভাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন  দলটির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতারা। আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের বেশক’জন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব এমপি ও নেতার নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন বা তৃণমূলে কোন্দল ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে-তাদের বিষয়টি ওই সভায় তুলে ধরবেন তারা।

বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের একটি জেলার একজন সভাপতি বলেন, আমাদের জেলার এমপিরা সাংগঠনিক কার্যক্রমের চাইতে তাদের নিজেদের পকেট ভারী করছেন। এমপিদের ওই গ্রুপটা দলীয় কর্মকাণ্ডের চাইতে টেন্ডারবাজি ও অন্য কাজে ব্যস্ত থেকে ত্যাগী ও দল অন্তপ্রাণ নেতা কর্মীদের চাইতে সুবিধাবাদী ও নতুনদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। যে কারণে আমরা সমন্বিতভাবে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারছি না।

তিনি বলেন, দলের সাংগঠনিকসহ সার্বিক বিষয়ে আমরা সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করছি। ওই বৈঠকে সবকিছু উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু বলেন, আগামী ২০শে মে নেত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ পেয়েছি। বৈঠকের এজেন্ডাও আমরা তৈরি করছি।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল বলেন, আগামী ২০ তারিখ দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমাদের বৈঠকের কথা রয়েছে। সেখানে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি, সংগঠনকে শক্তিশালী করাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে সুবিধাবাদী সে সবসময়ই সুবিধাবাদী। সে দলের নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিতে চাইবেই। তবে, দল যাতে কারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়-এ বিষয়টি আগামী বৈঠকে আমরা তুলে ধরবো।

আগামী ২০শে মে অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে দলটির একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচনে যাতে দলের কোথাও কোন কোন্দল, মতভেদ না থাকে সে ব্যাপারটিই সভায় প্রাধান্য পাবে বলে আমরা মনে করছি।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দেন, সকলে মিলে যেন তার পক্ষেই কাজ করেন-এই নির্দেশনাটাই ওই সভায় প্রধানত থাকতে পারে। এমজমিন
৪ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে