রবিবার, ০৭ মে, ২০১৭, ০১:১৬:৪৩

আমরা যেন তৃতীয় মহাযুদ্ধ দেখতে চলেছি

আমরা যেন তৃতীয় মহাযুদ্ধ দেখতে চলেছি

পার্থ প্রতিম মজুমদার : দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর আমরা যেন তৃতীয় মহাযুদ্ধ দেখতে চলেছি। ফ্রান্সের এবারের নির্বাচনটা এমনই। আমি ফ্রান্সে গত ৩৫ বছরে ৭টা নির্বাচন দেখেছি। এমন নির্বাচন আগে কখনো দেখিনি। আমার সন্তানরা, যাদের বয়স ২৩ ও ২৬ বছর, তারাও খুব উত্তেজিত। তরুণ প্রজন্মও এ নির্বাচন নিয়ে আগের তুলনায় আগ্রহী। কারণ ফ্রান্সের ইতিহাস-সংস্কৃতির সঙ্গে লড়াই আরম্ভ হয়েছে চরমপন্থি দলের।

মূলধারার প্রধান দুটি দল- সোশ্যালিস্ট এবং কনজারভেটিভ পার্টি এবারের মূল লড়াইয়ে নেই। জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হননি। তার দলও নির্বাচনে ভালো করতে পারেনি। এ নির্বাচনে যিনি চমক সৃষ্টি করেছেন, সে ইম্যানুয়েল ম্যাক্রনকে আমরা চিনি দুই বছর ধরে। তিনি ওঁলাদের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। ৩৯ বছর বয়স্ক ম্যাক্রন আধুনিকতার আলোয় আলোকিত।

ফ্রান্সের এবারের নির্বাচন নিয়ে সারা পৃথিবী চিন্তিত। ইসলামিক ফোবিয়ার ম্যাজিক কাঠি নিয়ে চরমপন্থি দল যদি ক্ষমতা দখল করে তা হবে ভয়ঙ্কর। শোনা যাচ্ছে এ নির্বাচনে রাশিয়া-আমেরিকা তাকে (ম্যারিন লা পেন) প্রচুর টাকা দিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরা আতঙ্কিত। তবে অতীতে ফ্রান্সের ইতিহাসে দেখা গেছে, সবসময় খারাপ কোনো পার্টির উত্থান হলে তার বিপরীতে যিনি প্রার্থী থাকেন সবাই তাকে সমর্থন দেয়।

এবারও সবগুলো পার্টি ম্যাক্রনকে সাপোর্ট দিয়েছে। কনজারভেটিভ ও সোশ্যালিস্ট পার্টি সরাসরিই সমর্থন দিয়েছে। চরমপন্থি দল যেন বিজয়ী হতে না পারে এ ব্যাপারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বার্তা দিয়েছেন। ফ্রান্সের জনগণের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, ম্যাক্রনকে সমর্থন দেয়ার জন্য। হিলারিও সতর্ক করে দিয়েছে ম্যাক্রন সমর্থকদের। প্রতিপক্ষ কারচুপি করে যেন ফল পাল্টে দিতে না পারে।

৩রা মে যে ডিবেট হয়ে গেছে তা অবশ্য আমাদের আশাবাদী করেছে। ওই ডিবেটে ম্যারিন লা পেনের ভরাডুবি হয়েছে। মানুষ অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে এ ডিবেট দেখেছে। ডিবেটে মনে হয় লা পেন আত্মহত্যা করেছে। তার যে কোনো পরিকল্পনা নেই তা স্পষ্ট হয়েছে। ইসলামিক ফোবিয়াকে হাতিয়ার করে সে জিততে চায়। সে ফ্রান্সকে পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চাচ্ছে। যে ফ্রান্স শিল্প, সাহিত্য আর বুদ্ধিজীবীদের দেশ হিসেবে পরিচিত। তবে আমরা এখনো আশাবাদী। আমরা আশাকরি রোববারের নির্বাচনে শুভবুদ্ধির মানুষরা সবাই ম্যাক্রনের পাশে দাঁড়াবেন।

ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন নাকি ম্যারিন লা পেন। কে হবেন ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? আজ ব্যালটে সেই রায় দেবেন ৫ কোটি ৭০ লাখ ভোটার। দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যখন চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফরাসিরা তখনই খবর এলো হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে ম্যাক্রন শিবির। হ্যাকাররা অনলাইনে ছেড়ে দিয়েছে ৯ জিবি ফাইল।

নেপথ্যে ফের ওই রাশিয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। হাজার হাজার ই-মেইল, নথিপত্র ও অন্যান্য দলিলাদি স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে ফাঁস করা হয়। প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার ঠিক আগ দিয়ে। ম্যাক্রনের এন মার্চ শিবির বলেছে, স্পষ্টত এটা নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা। ফরাসি নির্বাচন কমিশন, সকল মিডিয়াসহ দেশের নাগরিকদের প্রতি ফাঁস হওয়া তথ্য প্রচার না করার আহ্বান জানিয়েছে।

ম্যাক্রন যখন শেষ মুহূর্তের জরিপে এগিয়ে তখনই তথ্য ফাঁস: সর্বশেষ জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে কট্টর ডানপন্থি প্রার্থী ম্যারিন লা পেনের থেকে শীর্ষ অবস্থানে থাকা ম্যাক্রনের ব্যবধান আরও বেড়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত ৫ টি ভিন্ন জরিপ বলছে, চূড়ান্ত রাউন্ডের ভোটে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে বাজিমাত করবেন মধ্যপন্থি প্রার্থী ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন। পোলস্টাররা বলছে, সর্বশেষ বিতর্কের পর ম্যাক্রন ৩ পয়েন্ট বেশি এগিয়ে গেছেন। ওই বিতর্কে গুরত্বপূর্ণ নীতি নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর চড়াও হওয়া ও তাকে নিয়ে তামাশা করার কারণে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন লা পেন।

শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল প্রার্থীদের প্রচারণার শেষ সময়। তার আগ দিয়ে হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ায় এ নিয়ে প্রতিক্রিয়াও জানাতে পারছেন না ম্যাক্রন। কেননা, প্রচারণার সময়সীমা পেরিয়ে গেলে নিয়ম মোতাবেক প্রচারণাসুলভ কোনো বক্তব্য দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফাঁস হওয়া হাজার হাজার ই-মেইল ও নথিপত্রের মধ্যে কিছু বানোয়াট বলে বলা হচ্ছে।

সবমিলিয়ে ৯ গিগাবাইট তথ্য ফাঁস করা হয়। পরিচয় গোপন রেখে পোস্ট করা যায় এমন একটি ডকুমেন্ট শেয়ারিং সাইট প্যাস্টেবিনে এগুলো পোস্ট করেন ‘এমলিকস’ নামের এক ইউজার। এ হ্যাকিংয়ের নেপথে কে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও গত মাস থেকে ম্যাক্রন শিবিরের ওপর রাশিয়ান হ্যাকিং তৎপরতার গুঞ্জন ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ম্যাক্রনলিকস নামে ফাঁস হওয়া তথ্যগুলো ছড়িয়ে পড়ে।

ফরাসি দৈনিক লা মন্ডে জানায়, প্রথম দফায় নথিপত্রগুলো ছড়ানো হয় ৪ চ্যান ফোরামে। এই ফোরামে কট্টর ডানপন্থি মার্কিন গ্রুপগুলোর সমর্থন রয়েছে। আর ট্রাম্পপন্থি টুইটার অ্যাকাউন্টগুলোতে ইংরেজি ভাষায় তার প্রচার করা হয়। এরপর তা যায় উইকিলিকসে। তাদের ওয়েবসাইটে ফাঁস হওয়ার তথ্যের একটি টুইটার লিঙ্ক পোস্ট করা হয়। তবে, উইকিলিকস ইঙ্গিত দিয়েছে তারা তথ্যফাঁসের নেপথ্যে ছিল না। এন মার্চ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট রয়েছে। ই-মেইল, অ্যাকাউন্টিং নথি ও নানা চুক্তিপত্র। কয়েক সপ্তাহ আগে ম্যাক্রন শিবিরের কয়েকজন কর্মীর ব্যক্তিগত ও পেশাদার অ্যাকাউন্ট থেকে এগুলো হ্যাক করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘প্রচারণার চূড়ান্ত সময়ে এসে এই তৎপরতা স্পষ্ট গণতান্ত্রিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সামিল যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গিয়েছিল।’ পুরো নির্বাচনী প্রচারণাজুড়ে নিয়মিত এমন তৎপরতার টার্গেট হয়েছে বলে উল্লেখ করে এন মার্চ। ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশটির নিয়মের কথা বলে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। আজ স্থানীয় সময় রাত ৮ টায় ভোটকেন্দ্র বন্ধ হলেই মন্তব্য দিতে পারবেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ম্যাক্রন শিবির এর আগে তাদের প্রচারণা হ্যাকিংয়ে রাশিয়ান প্রচেষ্টার অভিযোগ তুলেছিল। ২৬শে এপ্রিল তারা জানায়, জানুয়ারি মাস থেকে ই-মেইল ক্রিডেনশিয়াল চুরির ব্যর্থ প্রচেষ্টার টার্গেট হয়েছিল তারা। ক্রেমলিন কোনো সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে। মার্চ মাসে লা পেনের মস্কো সফরে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, নির্বাচনে নাক গলানোর কোনো ইচ্ছা তার দেশের নেই। তবে, বিশ্লেষকদের অভিমত তাদের সাক্ষাৎ লা পেনের দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতি পুতিনের পরোক্ষ সমর্থনের ইঙ্গিত বহন করে।

প্রসঙ্গত, প্রথম রাউন্ড ভোটের পর ম্যাক্রন শিবির কিছু রাশিয়ান গণমাধ্যমকে তাদের প্রচারণা থেকে নিষিদ্ধ করে। আর গত মাসে জাপানি সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ড মাইক্রো বলেছিল, একটি হ্যাকিং গ্রুপ ম্যাক্রন ও তার প্রচারণা দলকে টার্গেট করছে। তারা রাশিয়ান গোয়েন্দা ইউনিটের অংশ বলে ধারণা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছিল, গত বছর মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি হ্যাকিংয়ের নেপথ্যে থাকা গ্রুপটিই এমন তৎপরতা চালাচ্ছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।  

গতকাল স্থানীয় সময় শনিবার সকালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেক্টোরাল অথরিটি (সিএনসিসিইপি), গণমাধ্যমের প্রতি ফাঁস হওয়া তথ্য প্রকাশে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। এবারের নির্বাচনের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে মিডিয়ার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় সিএনসিসিইপি।

প্রবাসীদের ভোটগ্রহণ শুরু: ফ্রান্সজুড়ে ভোট শুরু হওয়ার আগ দিয়ে বহির্বিশ্বে ফরাসি ভূখণ্ড ও বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। গতকাল প্যারিস সময় দুপুরে কানাডার উপকূলবর্তী সেইন্ট পিয়েরে অ্যান্ড মিকুয়েলনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এর ঘণ্টা পর ভোট দেয়া শুরু করেন লাতিন আমেরিকায় অবস্থিত ফরাসি গিয়ানার অধিবাসীরা। এছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ১৩ লাখ ফরাসি নাগরিক ভোট দেয়া শুরু করেছেন শনিবার।  

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ভোটারদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পেলেন দুই প্রার্থী: প্রচারণার শেষ সময়ে ফ্রান্সের দু’প্রান্তে বিভিন্ন চার্চে গিয়ে প্রচারণা চালান ম্যাক্রন ও লা পেন। তবে, ভোটারদের তরফে দুই প্রার্থী পেয়েছেন দু’রকম প্রতিক্রিয়া। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, নির্বাচন জয়ের ফেবারিট প্রার্থী, সাবেক ব্যাংকার ও অর্থমন্ত্রী ম্যাক্রন দক্ষিণ-পশ্চিমের রোডেজ শহরে পৌঁছুলে সমর্থকদের সঙ্গে করমর্দন করেন। সেই সঙ্গে সবার সঙ্গে সেলফি তোলেন স্বতন্ত্র এই প্রার্থী।   

ওদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টর ডানপন্থি ম্যারিন লা পেন উত্তর ফ্রান্সে ৮০০ বছরের পুরনো এক চার্চে পৌঁছুলে কয়েক ডজন প্রতিবাদকারী দুয়োধ্বনি দিতে থাকে। পরিস্থিতি দেখে লা পেনের দেহরক্ষীরা তাকে দ্রুত গাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। এ নিয়ে টুইটারে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ন্যাশনাল ফ্রন্ট প্রার্থী। ‘জনাব ম্যাক্রনের সমর্থকরা সব জায়গায় সহিংসতা দেখায়, এমনকি প্রতীকী ও পবিত্র একটি স্থানেও। কোনো মর্যাদা নেই।’

ভোটগ্রহণ ও ফল আশার প্রত্যাশিত সময়: ফ্রান্সের বেশির ভাগ স্থানে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। প্যারিস, লিঁও ও মার্সেইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে ভোটকেন্দ্র খোলা থাকবে রাত ৮টা পর্যন্ত। ফরাসি টিভি চ্যানেলগুলো রাত ৮টা (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) নাগাদ বুথফেরত জরিপ প্রকাশ করবে। মিডিয়া ব্ল্যাকআউটের কারণে রাত ৮টার আগে কোনো মিডিয়ার এক্সিট পোল প্রকাশের অনুমতি নেই। স্থানীয় সময় রাত ১০টা নাগাদ বেশির ভাগ এলাকা থেকে ফল চলে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই সরকারি ওয়েবসাইটে আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ করা হবে।

কড়া নিরাপত্তা প্রস্তুতি: ২০১৫ সালের নভেম্বর ১৩০ জনের প্রাণহানি হওয়া ভয়াবহ প্যারিস হামলার পর এখন পর্যন্ত দেশটিতে জরুরি অবস্থা বলবৎ রয়েছে। এছাড়া, এ বছর ২০শে এপ্রিল প্যারিসের সঁজ এলিজিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এই পরিস্থিতিতে ভোটের জন্য নিরাপত্তা জোরদার করেছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ।

ক্ষমতাবলয় পাল্টে দেয়া নির্বাচনে কে হাসবেন শেষ হাসি?: এবারের নির্বাচনে ওলট-পালট হয়ে গেছে ফ্রান্সের রাজনীতি। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দেশটিতে ক্ষমতার শিখরে থেকেছে মূলধারার দু’টি দল। সোসালিস্ট ও কনজারভেটিভ। কিন্তু এ দফায় নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্বে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন দলদু’টির প্রার্থীরা। ম্যাক্রন-লা পেন ভোটের লড়াইকে শুধু ফ্রান্সের জন্যই নয়, গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশ ও ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ দুই প্রার্থীর স্বপ্ন একেবারে বিপরীত।

ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন বলেন, তিনি বামও নন, ডানও নন। তিনি তার এন মার্চ আন্দোলন চালু করেছেন বছর খানেক। ক্যারিশম্যাটিক এই প্রার্থী উদারমনা, বিশ্বায়ন-মনা ও আশাবাদী। অন্যদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী লা পেন কট্টর ডানপন্থি, সংরক্ষণবাদী এবং বিশ্বায়ন ও অভিবাসন বিরোধী। তিনি ফ্রান্সের সীমান্ত বন্ধ করে দিতে চান। ছাড়তে চান ইউরোজোন।  

আপাতদৃষ্টে ম্যাক্রনের পালেই জোয়ার বেশি। একাধিক জরিপ থেকে স্পষ্ট যে, তিনিই ফেবারিট প্রার্থী। তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে তার প্রথম অগ্রাধিকার হবে দেশে যেন ভারসাম্য বজায় থাকে তা নিশ্চিত করা। ওদিকে, বুধবারের বিতর্কে আগ্রাসী ছিলেন স্বীকার করে লা পেন দাবি করেছেন, ‘তার কথাগুলো ছিল সামাজিক সহিংসতার প্রতিধ্বনি যা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে... আর আসল আক্রমনাত্মক হলো মি. ম্যাক্রনের পরিকল্পনা।’

ইউরোপসহ সারা বিশ্ব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, ‘ইইউকে আরও দ্রুত ও আরও বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। আর সেই প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সে রোববারের নির্বাচন অসামান্য গুরুত্ব বহন করে।’
ইতিমধ্যে দুই প্রার্থী, তাদের পরিকল্পিত বিজয় উদযাপনের ভেন্যুর ঘোষণা দিয়েছেন।

ম্যাক্রন বেছে নিয়েছেন মধ্য প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামের সামনের উন্মুক্ত স্থান। আর লা পেন ঘোষণা দিয়েছেন প্যারিসের পূর্ব প্রান্তঘেঁষা হোটেল শ্যালে দু লাক-এর কথা যা একসময় ছিল সম্রাট নেপোলিয়ানের (তৃতীয়) শিকারঘর। বিজয় উদযাপনের ঢল শেষমেশ কোনদিকে যাবে তা জানা যাবে অচিরেই। তবে, বেশির ভাগ ফরাসির চাওয়া সেটা প্যারিসের প্রাণকেন্দ্রমুখীই হোক। জরিপগুলো তেমনটাই বলছে।  -এমজমিন

৬ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে